Posts

গ্রামায়নের ইতিকথা | ইমতিয়ার শামীম

Image
  উপন্যাস ভেবে পড়া শুরু করি, শুরুর তিন অধ্যায় পড়া হয়ে গেলে প্রথম চোখে পড়ে যে নতুন চরিত্ররা এসে হাজির হচ্ছে প্রতিবার। চরিত্র নতুন, কিন্তু গল্পগুলো যেন অভিন্ন মানুষদের, কেমন একের ওপর আরেক ছড়িয়ে ছিটিয়ে এলিয়ে বিছিয়ে আছে। বইয়ের শেষ পাতায় গিয়ে জানলাম ছয়টা ভিন্ন গল্প এগুলো। এবারে ফ্ল্যাপে পড়া কথাটার মানে বুঝতে পারলাম, 'উপন্যাসের আদলে...কথকতার এক নতুন বিন্যাস...,যা একই সাথে ছোটগল্প আবার উপন্যাসের বিশাল মাত্রাকেও ছুঁয়ে যায়।' 'আমরা হেঁটেছি যারা'-র পরে আমার পড়া ইমতিয়ার শামীমের লেখা মাত্রই দ্বিতীয় বই এটা, কিন্তু সর্বশেষ যে নয়, এ কথা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি। পাঠক হিসেবে ব্যাপারটা ভীষণ আনন্দেরও বটে।

মির্জা গালিবের গজল

Image
  অনুবাদক জাভেদ হুসেনের লেখা ভূমিকা গালিবের জন্যে ভালোবাসায় পরিপূর্ণ। কবি মির্জা গালিবকে সেখানে খুব কাছের, খুব চেনা একজন মানুষ বলে মনে হয়। অনেকগুলি উর্দু আর অল্প কিছু ফারসি গজলের অনুবাদ রয়েছে এই বইয়ে। পড়তে গিয়ে টের পেলাম, উর্দু আসলে কানে শুনেই অভ্যস্ত আমি। বাংলা হরফে উর্দু পড়তে যাওয়া খুব সহজ কাজ নয়। এমনকি উচ্চারণ করে পড়ার চেষ্টা করলাম যখন, তখন সেগুলোকে চেনা কোনো ভাষা বলে মনে না হওয়ায় ক্ষান্ত দিলাম দ্রুত। বরং বাংলা অনুবাদগুলো মন দিয়ে পড়া হলো বেশি। কী সুন্দর, সহজ, সরল অনুভব সেগুলোয়। কখনও গালিব সেখানে অনুরোধ করছে, মরে গেলে যেন প্রিয়ার গলিতে তাকে কবর দেয়া না হয়। লোকে গালিবকে দেখতে এসে তার প্রিয়ার বাড়ির খোঁজ পেয়ে যাবে, এটা তার মরার পরেও সহ্য হবে না। অথবা অন্য এক জায়গায় গালিব খোদাকে বলছে, কেন তুমি আমাকে স্বর্গ থেকে বিদায় করে দিলে? করেছই যখন, দুনিয়াতে অনেক কাজ আমার, এখন অপেক্ষা করো, শেষ না করে আসছি না। মৃত্যু বিলম্বিত করার কী দারুণ বুদ্ধি! প্রথমা প্রকাশনীর বইগুলোয় যত্ন টের পাওয়া যায়। সুন্দর বাঁধাই, প্রচ্ছদ, ভেতরের অলংকরণ...। এরকম বই হাতে নিয়ে পড়তে ভালো লাগে।

