Posts

Showing posts from 2008

দু' বছর

রোজ সকালে আড়মোড়া ভেঙে ওই একটা সবুজ তোয়ালেতেই মুখ মুছি প্রতিদিন। রোজ একই জুতা জামা গায়ে, সেই একই রাস্তা ধরে- একই গন্তব্যে পৌঁছে যাই বারবার। দুয়েকটা রঙীন ফানুস এসে মাঝে মাঝে, খানিকটা রঙধনু ধার দিয়ে যায় হয়তো- আমাদের দুজনের চোখের জল আজ, মিলেমিশে মুখ লুকিয়ে হাসে। এরকম অভ্যস্ততায় কতগুলো দিন কেটে গেলো! একটাই জানলা দিয়ে রোজ, দুয়েকটা চড়ুই এসে পড়ে- কী আশ্চর্য, আমরা দুজন একটি ঘরে থাকি! অথবা আমাদের একমাত্র সুখের আজ ঠিক দুবছর। প্রতিনিয়তই আমাদের নিঃশ্বাসের সুর মিলে যায়- তবু দেখ, সেই তোর জন্যেই কোন গান আজও লেখা হয়ে উঠলো না আমার। ==== Tomar Jonyo.mp3 --------- গানঃ অন্জন দত্ত, তোমার জ‌ন্যে, এল‌বাম- হ্যালো বাংলাদেশ।

একটা রূপকথা

দেখি, আজ একটা গল্প বলি বরং। এক বাড়ির বড় ছেলে নতুন বিয়ে করে খুব লক্ষীমন্ত একটা মেয়েকে ঘরে নিয়ে আসলো। দুইজনে খুব ভাব-ভালবাসা, খুব মিল-ঝিল। নিজেদের মত করে সুখেদুখে দিন কাটায়। বাড়ির বাকি লোকজনের আবার এটা পছন্দ হলো না। রূপকথার কূটনী বুড়িদের মত তাদের চোখ টাটাতে লাগলো এত সুখ দেখে। তারা নানান মিটিং-টিটিং করে একসাথে নানান রকম ফন্দি-ফিকির করতে লাগলো। বৌ-টার লক্ষীপনাকে বললো ন্যাকামী, লাগাল সেটা ছেলেটার কানে। কিন্তু ছেলে সেসবে কানই দিলো না, বউটাকে যে সে খুব ভালমতন চেনে। বাড়ীর সবার সব কূট-বুদ্ধি বিফলে গেলো। এদিকে কদিন পরে, মেয়েটার শরীর খারাপ হলো। কী ব্যাপার কী ব্যাপার? ছেলে ডাক্তার-বদ্যি ডেকে আনলো। ও মা, জানা গেলো, সে তো ভারী সুখের খবর। মেয়ে যে মা হবে! ছেলে আর বৌয়ের মনে কী খুশি! আনন্দে তারা ডুবে ডুবে যায়। কিন্তু বাড়ির লোকের আবারো চোখ টাটায়। তারা ঠিক করলো এতদিন যেমন তেমন, এইবারে আর ছাড়াছাড়ি নেই। ওদের যেহেতু কিছু করতে পারেনি, ওদের সন্তানেরই অনিষ্ট করবে তারা। তো, দিন যায়, মাস যায়। নয় মাস বাদে মায়ের প্রসব ব্যাথা ওঠে, আতুঁড় ঘরে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানে, অনেক যন্ত্রণা আর কষ্টের পরে মা-টা একটা ফুটফুটে চ

কামরুল-বন্দনা

(হেডনোট, অথবা শিরঃটীকা- এই লেখার মূল উদ্দেশ্য দুইটি। এক- বন্ধুদের ঢোল বাজাতে আমার ব্যাপক ভাল লাগে। সুযোগ পেলেই বাজাই। দুই- খেয়াল করে দেখলাম, এই ব্লগের হার্টথ্রব কামরুল একাই আমাদের বন্ধুদের নিয়ে লিখছে। আমি ভাবলাম, আজ নাহয় আমিই কামরুলকে নিয়ে কিছু লিখি। ) আমরা সবাইই কুমিল্লার ছেলেপেলে। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, পড়েছি সবাই জিলা স্কুলে। তারপরেও কামরুলের সাথে আমাদের পরিচয় হতে খানিকটা দেরি হয়ে গিয়েছিলো। কারণ সম্ভবত এই যে, সেভেনের পর থেকে আমাদের কলেজ আলাদা হয়ে গিয়েছিলো। সম্ভবত নাইন বা টেনের কোন একটা সময়ে কোন এক টিউটরের বাসায় দরজায় দাঁড়িয়ে আমি চেঁচামেচি করছি, এইসময় ছোটখাটো সাইজের একটা ছেলে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, কী রে, কেমন আছিস? আমি চিনলাম না। ঐ সময়টায় এরকম আমার প্রায়ই হতো যে রাস্তায় কারও সাথে দেখা হলো, আমার কুশল জিজ্ঞেস করছে, কেমনাছি, কীকর্ছি, নানান হাবিজাবি। প্রথম দিকে দুয়েকবার লোকজনের মনে দুঃখ দিয়ে ফেলতাম। পরে শুধরে নিয়েছি, কোনভাবেই আর টের পেতে দিতাম না যে আমি আসলে মানুষটাকে চিনতে পারছি না। এবারও তাই করলাম। চিনতে না পেরে, দুপলক শুধু, তারপরেই একদম স্বাভাবিক স্বরে বললাম, এই তো ভাল আছি,

