বাচ্চা ভয়ংকর কাচ্চা ভয়ংকর
ইদানীংকালের বাচ্চা কাচ্চারা আক্ষরিক অর্থেই ভয়ংকর! এদের বুদ্ধির তারিফ না করে পারা যায় না, আর দুষ্টামীর বহর দেখলে রীতিমতন আতংকে থাকতে হয়!
এবার দেশে গিয়ে দেখি, তিনবছর আগে যাদের কোলে-পিঠে দেখেছিলাম, তারা সবাই এখন রেলগাড়ির মতন দৌড়াচ্ছে।
অর্ণব, আমার খালাতো ভাই। বয়স সম্ভবত পাঁচ। ওর সবচে' প্রিয় খেলা হলো, সোফার কুশন মেঝেতে ফেলে অনেক দূর থেকে দৌড়ে এসে 'ই-য়া-া-া-হু-উ-উ“ বলে সেটায় লাফিয়ে পড়ে স্কিড করে সামনে এগিয়ে যাওয়া। মোটামুটি শিউরে উঠবার মতন ব্যাপার! যেই মুহূর্তে ও লাফটা দেয়, আমি সাথে সাথে চোখ বুজে ফেলি! এই বুঝি কুশন মিস করে একেবারে ফ্লোরে গিয়ে পড়লো! নাহ, মজা হলো এই যে কিছুতেই সেটা হয় না। একবার সাহস করে চোখ খুলেছিলাম, দেখি স্কিড করে এগুবার সময় ও গরিলার মতন বুকে থাবা দিতে দিতে টারজানের মতন হুংকার দিতে থাকে!
মাথা নষ্ট কারবার!
ওর খেলার সাথী আমার মামাতো ভাই রোহান। বয়েস চার। সারাদিন ধরে কার্টুন চ্যানেল দেখবে। পাপাই দেখতে দেখতে মুখস্খ হয়ে গেছে, তবু তার দেখা চাইই চাই। কখনো আমরা একটু খবর দেখতে চাইলেই পাকা কথা শুরু হয়ে যায়, “ধুরো, সারাদিন খালি খবর আর খবর, তোমাদের জ্বালায় একটু কার্টুনও দেখতে পারি না।''
মাঝে মাঝেই দেখি গম্ভির মুখে বসে বসে কি যেন ভাবে। জিজ্ঞেস করলেই অবিকল বুড়ো মানুষদের মতো করে বলে, “কিচ্ছু ভাল্লাগে না!''
মামাতো বোন আনিকা। সাড়ে তিন বছর বয়স, মারাত্মক সুইট। ওর বড় ফুপি, মানে আমার মায়ের খুব ভক্ত। সারাক্ষণ আম্মুর গায়ে গায়ে লেগে থাকবে, ঘর ঝাড়ু দিবে, চাল বাছবে। ওর মা-কে সারাক্ষণই ঝাড়ির উপর রাখে, তুমি পঁচা, তুমি ভালো না, ফুপ্পি ভালো।
একবার ওর আম্মু ওকে কেন যেন ভীষন বকা দিলো, ও সাথে সাথে কেঁদে কেটে বাসার সবাইকে ডেকে এনে ফরমান দিলো, “ আমি আজ থেকে আমার আম্মুর মেয়ে না, আমি বড় ফুপ্পির মেয়ে!''
আমি এক কথায় মুগ্ধ!
আমার আরেক খালাতো ভাই- ফারহান। বয়স সাড়ে তিন বা চার। এই ভাইজানের বন্ধুবান্ধবরা বিশেষ সুবিধার না। এবং এ কারণেই ওর সবচে প্রিয় শব্দ হলো “গু''!
একবার বাসায় একজন বয়স্ক গেস্ট এলো। তিনি আদর করে ডাকলেন, ফারহান আসো কোলে আসো। ফারহান খানিক্ষণ চোখ গোল করে তাকিয়ে থেকে বললো, আসমু না, তোর পুটকিতে গু!
হা হা হা!
