Posts

Showing posts from 2019

জন্মদিনের সকালে -

‘জীবন থেকে জটিলতা কমাই’- এটাই ছিল আমার চা, সিগারেট অথবা মদ্যপান থেকে দূরে থাকবার প্রধান অনুপ্রেরণা। কাছের বন্ধুরা মজা করে বলে এসেছে, ‘গরম চা-এর প্রীতি নেই, এ আবার কেমন লেখক?’   চা-কে ভালবাসতে পারিনি বলেই আজও হয়তো ঠিকঠাক লেখক হয়ে ওঠা হলো না আমার।   কিন্তু ইদানীং নতুন এক প্রেম এসেছে জীবনে, বেশি বয়সের প্রেমের মতন পরিণত সেটা।   রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে ইলেকট্রিক কেটলে পানি চড়িয়ে দিই। রান্না ঘরের জানালা দিয়ে কখনো রোদের টুকরো আসে, কখনো কেবলই ধূসরতা। সেদিক থেকে চোখ ফিরিয়ে হাত বাড়াই বাহারি দেখতে একটা কৌটোর দিকে। তার ভেতর থেকে চামচে করে উঠে এসে সেটা বসে থাকে চুপচাপ আমার মাঝারি আকৃতির মাগ-এ। খানিক পরে গরম পানির সাথে মিশে গিয়ে হয়ে যায় আমার ইদানীংকালের সবচেয়ে প্রিয় পানীয়- ব্ল্যাক কফি।   আরেকটা অদ্ভুত ব্যাপার, কোন একটা সকাল যায় না এখন, যেদিন ব্ল্যাক কফি বানাতে গিয়ে মার্কেজের সেই বুড়ো কর্নেলকে আমার মনে পড়ে না, একটা চিঠির অপেক্ষায় যার জীবন কেটে যাচ্ছিলো। কফির কাপে চামচ নাড়তে নাড়তে আমি সেই অপেক্ষারত মুখটাকে দেখি রোজ। একদিনও তার ব্যতিক্রম হয় না। কফির কাপ হাতে পাশাপাশি আমরা যেন এক সাথে বুড়ো হয়

আমার প্রথম বই: আখতারুজ্জামান ইলিয়াস

Image
বাংলা সাহিত্যে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের জায়গা আমার কাছে এক নম্বর। তাঁর পরে কুড়ি পর্যন্ত আর কেউ নেই, বাকি সবার নম্বর শুরু একুশ থেকে।   লেখকের অগ্রন্থিত লেখার সংকলনে ‘আমার প্রথম বই’ নামের এই লেখাটি প্রথম পড়ি। এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ব্যক্তিগত রচনা শিরোনামের অংশটিতে।   এখানে তিনি লিখেছেন তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই ‘অন্য ঘরে অন্য স্বর’ নিয়ে। বইটির গল্পগুলো লেখাকালীন ভাবনার কথা খানিকটা এসেছে, তবে বেশি এসেছে সেটির বই হয়ে প্রকাশকালীন কর্মযজ্ঞের ঘটনাগুলো।   ইলিয়াসের গল্পের ঝিম ধরানো বর্ণনা-ভঙ্গি তাঁর অন্য গদ্যগুলোয় সাধারণত থাকে না, এখানেও তাই হয়েছে। তবে বাড়তি পাওনা হিসেবে এ লেখাটায় চলে এসেছে একটা আমুদে টোন।   অনেকটা মজলিশি ভঙ্গিতে তিনি বলে গেছেন বই প্রকাশের জন্যে প্রকাশকদের দরজায় দরজায় ঘোরার কথা, তাঁদের প্রত্যাখ্যানের কথা। তারপরে যখন প্রকাশক পেলেন, কেমন করে তাঁর সব বন্ধুরা ঝাঁপিয়ে পড়লো কম্পোজ থেকে প্রুফ দেখার লম্বা আয়োজনে। এই একটি লেখায়ই আমরা জেনে যাই, লেখকের অত্যাশ্চর্য বন্ধুতালিকার কথা, যেখানে ছিলেন কায়েস আহমেদ, শওকত আলীর মত লেখক, আবার একই গুরুত্ব নিয়ে ছিলেন পুরান ঢাকার রুটিওয়ালা কিংব