চাচামিয়া

আমি সোফার এক কোনায় পায়ের উপর পা তুলে আরেকটু আরাম করে বসে গলা উঁচিয়ে বললাম, চাচামিয়া, শেখ মুজিবরে নিয়াও কিছু বলেন, ওনারে আপনের কেমুন মনে হয়? চাচা একটা গলা খাঁকারি দিলেন, তারপর প্রায় অদৃশ্য কোন একটা জায়গা থেকে একদম জুয়েল আইচের স্টাইলে একটা পান বের করলেন। তারপর শূন্যে সপাং সপাং খানিক্ষণ ঝেড়ে মুছে, পুরাই রজনীকান্ত স্টাইলে সেটা মুখে চালান করে দিলেন। পুরো পরিবেশটাই এমন সিনেমাময় যে, খানিকটা কান পাতলেই আমি ব্যাকগ্রাউন্ডে কোথাও দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার ধিড়িম ধিড়িম বাজনা শুনতে পাচ্ছিলাম। চাচামিয়ার গলা আরও কয়েকবার শব্দ করে উঠলো। আমি সোফায় পা বদলে বসলাম। আগ্রহে বেশ খানিকটা সামনে ঝুঁকে আছি, কি বলবেন শোনার অপেক্ষায়। যে বাড়িতে এসেছি, আমাদের পরিচিত এক বাংলাদেশীর বাড়ি সেটা, কিবরিয়া ভাই-র। সদ্য পুত্রসন্তানের পিতা হয়েছেন। এই আনন্দে কিবরিয়া ভাই আশপাশের অনেককেই নিমন্ত্রণ করেছেন। যাবো না যাবো না ভেবেও শেষমেষ হাজির হলাম। এমনিতেই অসামাজিক হিসেবে অনেক দুর্নাম কামিয়ে ফেলেছি। শুনেছি আড়ালে আবডালে আমার অহংবোধ নিয়ে বেশ নাকি কানাঘুঁষা চলে। সেসব প্রাচীর অবশ্য এক দু'বারের হাজিরায় লোপাট হবার কোন সম্ভাবনা নেই, তবু আ

ফেইসবুক বিড়ম্বনা

আমার বউ রোজ সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে মনোযোগ দিয়ে প্রথম যে কাজটা করে, সেটা হলো, ফেইসবুকের অজস্র ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট ধরে ধরে গণহারে ইগনোর করে দেয়। ব্যাপারটা ওর জন্যে বেশ বিরক্তিকর, সন্দেহ নেই। আমার এসব জ্বালাতন নেই, তাই ওর দূর্ভোগ দেখে প্রায়শই মুখ টিপে হাসি। মাঝে মাঝে আমাকে ডেকে দেখায়, দুয়েকজন একদম প্রথম মেসেজেই বিয়ের প্রস্তাব পর্যন্ত দিয়ে বসে, এইরকম দুয়েকটা মেসেজ দেখে আমার চোখ কপালে উঠে গেছে! আমি অন্তত মুখ চেনা না হলে কাউকে রিকোয়েস্ট পাঠাই না। সচলায়তন আর সিসিবি-র অনেককেই ওখানে দেখিবা-মাত্রই যোগ করে নিয়েছি, কাউকে কাউকে খুঁজে নিয়েছি, কাউকে ঘুরতে ঘুরতেই পেয়ে গেছি। । দুয়েকজনকে অবশ্য আমিও ইগনোর করেছি। কিছু রিকোয়েস্ট আসে এমন, একেবারেই চিনি না, কোন ফ্রেন্ডও কমন নেই কারও সাথে। প্রোফাইলে ঢুকেও কোনভাবে মনে হলো না যে চিনি। তাদের কিছুদিন রেখে দিই, তারপরেও চেনার কোন সুত্র না পেলে আস্তে করে বিদায় জানিয়ে দিই। এক ভদ্রলোককে আমি সব মিলিয়ে ইগনোর করেছি পাঁচবার। ওনার সাথে আমার অবশ্য ব্যক্তিগত কোন শত্রুতা নেই, ব্লগমন্ডলের বেশ পরিচিত একজন। সমস্যা হলো, উনি নানাবিধ কারণে সচলায়তনে লিখতে পারেননি, এ কারনে সব খানে খুব বাজ

হাওয়াই মিঠাই ১২

তুমুল গরম নেমেছে এখানে। চোখের পাতায়, চামড়ায়, এমনকি চামড়া ভেদ করে একদম ভেতর পর্যন্ত অনুভুত হয় গরম। পুরো শীতকাল কাটিয়ে দিলাম ১৩/১৪-র আশপাশ দিয়ে। এখন দিন নেই রাত নেই- সারাক্ষণই ৩০! গরম নেমেছে মাথায়, নেমেছে রাস্তায়, রাস্তার লোকেদের জামা কাপড়েও। মাথার চুল একদম ছোট করে ফেলবো ভাবছি, দিনের বেলা রাস্তায় আর বেরুবো না ভাবছি, রাস্তার মানুষদের দিকে, ও হরি, মেয়ে বলেই তাকাতে হবে? নাহ, আর তাকাবো না ভাবছি। পাপ হয়ে যাবার চান্স আছে বিস্তর। বর্ষার দিনে তবু মনে হয়, এমন দিনে তারে বলা যায়। এমন গরমে কারে কী বলি? সবচে মজায় আছেন যিনি, তার নাম আকাশ। রোজ সক্কাল থেকে তিনি রঙিলা হয়ে ওঠেন, সারা দিনমান ধরে সাজেন গুঁজেন, সন্ধ্যায় তিনি টকটকা রূপসী! সেই কবে কখন কোন কৈশোরে, ইশকুলের সিঁড়িতে কারে দেখে যেন হৃদয় থেমে গেছিলো, আজকাল আকাশ দেখলেও তাই কেন হবে? একপাশে গোলাপী একপাশে কমলা, মাঝে শুধু নীল নীল নীল, আর কি ভীষণ দেমাকী! কাজ শেষে, বিকেলে, ভুল করে ওপরে তাকিয়েছি তো গেছি, আমি আর নেই নেই নেই। মাথা খারাপ হবার জোগাঢ়! তাপ্পর, পক্ষীরাজ নিয়ে দেই ছুট। আবারো ছেলেবেলা, যেন স্কুল-ড্রেস পরা কোন কিশোরীর রিকশার পিছু নিয়েছি, বুকের ভেতর দ্