গাইলে বৈরাগীর গীত গাইও

Image
  ডালে বসে থাকা চাতকী ময়নাকে আসগর আলী বলে, গাইতেই যদি হয় তো বৈরাগীর গীত গাও। প্রথম শুনিয়েছিলেন তপন চৌধুরী, প্রায় এক কোটি বছর আগে। সেদিন ইউটিউবে খুঁজতেই সেই অসাধারণ অ্যালবামটা পেয়ে গেলাম– মনে করো তুমি আমি। কোটি বছর আগে শুনলেও দেখা গেলো, সবগুলো গানের অন্তত প্রথম কিছু লাইন এখনও মাথা থেকে বিদায় নেয়নি। বসে বসে পুরো অ্যালবাম টানা শোনা হলো আরেকবার। ময়নার গানটা খুব প্রিয় ছিলো, যদিও পুরোটা মনে ছিলো না। এবারে শুনে টের পেলাম, শুরুতে যাকে বৈরাগী বলা হচ্ছে, সে কোনো অ্যাবস্ট্রাক্ট চরিত্র নয়। "কহে হীন আসগর আলী, সময় হইলে পরে, মাধব বৈরাগীর সনে, পরান বন্ধুয়ার সনে, মিলাই দিবো তোরে।" মাধব বৈরাগী নামের একজন মানুষ আসগর আলীর প্রাণের বন্ধু। বন্ধুর অপেক্ষায় থেকে অস্থির হয়ে ময়নাকে জিজ্ঞেস করে আসগর আলী, পূব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণ কোন দিক দিয়ে আসবে তাঁর বন্ধু, এখুনি জানানো হোক তাঁকে। আর বন্ধু যতক্ষণ নেই, ততক্ষণ ময়না যেন তাঁর বন্ধুর গানই গাইতে থাকে। এক কোটি বছর পরে গানটা নতুন করে আবার ভালো লাগলো!

থার্ড পারসন

  বর্ডারস, বুক ডিপোজিটরির পরে সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় বই কেনার সাইট বুকটোপিয়ারও বিদায় ঘন্টা বেজে গিয়েছিলো। ডিজিডিরেক্ট নামে একটা কোম্পানি হঠাৎ কিনে নেয়ায় এবারের মত বেঁচে গেলো তারা, আবার বিক্রি শুরু হবে শীঘ্রই। এই দেশে বইয়ের দোকানের এই দুরবস্থা দেখে সচেতন নাগরিক হিসেবে দু:খবিলাসী একটা স্ট্যাটাস ড্রাফট করার পরে জনৈক পাঠক হিসেব করে দেখে, বাংলা বইগুলো বাদে তার কেনা শেষ ২০টা বইয়ের মধ্যে মাত্র একটা সে কিনেছে বুকটোপিয়া থেকে, বাকি সব অ্যামাজন থেকে কেনা। তার মানে, স্থানীয় এই বই দোকানটির নেই হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার পেছনে তারও ভূমিকা আছে। দু:খবিলাসী ড্রাফট মুছে ফেলে বুদ্ধিমানের মত এবার সে থার্ড পার্সনে একটা স্ট্যাটাস লিখে ফেললো।

অ্যানিমেল ফার্ম | জর্জ অরওয়েল

Image
  ‘দ্য নভেল কিউর’ নামে ইন্টারেস্টিং একটা বই আছে। বইয়ের লেখকেরা বলছেন, মানুষের মন স্বভাবতই বিভিন্ন রকম অবস্থায় থাকে। কখনও আনন্দে থাকে, কখনও বিক্ষুব্ধ, কখনও দু:খে আকুল, কখনও চিন্তাক্লিষ্ট। তো, এই পরিস্থিতির সাথে মানানসই কিছু বই রয়েছে, যেগুলো পড়লে -লেখকদের অভিমত- অস্থির মন কিছুটা শান্ত হবে, আনন্দ দীর্ঘায়িত হবে, আর বেদনায় থাকলে সেটা উপশম হবারও সম্ভাবনা রয়েছে। এই দাবি মিথ্যা নয়, বই মানুষ কিছুটা এসব কারণেই পড়ে। তবে এরকম ওষুধের প্রেসক্রিপশনের মত বই সাজেশনের ব্যাপারটা অপ্রচলিত। আবার অপ্রচলিত হলেও, আমার ধারণা এরকম একটা অদৃশ্য তালিকা প্রায় সব পাঠকেরই থাকে। মন খারাপ হলে বহু পাঠকই জেনে বা না-জেনে ঠিকই নির্দিষ্ট কোনো বই টেনে নিয়ে পড়া শুরু করে দেন। মনে মনে এরকম একটা তালিকা আমার নিজেরও রয়েছে। দ্য নভেল কিউর-এ বইয়ের নাম দেয়া আছে ৭৫১টা, আমার তালিকা অবশ্য তার তুলনায় অনেক ছোট। যাই হোক, গত জুলাই ও অগাস্টের প্রায় নির্ঘুম রাত ও অস্থির দিনগুলোর পরে স্বভাবতই সেই লিস্ট থেকে আবারও পড়া হলো বহু পুরোনো 'অ্যানিমেল ফার্ম'। এ বইটা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। ইতিহাস নাকি ঘুরে ঘুরে আসে। আর কিছু বই ইতিহাসের চেয়