শাম্মী

২০০৪ সালের কোন এক বিকেল। হঠাৎ সিদ্ধান্তে একটা জরুরি কাজে আমাকে যেতে হবে দিল্লী। ‘বহু দূর’- অর্থে দিল্লী না, সত্যি সত্যি নয়া দিল্লী। দিন সাতেকের কাজ। এই প্রথম দেশের বাইরে যাওয়া হচ্ছে আমার। বন্ধুদের সবাই প্রায় পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত, একেবারে একা যেতে হবে এই নিয়ে একটু ভাবনায় ছিলাম। শাম্মী-কে জিজ্ঞেস করলাম, যাবি নাকি আমার সাথে? শাম্মী খুব বেশি সময় নিলো না, কয়েক মুহুর্ত চিন্তা করে বললো, যাবে। কিন্তু ওর ভিসা করানো নেই, পাসপোর্টও মাইমানসিং-এ, আর আমার যাবার পরিকল্পনা আগামীকাল। আমি বললাম, নিয়ে আয় পাসপোর্ট।   শাম্মী দৌড়ালো মাইমানসিং। পরদিন সকালে সেই পাসপোর্ট নিয়ে সোজা ইন্ডিয়ান এমব্যাসিতে। একবারে ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে গেছে। আমি বলেছি, ভিসা পেলে সোজা বাস স্টপে চলে আসবি, আর না পেলে হলে চলে যাবি।     দুপুর পর্যন্ত ভিসা-র কোন খবর নেই। আমি ঢাকা-কোলকাতা বাসে দুইজনের জন্যে দু’টা টিকেট কেটে নিয়ে বসে আছি। এর মাঝে ওর মোবাইলের ব্যাটারি গেছে মরে। খোঁজ নেয়ার উপায়ও বন্ধ। একটু পর পর ঘড়ি দেখছি, সময় বেশি বাকি নেই। বাস ছাড়ি ছাড়ি করছে।   শেষ মুহুর্তে পড়ি মরি করে শাম্মী দৌড়ে ঢুকলো বাসে, মুখে সেই চিরপরিচিত সব

অক্ষয় মালবেরিঃ মণীন্দ্র গুপ্ত

Image
এই বইটির পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখবার ক্ষমতা আমার নেই।  আমি দীন হীন এক শব্দ কাঙাল, নিজের সমস্ত অপারগতা হাতের আঙুলে জড়িয়ে আমি এই বইটি পাশে নিয়ে বসে চুপ করে নিজের বোধিলাভ প্রত্যক্ষ করতে পারি শুধু, আর কিছু নয়।  এর চেয়ে সুন্দর কিছু আজ অব্দি খুব বেশি পড়িনি, এই জীবনে এর চেয়ে স্বপ্নিল কিছু আর বেশি পড়তে পাবো না, এটাও জানি।  নিজের সীমাহীন খামতি আর মুগ্ধতা এইখানে শুধু লিপিবদ্ধ করে রাখলাম।