অণুগল্পঃ বনসাঁই

থোকা থোকা আগুন ভর্তি গাছটার নিচে মুখ অন্ধকার করে দাঁড়িয়ে আছে সজীব। ছটফটে একটা ভঙ্গি ওর সারা দেহে, ঘড়ি দেখছে বারবার। শিলা আজ খুব বেশি দেরি করে ফেলছে- টিউশানীতে ঠিক সময়ে পৌঁছতে হলে সজীবের এক্ষুনি উচিৎ বাস ধরতে ছোটা। কিন্তু সে উপায় নেই। ক্লাস শেষ হবার পরে এইটুকুই যা সময়, এখন চলে গেলে আজ আর দেখা হবে না। শুরুতে অবশ্য এত ঝামেলা পোহাতে হতো না। ক-ইউনিটে পরীক্ষা দিয়ে এক সাবজেক্টেই পড়ছিলো দু'জনে, একসাথে। পরে মাইগ্রেট করে বিষয় বদলে শিলা চলে যায় অন্য ডিপার্টমেন্টে। আর তারপর থেকেই সজীবের রোজকার এই নতুন রুটিন, প্রতিদিন ক্লাস শেষে দু'পলকের এই দেখা! আজ সকালে ছুটতে ছুটতে ক্লাসে যাবার সময় অবশ্য শিলাকে দেখেছে একটুখানি, কমলা রঙের একটা স্বপ্ন-স্বপ্ন জামা পড়ে রিকশা থেকে নামছিলো। কথা হয় নি, তার ক্ষতিপূরণ হিসেবেই যেন আজ ক্লাসের পুরোটা সময় ওর মাথা কমলা রঙে শুধু ডুবছিলো আর ভাসছিলো। কার্জন হলের পাশ দিয়ে টুংটাং ঘন্টা বাজিয়ে ছুটে চলা রিকশাগুলোর চেয়েও দ্রুত গতিতে ছুটছে যেন ওর ঘড়ির কাঁটা। অল্প খানিকটা বাতাস দিচ্ছে, সেই হাওয়ায় মাথার ওপর থেকে টুপ করে খসে পড়ে একটা কৃষ্ণচূড়া, সজীবের কাঁধে ধাক্কা দিয়ে অভিমানী মেয়

কপিরাইট বিষয়ে

ফ্রি ল্যান্স জার্নালিজমের উপরে লেখা একটা বই পড়তে গিয়ে বেশ কিছু মজার তথ্য জানলাম, মূলত কপিরাইট নিয়ে। বাংলাদেশে কপিরাইটের ধারণাটা ঠিক কি ভাবে কাজ করে? ধারণা, কাজ করে বা এইরকম শব্দ ব্যবহারের কারণ আছে। আমি জানি এ সংক্রান্ত আইন কানুন আছে ঠিকই, কিন্তু সেসবের প্রয়োগ হয় বলে খুব একটা জানি না। কদিন আগে আনোয়ার সাদাত শিমুলের একটা পোস্টে পড়লাম, ফটোকপি বা অননুমোদিত প্রিন্ট করা যাবে না কোন কিছুর, কপিরাইট আইনের এটাই নাকি প্রাথমিক শর্ত। আমি অবশ্য ঠিক এই লাইনে যাচ্ছি না। লেখকের দিক থেকে ভাবছি এবং পত্রিকার দিক থেকেও। মানে, ধরা যাক, একজন সাংবাদিক কোন একটা পত্রিকায় একটা লেখা ছাপালেন, তো ছাপানোর পরে ওই লেখাটার স্বত্ব কার হাতে? লেখকের কাছে, নাকি পত্রিকার কাছে? বা, একবার একটা পত্রিকায় লেখা ছাপালে সেটা পরবর্তীতে অন্য পত্রিকায় ছাপানোর ব্যাপারটাকে কী বলা যায়? ভালো, না মন্দ? নৈতিক, নাকি অনৈতিক? জুন ওয়েন নামের এই ভদ্রমহিলা, যিনি একজন ফ্রি-ল্যান্স লেখক, এই বইটি লিখেছেন মূলত অস্ট্রেলিয়ার প্রেক্ষাপটে। তিনি উঠতি সাংবাদিকদের নানান রকম টিপস দিয়েছেন বইটাতে। তার মধ্যে কয়েকটা পড়ে আমি বেশ চমকিত হয়েছি। এ দেশে একটা লেখার স্ব