এমনিতে কিন্তু চালাক আছে। ওকে নিয়ে দোকানে গেছে ওর খালা। ওর হয়তো চকলেট খেতে ইচ্ছে করলো, কিন্তু কখনো নিজের জন্যে চাইবে না। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলবে। কথোপকথন মোটামুটি এরকম-
-আন্টি, রোহান কি চকলেট খায়?
আন্টি বুঝে ফেলেন মতলব কি। তাই বলে, না, খায় না।
- তাইলে, আনিকা খায়?
-- নাতো, আনিকাও খায় না।
-তাইলে অর্ণব?
-- উঁহু, অর্ণবও চকলেট খায় না।
এ পর্যায়ে আর থাকতে না পেরে ও বলে কি, আইচ্ছা, তাইলে আমি খাই, আমারেই কিইন্না দাও!
দেশে গিয়ে এবার এদের কান্ড কীর্তি দেখতে দেখতেই আমার অনেক সময় চলে গেছে। আমাদের ছোটবেলায় আমরা এত দুষ্টু ছিলাম? বা এত বুদ্ধি ছিলো আমাদের? মনে হয় না!
ও আচ্ছা, এবার ফারহানের সাথে আমার প্রথম দেখার গল্পতো বলাই হয় নি।
প্রায় তিন বছর পরে দেখা হবে খালার সাথে, তাই দুপুরে খাবার দাওয়াত। কিন্তু আমার একটু দেরি হয়ে গেলো, সবাই না খেয়ে বসে রইলো আমার জন্যে।
আমি গিয়ে সোজা বাসায় ঢুকলাম, আসার আগে সম্ভবত আমার কথাই বলছিলো সবাই। গিয়ে ফারহানকে দেখেই আদর করে বললাম, ফা-র-হা-ন, কেমন আছো?
এতক্ষণ সম্ভবত খিদে চেপে ছিলো, এক সেকেন্ড চুপ থেকে রাগী গলায় বললো, ঐ আইছে, হালার পুতে এতক্ষণে আইছে!
হায়, ধরণী দ্বিধা হবারও টাইম পেলো না! :-০
-----------------------
- নামকরণ: মুহম্মদ জাফর ইকবালের একটি বইয়ের নাম থেকে নেয়া।
ছবি: আনিকা ও রোহান। বাকিদের ছবি খুঁজে পাচ্ছি না। পেলেই দিবো।
এবার দেশে গিয়ে দেখি, তিনবছর আগে যাদের কোলে-পিঠে দেখেছিলাম, তারা সবাই এখন রেলগাড়ির মতন দৌড়াচ্ছে।
অর্ণব, আমার খালাতো ভাই। বয়স সম্ভবত পাঁচ। ওর সবচে' প্রিয় খেলা হলো, সোফার কুশন মেঝেতে ফেলে অনেক দূর থেকে দৌড়ে এসে 'ই-য়া-া-া-হু-উ-উ“ বলে সেটায় লাফিয়ে পড়ে স্কিড করে সামনে এগিয়ে যাওয়া। মোটামুটি শিউরে উঠবার মতন ব্যাপার! যেই মুহূর্তে ও লাফটা দেয়, আমি সাথে সাথে চোখ বুজে ফেলি! এই বুঝি কুশন মিস করে একেবারে ফ্লোরে গিয়ে পড়লো! নাহ, মজা হলো এই যে কিছুতেই সেটা হয় না। একবার সাহস করে চোখ খুলেছিলাম, দেখি স্কিড করে এগুবার সময় ও গরিলার মতন বুকে থাবা দিতে দিতে টারজানের মতন হুংকার দিতে থাকে!
মাথা নষ্ট কারবার!
ওর খেলার সাথী আমার মামাতো ভাই রোহান। বয়েস চার। সারাদিন ধরে কার্টুন চ্যানেল দেখবে। পাপাই দেখতে দেখতে মুখস্খ হয়ে গেছে, তবু তার দেখা চাইই চাই। কখনো আমরা একটু খবর দেখতে চাইলেই পাকা কথা শুরু হয়ে যায়, “ধুরো, সারাদিন খালি খবর আর খবর, তোমাদের জ্বালায় একটু কার্টুনও দেখতে পারি না।''
মাঝে মাঝেই দেখি গম্ভির মুখে বসে বসে কি যেন ভাবে। জিজ্ঞেস করলেই অবিকল বুড়ো মানুষদের মতো করে বলে, “কিচ্ছু ভাল্লাগে না!''