শিবব্রত বর্মনের গল্প সংকলন- বানিয়ালুলু

Image
এখন   পর্যন্ত   এ   বছরে   আমার   পড়া   সবচেয়ে   চমৎকার   বাংলা   বই   এর   নাম - ‘ বানিয়ালুলু ’ ।   ইচ্ছে   হচ্ছে   লোকেদের   ডেকে   এনে   ধরে   ধরে   পড়াই   বইটা।   আমাদের   যাদের   বাংলা   কল্পবিজ্ঞানের   হাতেখড়ি   হয়েছে  ‘ কপোট্রনিক   সুখ   দুঃখ ’  বা  ‘ তোমাদের   জন্যে   ভালবাসা ’  বইগুলোর   মাধ্যমে ,  তাঁদের   কাছে   বাংলা   কল্পবিজ্ঞানের   জগতে   বিজ্ঞানের   চেয়েও   মানবিকতার   পাল্লার   ভার   বেশি।   আমি   নিশ্চিত   যে   আমার   সমবয়সী   বাংলা   পাঠকদের   সবচেয়ে   প্রিয়   গল্পের   নামের   তালিকায়   থাকবে  ‘ টুকুনজিল ’,  কিংবা  ‘ টুকি   ও   ঝাঁ   এর   প্রায়   দুঃসাহসিক   অভিযান ’  অথবা  ’ নিউটনের   ভুল   সুত্র ’  গল্পগুলো।   বিষয়   এবং   গল্প   বলার   ভঙ্গিতে   সুস্পষ্ট   পার্থক্য   রয়েছে ,  তবুও   বলতে   দ্বিধা   নেই , ’ বানিয়ালুলু ’  বইটি   পড়তে   গিয়ে   বহুদিন   বাদে   সেই   বইগুলো   পড়ার   আমেজ   এবং   আনন্দ   ফিরে   পেলাম।   বইয়ের   প্রথম   গল্পের   নামই  ‘ বানিয়ালুলু ’ ।   এই   গল্পটা   পড়ে   খানিকটা আশাভঙ্গ   হয়।   এটা   যতটা   না   কল্পবিজ্ঞান ,  তারচেয়ে   বেশ

মুহম্মদ জাফর ইকবাল-এর অবিশ্বাস্য সুন্দর পৃথিবী

Image
এই বুড়ো বয়সে এসে বই পড়তে গিয়ে চশমার কাচ ঝাপসা হয়ে আসা খুবই বিব্রতকর। এদিক ওদিক তাকিয়ে মুখে একটা গোবেচারা হাসি ঝুলিয়ে চশমা পরিষ্কার করে আবার মুখ ডুবিয়ে দিয়েছি পড়ায়।  পড়তে পড়তে অনেকবার গা দুলিয়ে হেসেছিও। গা দোলাবার কারণ, লাইব্রেরিতে বসে পড়ছি তাই শব্দ করা যাবে না, শব্দ আটকানোর অসম্ভব পরিশ্রমের বহিঃপ্রকাশ এই গা দোলানো।  মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে এসে সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে এরকম কৌতুক করে লিখতে পারা মানুষ খুব বেশি নেই পৃথিবীতে। নিজেকে হত্যা করতে উদ্যত মানুষটাকে যেন গণপিটুনিতে মেরে ফেলা না হয়, স্ট্রেচারে শুয়ে হাসপাতালে যেতে যেতে সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করার মানুষের সংখ্যা আরও কম। সুস্থ হয়ে জেলে গিয়ে সেই লোককে দেখে আসবার সাহস দেখে শিউরে উঠেছি।  সবচেয়ে হাসি পেয়েছে লেখককে দেখতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের কথাতে, ”আপনি কনুই দিয়ে একটা গুঁতো দিতে পারলেন না?” হাহাহা !  দুর্জনের মুখে ছাই আর পেটে কনুইয়ের গুঁতো দিয়ে এভাবেই আপনি আরও যুগ যুগ বেঁচে থাকুন, খুব প্রিয় মুহম্মদ জাফর ইকবাল!