বনফুলের গল্পসমগ্র-

কলিকালে এক ডাক্তার জন্মিয়াছিলেন বাঙালাদেশে। তাঁহার পসার ছিলো, সেই সাথে প্রাণের ভিতরে সাহিত্য করিবার প্রেসারও ছিলো। নিজের দাওয়ায় বসিয়া তিনি প্রেসক্রিপশানে রুগীদের কষ্টের হিস্টরী লিখিতেন। আর তাহাদের সহিত আলাপের অবসরে, মনের ভিতরের কোন এক খাতায় নানা প্রকারের নোট লইতেন, সংস্পর্শে আসা নানাবিধ জীবন আর তাঁহাদের কাছ হইতে পাওয়া এই সব অলৌকিক গল্প তিনি কোন দিন লিখিয়া উঠিবেন এই আশায়। সেই সব প্লটগুলান তিনি একখানা খাতায় লিপিবদ্ধও করিয়া ফালাইলেন, ভবিষ্যতে সেগুলা পূর্ণতা পাইবে, ইহাই ছিলো কামনা। কিন্তু তিনি ব্যস্ত‌ মানষ‌। মোটের ওপরে, তেমন করিয়া আর সময় করিয়া উঠিতে পারিলেন না। তখন ভাবিলেন, প্লটগুলান এই রূপেই গল্প হিসেবে ছাড়িয়া দিলে কিরূপ হয়? তো তিনি তাহাই করিলেন। এবং, নিজের অজান্তেই তিনি সৃষ্টি করিলেন গল্পের এক নতুন ধারা। গল্পিকা, গল্প-কণিকা বা আদিরূপ ছোটগল্প ঘুরিয়া অদ্যকার কলিযুগে সকলে যাহাকে অণুগল্প হিসাবে চেনে। * একটু হাসফাঁস লাগলো এইটুকু লিখতেই। তবে ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং। চলিত ভাষায় লিখতে গেলে সম্ভবত একটু বর্ণনার প্রয়োজন পড়ে বেশি, সাধুতে সেটা অল্প কথায় সেরে ফেলা যায়! বলে রাখা ভাল, উপরের চিত্রটি পুরোপ

আশ্চর্য তীর্থযাত্রীরা - শেষ পর্ব

শহরগুলোর একটির সাথেও আগেকার স্মৃতির কোন যোগসূত্র খুঁজে পেলাম না। কোন একটা অদ্ভুত উল্টো প্রক্রিয়ায় বর্তমান ইউরোপের আর সব শহরের মতই তারা বিস্ময়কর হয়ে উঠেছিলো। সত্যিকারের স্মৃতিরা কেমন যেন ভৌতিক হয়ে গিয়েছে, আর তার বদলে মিথ্যে স্মৃতিরা এত বেশি বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠেছে যে তারাই বাস্তবতাকে প্রতিস্থাপিত করেছে। এর মানে দাঁড়ালো, আমি তাহলে বিভ্রম আর স্মৃতিকাতরতার মাঝের বিভেদরেখাকে আলাদা করতে পারিনি। যদিও এম‌ন ক‌র‌তে পারাটাই হ‌তো ঠিকঠাক সমাধান। অবশেষে আমি ঠিক তাই খুঁজে পেলাম, বইটি শেষ করার জন্যে আমার যা দরকার ছিলো এবং পার হতে থাকা বছরগুলো আমাকে একমাত্র যা দিতে পারতোঃ সময়ের এক‌টি প‌ট‌ভূমি। দীর্ঘ দীর্ঘ বাক্য সব। একটার শেষের পরে অপরটার শুরুর মধ্যেকার যোগাযোগ বুঝে ওঠার জন্যে, মাঝে মাঝেই আমার এমন হয়েছে যে পুরো বাক্যটা বেশ ক"বার পড়তে হয়েছে। বাংলা করার পরে আমি আবার পড়ে দেখছিলাম, সেই একই সমস্যা এখনো হচ্ছে কি না। টের পেলাম যে তা এখনো হচ্ছে, তখন ইংরেজিটা মাথা থেকে পুরোপুরি সরিয়ে দিয়ে বাংলার উপরে বেশ খানিকক্ষণ ঘষা মাজা চালালাম। বাক্যের গতিপথ মসৃণ হয়ে এলেই তবে থেমেছি। আমি সেই কার্যকরী সফর সেরে ফিরে এসে

আশ্চর্য তীর্থযাত্রীরা ০৩

আমার মনে আছে, ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত আমার সেই নোটখাতাটা আমার ডেস্কের ওপরেই অনেকগুলো কাগজের নীচে ডুবে ছিলো। একদিন, অন্য কী একটা খুঁজতে গিয়ে আমি টের পেলাম, খাতাটা আমি বেশ কদিন ধরেই দেখছি না। তাতে অবশ্য তেমন কিছু যায় আসে না। কিন্তু যখন আমি নিশ্চিত হলাম যে খাতাটা সত্যিই ডেস্কে কোথাও নেই, আমি রীতিমতন আতঙ্কিত হলাম। বাড়ির প্রতিটি কোণ খুঁজে দেখা হলো। আমরা আসবাব সরিয়ে খুঁজলাম, এমন কি লাইব্রেরীর তাক সরিয়ে সরিয়ে দেখা হলো বইয়ের ফাঁকে কোথাও খাতাটা পড়ে যায়নি এ ব্যাপারে নিশ্চিত হবার জন্য। গৃহ পরিচারক এবং আমাদের বন্ধুদেরও জেরা করা হলো। কিন্তু কোথাও কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিলো না। একমাত্র সম্ভাবনা এবং যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা একটাই হতে পারে, প্রায়শই আমি যখন পুরনো কাগজ পাতি দুম করে ফেলে দিই, খাতাটাও হয়তো তখুনি ময়লার ঝুড়িতে চলে গেছে। এখানে আমি বিরাট কারচুপি করলাম আবারও। বারবারই এই নতুন দ্বন্ধের সাথে আমার পরিচয় ঘটছে। পড়ে যা বুঝছি, মাথায় যেটা থাকছে, অনুবাদিত বাংলায় সেটা আসছে না। আরও অনেক ভাবা দরকার আমার বুঝতে পারছি, কিন্তু ধৈর্য্যে কুলাচ্ছে না। এটাকে চূড়ান্ত করবার আগে অবশ্যই আমার এ ব্যাপারগুলো নিয়ে আবার বসতে হবে। অথবা ন