সিসিফাস শ্রম | আনিসুর রহমান

Image
নয়টি ছোটগল্প রয়েছে এই বইয়ে। তবে , বইটা শেষ করে মনে হলো , লেখার ধরনের কারণে সেগুলোকে আলাদা আলাদা গল্প হিসেবে চিনে নেওয়া সহজ হয় না। অ্যাবস্ট্রাক্ট টোনে লেখা গদ্য , সাথে উচ্চমাত্রার মেটাফর। অনেক , অনেকগুলো দৃশ্যকল্প দেখতে পাওয়া যায় বইটা পড়তে পড়তে। আলাদা করে সেগুলো বেশ সুন্দর , যত্ন নিয়ে ' আঁকা ' বোঝা যায়। তবে ছবিগুলোর শক্ত কোনো মালা গেঁথে ওঠা থেকে কিছুটা যেন দূরত্ব রয়ে গেছে। যে - জগতের কথা বলেছেন লেখক , সেটি আমাদের চেনা নাকি অচেনা , এই দ্বিধা কাটে না সহজে। কিছু উপমার ব্যবহার চমকে দিয়েছে , একদম নতুন এই দৃশ্যগুলো। ভালো লেগেছে সেই নতুনত্ব। তবে পাঠক হিসেবে চরিত্রগুলোর একটা দৈহিক কাঠামো এঁকে নেয়া সহজ হয়নি। বিষণ্ণ   দার্শনিকদের মনোলগ ছাড়িয়ে যদি কিছু গল্পের শরীর খুঁজে পেতাম , হয়ত আরও ভালো লাগতো।  

আর জনমে | লুনা রুশদী

Image
  সকালের অফিসগামী ট্রেনে বসে পড়া শুরু করলাম লুনা রুশদীর 'আর জনমে'। রেলগাড়ির মতই গতিময়, ঝরঝরে লেখা। ভাল লেগেছে পড়তে। কোথাও আটকালো না একদম। প্রথম দেখাতেই তাবাসসুমকে চেনা গেলো। মেলবোর্নের শহরের রাস্তায়, বিভিন্ন অফিসে, শান্ত-নিরিবিলি সাবার্বের বিভিন্ন বাড়িতে থাকেন এরকম মানুষেরা। লুনা রুশদীর সাবলীল বর্ণনায় খুব স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে তাদের গল্প। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সংলাপগুলো বাস্তব লেগেছে, কথার পিঠে বলা তাদের কথাগুলো, উপভোগ্য। ফিকশন-পাঠক হিশেবে একটাই অভিযোগ, বাস্তব জগতের অনেক বেশি রেফারেন্সের কারণে গল্পে ফিকশন কমে গেছে কিছু জায়গায়। বরং ডকু ফিকশন ধরনের ভাব এসেছে একটা সব মিলে। কিছু কিছু অনুভূতির বর্ণনা খুব সুন্দর দিয়েছেন লেখক। অনেক দিনের প্রতিবেশীর বাড়ি ধীরে ধীরে নাই হয়ে যাওয়া, বা তৃষ্ণার্ত পাখিটার ভাঙা ঠোঁট, অথবা যেখানে লিখেছেন, মানুষের অস্তিত্বের বাতাস হয়ে যাওয়ার কথা, এগুলোর গভীরতা অনেক। চাচাত বোনেদের সাথে সম্পর্কের রসায়ন, চাচীর সাথেও, ছবির মত পরিষ্কার এসেছে। এই শহরের নানা জায়গার নাম, ট্রাম-বাস-ট্রেন, সব মিলে খুব চেনা পরিচিত লেগেছে বইটার সবকিছু। বইয়ের ছবিটা আমার অফিসের জানালায় দাঁড়