সুহানের বই, ইবইয়ের প্রচ্ছদ এবং বইদ্বীপ

Image
খুব চমৎকার একটি প্রচ্ছদসহ সুহানের এই বইটি প্রকাশিত হয়েছে বইমেলা ’ ২০১৯ এ। বইদ্বীপ থেকে ইবুক হিসেবে প্রকাশের জন্যে আমরা যখন প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, তখন আমিই হঠাত প্রস্তাব করি, ইবুকের জন্যে একদম নতুন একটা প্রচ্ছদ করলে কেমন হয়? সুহান রাজি হতেই এঁকে ফেলি এই প্রচ্ছদ। এবং ওর দোনোমনাকে পাত্তা না দিয়ে প্রচ্ছদে লেখকের নামের ফন্ট সাইজ বড় করে দিই বইয়ের নামের চেয়ে, ঠিক যেমনটা দেখি বহির্বিশ্বের বইগুলোয়।  আমাদের দেশে এখনো অবশ্য ইবুক বলতেই আমরা বুঝি প্রকাশিত বইগুলোর স্ক্যান করা পাতাগুলো জুড়ে দিয়ে তৈরি একটা পিডিএফ ফাইল। কিন্তু ইবুক মানে তা নয়। হার্ডকাভার এবং পেপারব্যাক যেমন বইয়ের দু ’ টা সংস্করণ, ইবুক হলো তৃতীয় সংস্করণ। ইপাব বা মোবি তে বাংলা অক্ষর পড়বার আনন্দই অন্যরকম। বইদ্বীপের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন বিরামহীন ভাবে ইবুকের কার্যকারিতা নিয়ে প্রচার চালিয়েছি। সেটা করতে গিয়ে টের পেয়েছি, আমরা বাংলাদেশিরা কাগজের মেইলের বদলে ইমেইলকে মেনে নিয়েছি নিঃসংকোচে, কিন্তু বইয়ের বদলে ইবইয়ের কথা এলেই খুঁজি শুধু স্ক্যান করা পিডিএফ! এ কথা খুব কম মানুষকে বোঝাতে পেরেছি যে ইবই এর আলাদা অস্তিত্ব যত দ্রুত মেনে নেয়া যাবে

সুহান রিজওয়ান এর উপন্যাস - ‘পদতলে চমকায় মাটি’

Image
              সমর কুমার চাকমা আমার কাছের কেউ নয়। বলা যায় পাশের বাড়ির মানুষ। পাশের বাড়ির মানুষেরা তো আমার নিজের বাড়ির মানুষদের মত আপন কেউ নয় আসলে। ওয়াইফাই আর ফোরজি সিগন্যালের কল্যাণে আমরা পুরো বিশ্বের সাথে নিজেদের সংযুক্ত করে ফেলেছি ঠিকই, কিন্তু একই সাথে শত ফুট উঁচু দেয়াল তুলে দিয়েছি নিজের চারপাশে। এই দেয়াল টপকানো সহজ কোন কাজ নয়।               পত্রিকার পাতায় পড়তে পাই আমার প্রতিবেশীর খবর। পত্রিকা, সে-ও তো দূরের কোন ব্যাপার। আমার মত ‘মডারেট-স্বার্থপর’ এবং অল্পবিদ্যার পাঠকেরা নিজেদের চারপাশে একটা কল্পরাজ্যের আড়াল তুলে রাখতে ভালবাসি। পত্রিকার পাতার অস্বস্তিকর বাস্তবতা থেকে চোখ সরিয়ে নিয়মিত তাই রোমান্টিক নায়কের সাথে অপরূপা নায়িকার বাড়ির রাস্তায় পথ চলি। এসকেপিস্ট? হয়তো বা। আমরা তবু খুশি, অন্তত স্বস্তিটুকু থাকুক।   সুহান ঠিক এই জায়গাটাতেই একটা ধাক্কা দিয়েছে। বাস্তবতা থেকে মুখ ঘুরিয়ে স্বস্তি পেতে আমরা যেদিকে তাকাই, ঠিক সেই খানটায় এসে ও সটান করে দাঁড়িয়ে গেছে, আর হাতের মুঠো খুলে আমাদের চোখের সামনে তুলে ধরেছে একটা উপন্যাসের বই, যেখানে রয়েছে সবুজ মানুষদের গল্প। সবুজ মাটি, সবুজ অশ্রু আর রক