আশ্চর্য তীর্থযাত্রীরা -০২

আমি জানি না কেন, কিন্তু আমি সেই দৃষ্টান্তমূলক স্বপ্নটিকে আমার নিজস্ব স‌ত্তার বিবেকীয় পরীক্ষা হিসেবেই ব্যাখ্যা করলাম। এবারে একদম ঘেঁটে গেলো, খুবই দুর্বল হয়ে গেল এই বাংলাটা। পুরোটা পড়ে ফেলবার পরে আবার অবশ্যই এই লাইনটার কাছে একবার ফিরে আসতে হবে ব‌লে ম‌নে হ‌চ্ছে। আমি জানি না কেন, কিন্তু আমি সেই দৃষ্টান্তমূলক স্বপ্নটিকে আমার নিজস্ব স‌ত্তার বিবেকীয় পরীক্ষা হিসেবেই ব্যাখ্যা করলাম, এবং আমার মনে হচ্ছিলো ইউরোপে ল্যাটিন আমেরিকানদের সাথে যে আজ‌ব ব্যাপারগুলি ঘ‌টে সেসব নিয়ে লেখার জন্যে এটা একটা উৎকৃষ্ট সময়। নাহ, এবারেও হলো না পুরোপুরি। মূল কথাটা বুঝতে পারছি, কিন্তু লেখায় সেটা আনতে পারছি না কিছুতেই। আরেকটা কথা, এটা এভাবে বাংলা করে করে পড়তে গিয়ে মনে হলো, বাংলা শব্দভান্ডার আমার ভষ‌ণ‌ ক‌ম! এরকম অনুবাদ জাতীয় খেলাধূলা সম্ভবত প্রায়শই করা উচিত, শব্দভান্ডার বাড়াবার প্রয়োজনে। এটা আমার জ‌ন্যে বেশ উৎসাহব্যাঞ্জক ছিলো, কারণ আমি মাত্রই আমার সবচেয়ে কঠিন এবং রোমাঞ্চকর লেখা The Autumn of The Patriarch শেষ করেছি, এবং আমি জানতাম না তারপরে আমার কি করা উচিৎ। দু বছর ধরে গল্পের বিষয়বস্তু হিসেবে ভাবা যায়, এর‌ক‌ম যা কিছু ঘ‌

নিজে মরতে চাইলে মরুন, দয়া করে অন্যদের মারবেন না-

Image
ঊনিশ বছর বয়েসী এই ছেলেটির নাম পুনিত। ভারতীয় ছেলে, ছাত্র হিসেবে পড়তে এসেছে অস্ট্রেলিয়ায়। অনুতাপে ভরা এই কমবয়েসী মুখখানা দেখে অনেকেরই মনে মায়া জাগছে জানি, কিন্তু আমার জাগছে না, বদলে কেবলই তীব্র রাগ হচ্ছে ভেতরে। এই ছেলেটি দুদিন আগে গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ে, ফলাফল- একজন পথচারী ওখানেই নিহত, অন্যজন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে। আমি জানি, দুর্ঘটনা দুর্ঘটনাই, কারও হাত নেই সেখানে। কিন্তু দুর্ঘটনার পেছনে যদি থেকে থাকে কারো দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, কি বলবেন তখন? পুনিত নামের এই ছেলেটি সেদিন রাতে তার কলিগদের সাথে পার্টি শেষ করে গাড়ি চালিয়ে ফিরছিলো শহরে। পার্টিতে চার বোতল স্কচ আর কোলা পান করে সে। ফিরবার পথেই দুর্ঘটনায় পড়ে, গাড়ি নিয়ে সোজা ধাক্কা দেয় রাস্তার পাশের গাছে, তারপরে ট্রাফিক লাইটে, অতঃপর পাশের হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দুজন মানুষের ওপরে পড়ে তার গাড়ি। তাদের একজন নিহত হলেও পুনিত প্রাণে বেঁচে গেছে। পুলিশের জেরায় পুনিত শুনিয়েছে এক অদ্ভুত কাহিনি। সে বলেছে, গাড়ি চালানোর সময় তার চোখ ব্যথা করছিলো, খানিকক্ষণ চোখ বুজেও (!!) ছিল সে, চোখ খুলতেই দেখে গাড়ির সামনে কোথা থেকে একটা বিড়াল এসে পড়েছে, সেটাকে বাঁচিয়ে পাশ কাটাতে

