জন্মদিনের সকালে -
‘জীবন থেকে জটিলতা কমাই’- এটাই ছিল আমার চা, সিগারেট অথবা মদ্যপান থেকে দূরে থাকবার প্রধান অনুপ্রেরণা। কাছের বন্ধুরা মজা করে বলে এসেছে, ‘গরম চা-এর প্রীতি নেই, এ আবার কেমন লেখক?’
চা-কে ভালবাসতে পারিনি বলেই আজও হয়তো ঠিকঠাক লেখক হয়ে ওঠা হলো না আমার।
কিন্তু ইদানীং নতুন এক প্রেম এসেছে জীবনে, বেশি বয়সের প্রেমের মতন পরিণত সেটা।
রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে ইলেকট্রিক কেটলে পানি চড়িয়ে দিই। রান্না ঘরের জানালা দিয়ে কখনো রোদের টুকরো আসে, কখনো কেবলই ধূসরতা। সেদিক থেকে চোখ ফিরিয়ে হাত বাড়াই বাহারি দেখতে একটা কৌটোর দিকে। তার ভেতর থেকে চামচে করে উঠে এসে সেটা বসে থাকে চুপচাপ আমার মাঝারি আকৃতির মাগ-এ। খানিক পরে গরম পানির সাথে মিশে গিয়ে হয়ে যায় আমার ইদানীংকালের সবচেয়ে প্রিয় পানীয়- ব্ল্যাক কফি।
আরেকটা অদ্ভুত ব্যাপার, কোন একটা সকাল যায় না এখন, যেদিন ব্ল্যাক কফি বানাতে গিয়ে মার্কেজের সেই বুড়ো কর্নেলকে আমার মনে পড়ে না, একটা চিঠির অপেক্ষায় যার জীবন কেটে যাচ্ছিলো। কফির কাপে চামচ নাড়তে নাড়তে আমি সেই অপেক্ষারত মুখটাকে দেখি রোজ। একদিনও তার ব্যতিক্রম হয় না। কফির কাপ হাতে পাশাপাশি আমরা যেন এক সাথে বুড়ো হয়ে যাচ্ছি প্রতিদিন।
শুধু, আজ সকালে, সেই বুড়োটার সাথে আরও একটা মুখ খুব মনে পড়ছে।
সেই মুখটাকে আমি আর কখনো দেখতে পাবো না। কিন্তু প্রায় সাইত্রিশ বছর আগের এই দিনে, প্রথম চোখ মেলেই আমি তাঁকে দেখেছিলাম যখন, আমি নিশ্চিত জানি, আমরা দু’ জনেই দু’জনকে দেখে অনাবিল হেসে উঠেছিলাম। যেন পরস্পরের ভরসা হয়ে উঠেছিলাম আমরা মুহুর্তেই, যেন বলছিলাম, থোড়াই পরোয়া করি আমরা আর কাউকে! আমাদের তো আমরা আছি।
তোমাকে খুব মনে পড়ে আম্মা। এই দিনটায় তুমি আমার মা হয়ে জন্মেছিলে, তোমাকে ছাড়া আমার আর কিছু ভালো লাগে না।