সমলোচনার ভাষা কীরকম হবে?
সমালোচনা-টা বাংলা সাহিত্যের একটা হৃষ্টপুষ্ট শাখা হয়ে উঠতে পারলো না, এই নিয়ে আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ বেজায় দু:খ করেছেন নানা জায়গায়। আমিও ভেবে চিন্তে দেখলাম, কান কথায় শুনেছি- শনিবারের চিঠি বলে একটা ব্যাপার ছিলো বহু আগে, যেটায় নাকি গায়ে বিছুটি লাগানো সমালোচনা হোত। কিন্তু ইদানীংকালে আমরা সেরকম আর দেখি কই!
এখনকার সমালোচনাগুলান তেমন আকর্ষক হয় না। ব্লগের কথা অবশ্য আলাদা। এইখানে সমালোচনার পারদ মরুভুমির টেম্পারেচারের মতন ওঠানামা করে। কিন্তু প্রচলিত সাহিত্যের সমালোচনা গুলা হয় প্রশংসায় পঞ্চমুখ, নয়ত রেখেঢেকে নিরাপদ বেষ্টনীর এপাশ থেকে পাঁচ কথা শুনিয়ে দেয়া।
সত্যজিত রায়ের “বিষয়:চলচ্চিত্র'' পড়ছিলাম। নানারকম খুঁটিনাটি নিয়া দারুন সব কথাবার্তা। “চারুলতা' প্রসঙ্গে' নামের লেখাটা পড়ার সময় মজা পেয়ে গেলাম। রুদ্র নামক কোন একজন সমালোচককে প্রায় ধুয়ে মুছে ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। এই লেখাটাকে অবশ্য সরাসারি সমালোচনা বলা যায় না, তবে টেকনিক্যালি এটা সমালোচনামূলকই। মানে সমালোচকের সমালোচনা আর কি!
রুদ্র মশাই কি লিখেছিলেন, সেইটা জানার বিস্তর আগ্রহ হচ্ছে। আর কোথাও সত্যজিৎএর এইরকম আক্রমনাত্মক রূপ দেখেছি বলে মনে পড়ে না। বিশেষ করে দুইটা জায়গায়। একখানে বলেছেন, “ রুদ্র মশাই সাহিত্য বোঝেন কিনা জানি না; সিনেমা তিনি একেবারেই বোঝেন না। শুধু বোঝেন না নয়; বোঝালেও বোঝেন না। যাকে বলে একেবারে বিয়ন্ড রিডেম্পশন।''
অথবা ঐ জায়গাটা- যেখানে বলেছেন- “মুশকিল হয়েছে কি, সিনেমাটা একেবারে বারোয়ারি শিল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে। . . . . . সিনেমার ব্যাপারে দেখি, যাঁরা 'সংগম' দেখছেন, তাঁরাই 'লা দোলচে ভিতা'তেও উঁকি দিচ্ছেন। “
জব্বর আরাম পেয়েছি পড়ে। বড় সাহিত্যিক বা সমালোচকেরা ব্যক্তিগত আক্রমন না করে নীরিহ সমালোচনা করে- এমন কথা বলে কোন বোকা!