আশ্চর্য তীর্থযাত্রীরা -০১

গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের বারোটি ছোটগল্প নিয়ে একটা সংকলন, ইংরেজি নাম স্ট্রেইন্জ পিলগ্রিমস । পিলগ্রিমসের দুইটা মানে করা যায়। এক হলো পর্যটক, বা অভিযাত্রীও বলা যায়। অন্যটা হলো তীর্থযাত্রী। আমি ভাবছিলাম, এই বইয়ের বাংলানুবাদ কেউ যদি করতে চায়, কোন মানেটা বেছে নেবে? ঠিক এই নামে বইয়ে কোন গল্প থাকলে খানিকটা সুবিধা হতো। তখন গল্পের গল্প বা ভাবগতিক দেখে বুঝে নেয়া যেত, অভিযাত্রা নাকি তীর্থযাত্রা, কোনটা আসল উদ্দেশ্য। আমি অবশ্য ভেবে নিলাম, তীর্থযাত্রা-ই ভাল শোনাবে। কল্পনাটা এরকম যে, গল্পগুলো নানান চরিত্র, তাদের বর্ণনা এবং এইসব বিবরণের প্রয়োজনে একগাদা বাক্যের সমষ্টি- এই পুরো ব্যাপারটা শেষ-মেষ যেখানে যেতে চাইছে, সেটা হলো- একটা গল্প হয়ে ওঠা। অনেকটা তীর্থ-দর্শনের প্রতিজ্ঞা নিয়েই যেন গল্পগুলোর এগিয়ে যাওয়া। এইরকম ভাবনা মাথায় এনে আমি নিজের মনেই রায় দিলাম- স্ট্রেইন্জ পিলগ্রিমসের ঠিকঠাক বাংলা করতে বললে, আমি এটাই বলবো- আশ্চর্য তীর্থযাত্রীরা । বইয়ের গল্পগুলো পড়তে গিয়ে ভাল-মন্দ দুইই লাগছিলো। তবে সে সব নিয়ে আলাপ করা আমার উদ্দেশ্য নয় এখন। ঘটনা হলো, বইয়ের শুরুতে লেখক কর্তৃক লিখিত ভূমিকাটুকু পড়ে চমৎকার লেগেছিলো

ঈদ মুবারক

Image
ঈদের কথা মাথায় এলেই একসাথে তিন-চারটে ছবি ফ্ল্যাশব্যাকের মত করে মনে পড়ে যায়। এক। দৈনিক পত্রিকা। প্রায় সবগুলোর হেডিং হয়- আজ চাঁদ দেখা গেলে কাল ঈদ। একদম ছেলেবেলা থেকে এখন পর্যন্ত প্রতি বছর একই কাহিনি, কোন ব্যাতিক্রম পাইনি। কালকের পত্রিকা খুললেই আশা করি প্রমাণ মিলবে। দুই। বিটিভি। সার বেঁধে দাড়িয়ে থাকা বাচ্চা কাচ্চা। শরীর আর ঘাড় বিপরীত দিকে প্রায় ১২০ ডিগ্রী ঘুরিয়ে চিৎকার করে গাইছে- ঘুরে ফিরে, বারে বারে ( এইখানে শরীর বাঁকানোর সাথে সাথে মাথায়ও একটা সেইরকম ঝাঁকি হবে), ঈদ আসে ঈদ চলে যায়..... তিন। এইখানেও সার বাঁধা মানুষ, তবে বাচ্চা নয়, বড়ো। এরা গাইছেন, ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ। চার। টিভি চ্যানেলের উপস্থাপিকা বা সংবাদ পাঠিকাদের প্রায় ডুমুরের ফুলের মতন মাথায় লেগে থাকা একটু খানি ঘোমটা এই দিনে পুরোপুরি গায়েব হয়ে যায়! চান রাতের খুশীতে তারা পরিপুর্ণ চাঁদ বদন নিয়ে টিভি পর্দায় হাজির হন! * ঈদের সালামীর কথাও ভুলবার নয় কিছুতেই। সালামী পেতে মারাত্মক ভাল লাগতো। ঈদের আগে আগে সেবা প্রকাশনীর ক্যাটালগ দেখে দেখে বেছে রাখতাম কোন কোন বই কিনবো। ঈদ শেষে সালামীর টাকা পকেটে নিয়ে সোজা বইয়ের দোকানে হাজির

জুবায়ের ভাই...

অর্ধেকটা জীবন পেরিয়ে এসে আত্মীয়-অনাত্মীয় নানা জনের বিদায়ে শোকাহত হয়েছি, কিন্তু বন্ধু বিয়োগের ব্যথা এই প্রথম পেতে হলো। অনেক দিন বাদে আজ কারো বিদায়ে তীব্র কষ্ট হচ্ছে, হু হু কান্নায় ভরে যাচ্ছে চোখ। সচলায়তনের পাতা উলটে পুরনো লেখায় চোখ বুলিয়ে যাচ্ছি, কেমন করে বিশ্বাস করি এত প্রাণবন্ত লেখাগুলোর পেছনের মানুষটা এখন আর নেই! ব্যক্তিগত মেসেজে যেটুকু আলাপ, খুঁজে খুঁজে পড়ছি বারবার, আর চোখ ভিজে আসছে কেবলই। সচলের পাতায় কার যেন কোন একটা গল্পে আদর করে ভুল ধরিয়ে দিয়েছিলেন কিছু। আমি একদম পেয়ে বসি তারপরে, বললাম, এই প্র্যাকটিসটা চালু রাখা দরকার, আপনি নিয়মিত করুন এই কাজটা । হেসে আমাকে মেসেজ দিলেন, আমি কি তবে কানাই মাস্টার? তবে কখনোই তাঁর কথায় মাস্টারি ছিলো না কোন কালে, এত বড় একটা মানুষ, তবু কি অদ্ভুতভাবে কেবলই একজন ভাল বন্ধুর মতন মন্তব্য করতেন প্রতিটি লেখায়। সচলে আসা তার একটা উপন্যাসের খুব কড়া সমালোচনা করেছিলাম একবার। আর কেউ হলে ওরকম কঠিন করে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারতাম কি? মনে হয়, না। জুবায়ের ভাই বলেই পেরেছি। এবং শান্তি পেয়েছি তার প্রতিক্রিয়া পড়ে, তিনি ভীষণ খুশি এরকম সমালোচনায়- মন্তব্যে পাঁচ তারা দিতে চা