মামাতো বোন আনিকা। সাড়ে তিন বছর বয়স, মারাত্মক সুইট। ওর বড় ফুপি, মানে আমার মায়ের খুব ভক্ত। সারাক্ষণ আম্মুর গায়ে গায়ে লেগে থাকবে, ঘর ঝাড়ু দিবে, চাল বাছবে। ওর মা-কে সারাক্ষণই ঝাড়ির উপর রাখে, তুমি পঁচা, তুমি ভালো না, ফুপ্পি ভালো।
একবার ওর আম্মু ওকে কেন যেন ভীষন বকা দিলো, ও সাথে সাথে কেঁদে কেটে বাসার সবাইকে ডেকে এনে ফরমান দিলো, “ আমি আজ থেকে আমার আম্মুর মেয়ে না, আমি বড় ফুপ্পির মেয়ে!''
আমি এক কথায় মুগ্ধ!
আমার আরেক খালাতো ভাই- ফারহান। বয়স সাড়ে তিন বা চার। এই ভাইজানের বন্ধুবান্ধবরা বিশেষ সুবিধার না। এবং এ কারণেই ওর সবচে প্রিয় শব্দ হলো “গু''!
একবার বাসায় একজন বয়স্ক গেস্ট এলো। তিনি আদর করে ডাকলেন, ফারহান আসো কোলে আসো। ফারহান খানিক্ষণ চোখ গোল করে তাকিয়ে থেকে বললো, আসমু না, তোর পুটকিতে গু!
হা হা হা!
এমনিতে কিন্তু চালাক আছে। ওকে নিয়ে দোকানে গেছে ওর খালা। ওর হয়তো চকলেট খেতে ইচ্ছে করলো, কিন্তু কখনো নিজের জন্যে চাইবে না। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলবে। কথোপকথন মোটামুটি এরকম-
-আন্টি, রোহান কি চকলেট খায়?
আন্টি বুঝে ফেলেন মতলব কি। তাই বলে, না, খায় না।
- তাইলে, আনিকা খায়?
-- নাতো, আনিকাও খায় না।
-তাইলে অর্ণব?
-- উঁহু, অর্ণবও চকলেট খায় না।
এ পর্যায়ে আর থাকতে না পেরে ও বলে কি, আইচ্ছা, তাইলে আমি খাই, আমারেই কিইন্না দাও!
দেশে গিয়ে এবার এদের কান্ড কীর্তি দেখতে দেখতেই আমার অনেক সময় চলে গেছে। আমাদের ছোটবেলায় আমরা এত দুষ্টু ছিলাম? বা এত বুদ্ধি ছিলো আমাদের? মনে হয় না!
ও আচ্ছা, এবার ফারহানের সাথে আমার প্রথম দেখার গল্পতো বলাই হয় নি।
প্রায় তিন বছর পরে দেখা হবে খালার সাথে, তাই দুপুরে খাবার দাওয়াত। কিন্তু আমার একটু দেরি হয়ে গেলো, সবাই না খেয়ে বসে রইলো আমার জন্যে।
আমি গিয়ে সোজা বাসায় ঢুকলাম, আসার আগে সম্ভবত আমার কথাই বলছিলো সবাই। গিয়ে ফারহানকে দেখেই আদর করে বললাম, ফা-র-হা-ন, কেমন আছো?
এতক্ষণ সম্ভবত খিদে চেপে ছিলো, এক সেকেন্ড চুপ থেকে রাগী গলায় বললো, ঐ আইছে, হালার পুতে এতক্ষণে আইছে!
হায়, ধরণী দ্বিধা হবারও টাইম পেলো না! :-০
-----------------------
- নামকরণ: মুহম্মদ জাফর ইকবালের একটি বইয়ের নাম থেকে নেয়া।
ছবি: আনিকা ও রোহান। বাকিদের ছবি খুঁজে পাচ্ছি না। পেলেই দিবো।