Posts

Showing posts from September, 2022

জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা- শহীদুল জহির

  জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা- শহীদুল জহির একচল্লিশ পৃষ্ঠার এই এক প্যারাগ্রাফের বিরতিহীন উপন্যাসিকায় ফর্ম নিয়ে চমৎকার সব কারুকার্য চোখে পড়ে। খুব অবলীলায় অতীত, বর্তমান বা ভবিষ্যতে আসা-যাওয়া আছে, চরিত্রের পয়েন্ট অব ভিউ এর বদল হয়েছে বেশ কয়েকবার। কিন্তু সেটা পাঠককে বাড়তি কোনও যন্ত্রণা না দিয়েই। ভাল গায়কেরা নাকি এক নি:শ্বাসে গাওয়া লাইনের মাঝে চোরা শ্বাস নিতে পারেন, শ্রোতারা সেটা বুঝতেও পারে না। সে কথাই মনে পড়লো আবার এটা পড়তে গিয়ে। কিন্তু গল্পের ফর্ম নিয়ে পরীক্ষা নীরিক্ষার আসল সাফল্য, আমার মতে, সব কিছুর পরেও পাঠকের মনে থেকে যাবে গল্প, আর গল্পের চরিত্ররা। ফর্ম শেষমেশ কেবলই একটা উপায় বা মাধ্যম, কিন্তু সেটাই সব নয়। মানে, সবার উপরে গল্প সত্য, তাহার উপরে নাই। জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা পড়া শেষ হলে তাই এই এক প্যারাগ্রাফের বদলে মাথায় রয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধ, আর সেই মহল্লার মানুষেরা। বদু মওলানা, আজিজ পাঠান, মোমেনা আর আব্দুল মজিদসহ আরও অনেকে। আর সম্ভবত আড়ালে কোথাও প্রায় না-দেখার মতই দাঁড়িয়ে থাকেন শহীদুল জহির।

জীবন আমার বোন | মাহমুদুল হক

পড়া বই পুনর্পাঠের একটা আনন্দ আছে। চেনা দোকানে ঢুকে চা খাওয়ার মত আনন্দ। দোকানীর হাতের চায়ের স্বাদ আপনার জানা, তাই আয়েশ করে চায়ের কাপে চুমুক দিতে পারবেন, এই নিশ্চয়তা জেনেই আপনি সেখানে যাবেন। পড়া বই হাতে তুলে নেয়ার অনুভূতিটাও এরকমই। মাথায় কোনো কারণে জট পাকিয়ে গেলেও পড়া বইয়ের দ্বারস্থ হওয়া ভাল, বহুদিনের অভিজ্ঞতা আমাকে তা-ই শিখিয়েছে। এই সমস্ত বিবিধ কারণে আবার অনেক দিন বাদে পড়লাম মাহমুদুল হকের 'জীবন আমার বোন'। মনে আছে, এই বইটা পড়ার পরে জানতে পেরেছিলাম Boris Pasternak এর My Sister, Life নামের কবিতার বইটার কথা। তখন ভেবেছিলাম, এই দুই বইয়ের কোনও যোগসূত্র আছে কি? তার বেশ কিছুদিন পরে মাহমুদুল হকের এক সাক্ষাৎকারে জানতে পারলাম, তাঁর বইয়ের নামের পেছনে অবদান আছে সেই বইটার। মাহমুদুল হকের ভাষাকে ঠিক আটপৌরে বা সাবলীল বলা যায় না, তবে আমার ভাল লাগে। এই বইটা মুক্তিযুদ্ধের ঠিক আগের কয়েকটা দিনের গল্প মূলত। কয়েকজন তরুণ তরুণী, এক বা কয়েকটি পরিবার। আর একটা বোন। সব তরুণের যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার সাহস ছিল না, সবার যুদ্ধে যাবার পেছনের কারণও এক ছিল না। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পড়া অন্য উপন্যাসগুলো যে ধাঁচের, এটা ঠিক সের

"হোয়াট উই টক অ্যাবাউট হোয়েন উই টক অ্যাবাউট লাভ-"

Image
রেমন্ড কার্ভারের গল্পের চরিত্ররা সবাই এত বেশি সাধারণ, এত বেশি প্রতিদিনকার যে মাঝে মাঝে আয়না দেখার মত করে চমকে যেতে হয়। পৃথিবীতে কোনো একজন লেখক এইরকম মানুষদের গল্পে নিয়ে এসেছেন, ভাবতে খুব ভাল লাগে। ওঁর মিনিমালিস্ট লেখার স্টাইলটা দারুণ। যদিও সেটার জন্যে এখন তাঁর এডিটরকে ক্রেডিট দেয়া হয় বেশি, সেটা অর্ধেক মেনে নিয়েও আমি যখন ওঁর চরিত্রগুলার কথা ভাবি, তখন মনে হয়, স্টাইল যেমনই হোক, কিন্তু এই চরিত্রদের নিয়ে লিখবার কথা তো তাঁর মাথা থেকেই এসেছে। সালমান রুশদী একবার বলেছিলেন, অনেকেই লোভে পড়ে ওভাবে লিখতে চেয়েছিল। ওরকম একটা ঘরে বসে থাকা দুইজন মানুষের গল্প, অথবা ওয়ার্কিং ক্লাস বা ব্রাত্য মানুষদের গল্প, কিন্তু কেউই তো আর কার্ভার হয়ে উঠতে পারেনি। এ কথা সত্যি। কার্ভারের লেখা পড়ে মনে হয়, এ আর এমনকি। এরকম তো সবাই লিখতে পারে। কিন্তু বাস্তবে, এই ছোট ছোট বাক্যগুলো পরপর বসিয়ে দিয়ে এর ভেতরে কার্ভার যে প্রাণ আর শক্তি পুরে দেন, সেটা নকল করা সহজ কাজ নয়। সবচেয়ে আশ্চর্য লাগে, ওঁর গল্পের নামগুলোও যেন নিজেরাই একেকটা গল্প। হোয়্যার আ'ম কলিং ফ্রম, সো মাচ ওয়াটার সো ক্লোজ টু হোম, নোবডি সেইড এনিথিং, দে আর নট ইওর হাজবে