হাওয়াই মিঠাই ১১

কদিন আগে, সম্ভবত প্রায় বছর দশেক বাদে, মাঝরাতের শো শেষ করে সিনেমা দেখে ফিরতে ফিরতে এক্স ফাইলসের সুরটা শিস দিয়ে বাজালাম। এক নাগাড়ে অনেকক্ষণ, থেমে থেমে লম্বা সময়। দেখলাম, এত দিনের অনভ্যাসে ভুলিনি তবু, ভালই বাজাতে পারলাম। সিনেমাটা খারাপ লাগেনি। অনেক আগে টিভি পর্দায় দেখা পর্বগুলোর সাথে তেমন কোন পার্থক্য নেই অবশ্য। আমার মনে হলো, শ্লথ গতির কারণে একদম নতুন দর্শকেরা হয়তো হতাশ হবে, কিন্তু আমাদের মত কিছু দর্শক, যারা পুরোনো স্মৃতি খুঁড়ে ভাললাগা জাগাতে চাইবে, তাদের খুব একটা খারাপ লাগবে না। অবশ্য মুভিটা নয়, আমি ভাবছিলাম অন্য কথা। ভাবছিলাম, টিভি পর্দায় যখন খুব উত্তেজনা নিয়ে এক্স ফাইলস দেখার জন্যে অপেক্ষা করতাম, সেটা সত্যিই কি দশ বছর আগের কথা? বড় হয়ে যাচ্ছি, হতে হতে বুড়োর পথে যাচ্ছি, এইরকম একটা ভাবনা প্রতিনিয়তই আমাকে বিমর্ষ করে। আমার সত্যিই আর বড় হতে ইচ্ছে করে না, ঠিক এইখান থেকে যদি এবাউট টার্ণ নেয়া যেতো, নিয়ে নিতাম। ইতিমধ্যেই জীবনের এতটা পথ পেরিয়ে এসেছি যে, সেখান থেকে যখন তখন দশ বা বারো বছরের এক-একটা টুকরো তুলে নিয়ে পরে স্মৃতিচারণ করতে পারছি, এর চেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে? এরকম করে ভাবতে চাই না,

ইতাক তুকে মানাইছেনাই রে

এই মিঠে-মন্দ রোদ আর বাতাসে পথ হাঁটতে গেলেই গা জুড়িয়ে আসে আরামে। খুব সাদা, অনেক কালো আর আমার মতন বাদামী রঙের মানুষদের মাঝখান দিয়ে অনায়াস দক্ষতায় গা বাঁচিয়ে পাশ কেটে কেটে হেঁটে বেড়াই। পথ চলতে, কানে ভেসে আসে নানান ভাষার কিচির-মিচির। তবু হঠাৎ কেউ যখন বাংলায় কথা কয়ে ওঠে, আনমনেই পা থেমে যায়। চিড়িয়াখানায় অনেক দিন আগে দেখা বন্দি সেই চিত্রল হরিণের মত কান খাড়া করে ফেলি, আরো খানিকটা কথা বলুক মানুষটা, আরও খানিকটা বাংলা না হয় শুনি। আমাদের প্রতিবেশী হলো একটা ছোট্ট শিশু-পার্ক। গাছ-গাছালি তেমন নেই, মাঝখানে অনেকগুলো দোলনা, বেয়ে বেয়ে উঠে যাবার বা গড়িয়ে নেমে যাবার ছেলেমানুষী কাঠামো সব। প্রতি বিকেলে অনেকগুলো মানবশিশু, ঠিক যেন স্বর্গ থেকেই নেমে আসে এখানটায়। বাথটাবের ওপরে বহু যত্নে উঠে দাঁড়িয়ে একদিন আবিষ্কার করি, সেই স্বর্গছেড়াদের কেউ কেউ আধো আধো বোলে বাংলায় অভিমান করে তাদের বাবা-মায়ের সাথে। আমার আড়িপাতার হার দিনে দিনে বেড়ে যায়, ছোট্ট আর আদুরে সেই মুখগুলো থেকে মধু মাখা বাংলা শুনে শুনে মন জুড়িয়ে যায়। বাড়ির পাশের পাঠাগার খুব অল্প সময়েই আমার প্রিয় জায়গা হয়ে দাঁড়ায়। সময়ের দারুণ টানাটানি, তবু সপ্তাহে একদিন গিয়

প্রিয় বাংলাদেশ ২

চাঁদের শেষ মাথায় কেবলই ধূসর আর ধূলো তার প্রান্ত রেখায় দাঁড়িয়ে- ঘামে-কালো-চকচকে বাবা আমার- গলায় মুয়াজ্জিনের আবেগ ভিড়িয়ে এনে মেঘস্বরে ডেকে ওঠে- কানুরে, বাপ, ও কানুউহ-- আমি চকিতেই হাতের তালুতে লুকিয়ে ফেলি আমার অলৌকিক ইস্টিমার। আসাদের ছেঁড়া-ফাঁড়া শার্টের বুকপকেটে ডুবে ডুবে উঁকি দেয়- দুএকটা জোনাকি। বিলের পাথুরে কালো পানির উপর দিয়ে তরতর আমি ছুটে গিয়ে হাঁকি- বাবাআ। স্বপ্নদৃশ্যের জাল এভাবেই রোজ ছিঁড়ে গেলে, শোল মাছের মরণ যন্ত্রণায় আমিও জেগে উঠি শয্যায়। বুকের যে পাশটায় ফাঁকা ফাঁকা লাগে, আমাকে আশ্বস্ত করে সেখানেই শুয়ে থাকে বাবার পিঠে আঁকা একফালি সবুজ মানচিত্র। ১৪/০৮/০৮ ( কোন সিরিজ টিরিজ না, অনেক আগে প্রিয় বাংলাদেশ নামে আরেকটা কবিতা লেখার চেষ্টা করেছিলাম, এ কারণেই এবারেরটা পরে ২ যুক্ত হলো। আমি অবশ্য এই নম্বর-টম্বর নিয়ে খুব একটা ভাবিত নই, আজ অনেক দিনের বাদে আমার সেই প্রিয় কাকের ঘাড়ে চড়ে একটা কবিতা শেষমেষ আমার কাছ এসে পড়েছে, আমি তাতেই খুশি! )

ঝুম্পার সাথে দেখা-

আগে থেকে কোন রকম প্ল্যানিং ছিলো না, অন্য কি একটা বই খুঁজতে গিয়ে এখানকার লোকাল লাইব্রেরীর কোন একটা শেলফে একদম হঠাৎই চোখে পড়লো বইটা। ইনটারপ্রেটার অব মেলাডিজ। বইটার নাম শুনেছি আগে, কিন্তু আমার তখন অন্য লেখকের বই শেষ করার চিন্তা মাথায়, তাই নিবো না ঠিক করে দরকারী বইটা সাথে নিয়ে লাইব্রেরী থেকে বেরিয়ে পার্কিং-এ পৌঁছে যাই, তারপর হঠাৎ কি মনে করে আবার ওখান থেকে ফিরে এসে বইটা ইস্যু করে ফেলি। ঝুম্পার সাথে শেষ মেষ আমার দেখা হলো এইরকম আচমকাই, নেহায়েত অনিচ্ছায়, অনেকটা দুইটা কিনলে একটা ফাউয়ের স্টাইলে দোকান থেকে তুলে নেয়ার মত। তো, এই পরিচয়টা নিবিঢ় হতে খুব বেশি সময় লাগলো না। একটু অবশ্য লাগলো। আমি শুরুতেই বইটা পড়লাম না। অন্য যে বইটা পড়ছিলাম, ওটা বেশ দীর্ঘ একটা উপন্যাস। পড়তে পড়তে ক্লান্তি চলে এলে আমি মাঝে মাঝেই অন্য লেখায় ডুব দেই। এরকম অনেকবার হয়েছে যে একসাথে আমি দুই বা তিনটে বইও পড়া শুরু করেছি, এবং প্রায় একই সাথে সবগুলো পড়া শেষ করেছি। আমার তাতে কোন সমস্যা হয় না। অনেক উল্টা পাল্টাও করি। মাঝে একবার ইলিয়াসের নেশায় পেয়েছিলো, তো পড়তে পড়তে মাথা মাঝে মাঝে ভোঁ ভোঁ করতো, তখন হাল্কা কি পড়া যায় ভাবতে ভাবতে টেনে ন

সামহোয়্যারইনব্লগে দেয়া সাক্ষাৎকার

Image
কনফুসিয়াসের সাথে করি বাংলায় চিৎকার ১৯ শে মে, ২০০৭ দুপুর ১:২৩ ".... করি বাংলায় চিৎকার..." না লিখে "বাংলায় চিৎকার করি" লেখা যেত। কিন্তু কনফুসিয়াস যখন লেখে তখন শব্দ-দ্যোতনা তৈরী হয়, হৃদয় খাবলে খায়, আর এমনি করে বাংলাব্লগস্ফিয়ারে "করি বাংলায় চিৎকার" বাংলাভাষার ব্রান্ড এম্বেসেডার হয়ে ওঠে। বুকফাঁটা চিৎকারে মাতম তুলে জানায়, বাংলায়, হ্যা বাংলায় আমি হাসি, কাঁদি, চিৎকার করি! এ মাতম ছুয়ে যায় জৈষ্ঠ্যের কৃষ্ণচুড়া, লালে সয়লাব হয়ে ওঠে চেরিরকুঞ্জে, হয় রাধাচুড়ার উৎসব, বরফের বুকে বাংলায় শ্যামলিমা, উহ! এই একটা উচ্চারণ কি স্ফুর্তি তোলে প্রবাসে, পরবাসে আর দেশের মাটিতে! আগুণের পরশমনিতে বিখ্যাত কনফুসিয়াসের আবির্ভাব তাই নিঃসন্দেহে একটা মাইলফলক। জন্মযুদ্ধ, বীক্ষণসহ অসংখ্য বাংলা প্লাটফর্ম তৈরীর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত তিনি। তার ব্লগের লেখায় একটা নির্মল টলমলে স্ফটিকস্বচ্ছতা রয়েছে। আজকে তার জীবনের ভাবনা আর বিশ্লেষনে আমরা অবগাহন করবো। লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড):  আগুনের পরশমনি ,  আগুনের পরশমনি ,  আগুনের পরশমনি আগুনের পরশমনি  ; সর্বশেষ এডিট : ১৯ শ