সুনীল এবং কয়েকজন | স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়

Image
অনেক দেরিতে হলেও এ-বছর বইমেলায় অর্ডার করা বইয়ের কয়েকটি অবশেষে হাতে এসে পৌঁছেছে। আর সেগুলোর মধ্য থেকে সবার আগে পড়ে শেষ করলাম এই বইটি। 'সুনীল গাঙ্গুলীর দিস্তে দিস্তে লেখা'র সাথে পরিচয় থাকলে, তাঁর জীবনের অনেক কিছুই পাঠকের জানা থাকার কথা। তারপরেও খুব আগ্রহ নিয়ে বইটি পড়লাম। মিষ্টি কিছু স্মৃতিচারণ, কিছুটা এলোমেলো, এবং অনেকটা অসম্পূর্ণই বলা যায়। তবু ভালো লাগলো পড়ে যেতে, একটা ঘষা কাচের মধ্য দিয়ে যেন দেখে যাওয়া, সুনীল ও তাঁর আশেপাশের কিছু মানুষকে। তাঁদের প্রথম পরিচয়, সংসার শুরুর প্রথমদিকের দিনগুলো, নানা ভূমিকায় সুনীলের অবিরাম লেখা চালিয়ে যাওয়ার গল্প কিছুটা জানা গেলো স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রায় মৃদুভাষী কলমে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় ছাপা হয়েছিল বইয়ের লেখাগুলো, সেগুলোর তারিখ দেয়া থাকলে ভাল হতো। বইয়ের মাঝে অনেকগুলো দেখা না-দেখা ছবি ছাপা আছে, তবে সেগুলোর ক্যাপশন নেই। পুরো বইয়ের ছাপা ও বাঁধাইয়ের যত্নের সাথে, সম্পাদনার এই খামতিটুকু বেমানান। তবে একদম শেষে এসে লেখকের পুত্র শৌভিকের ছোট্ট লেখাটা অপ্রত্যাশিত ছিল, 'বাবা' সুনীলের টুকরো কিন্তু খুব আপন একটা ছবিও পাওয়া গেলো তাতে।

নাইন স্টোরিজ | জে ডি স্যালিঞ্জার

Image
ফ্লু ভ্যাকসিনের অ্যাপয়েন্টমেন্ট, কেমিস্ট শপে নিজের নাম লিখিয়ে মাঝের একটা আইলে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি। ফ্লু ভ্যাকসিন নামে নিরীহ শোনালেও আদতে তা নয়; প্রতিবারই আমাকে অন্তত দিন চারেক ভোগায়। খাল কেটে কুমির আনার মত, ভ্যাকসিন নিয়ে অবশ্যম্ভাবী জ্বর ডেকে আনি আমি। অপেক্ষা করতে করতে ফার্মাসিস্টদের সন্দেহের চোখে দেখছি। আজ কার হাত দিয়ে এই দুর্যোগ ডেকে আনছি নিজের ওপরে, বোঝার চেষ্টা করছি। কিছুক্ষণ পরেই অবশ্য এই গুরুদায়িত্ব থেকে নিজেকে অব্যাহতি দিলাম। হাতে ছিল নাইন স্টোরিজ, মুখ ডুবিয়ে পড়া শুরু করে দিলাম সেটা। গভীর মনোযোগে পড়ছি, হঠাৎ খেয়াল করে দেখি ফার্মাসিস্ট এসে আমার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি চোখ ছোট করে অবাক হয়ে তাকালাম। কী ব্যাপার? ফার্মাসিস্ট হাসিমুখে জানালো, সে নাকি আমার নাম ধরে ডেকেছে কাউন্টার থেকে, আমি শুনতে পাইনি। আমার ভ্যাকসিন নেয়ার পালা এখন। আমরা উল্টো ঘুরে হাঁটা দিলাম। সে হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো, এটা কি সেই স্যালিঞ্জার, ক্যাচার ইন দ্য রাই? আমার মুখ সাথে সাথে উজ্জ্বল হয়ে গেলো। হ্যাঁ হ্যাঁ, সে-ই। তুমি পড়েছ সেটা? তারপরের কিছু সময় আমরা হোল্ডেন কফিল্ড, তার বোন, আর তার বন্ধুদের নিয়ে আলাপ করলাম। উৎসাহ কা

আমি এবং আমরা -

Image
  আমি এবং আমরা -  আজ সকালে ঘুম ভাঙার পরে, হঠাৎ তার কথা মনে পড়ে গেলো। আর তখন, মন খারাপ হলো খুব। খানিক বাদে, অন্য একটা মন খারাপের তলায়, সেটা চাপা পড়ে গেলো। এভাবেই, এক মন খারাপ, আরেক মন খারাপের হাত থেকে আমাকে সবসময় আগলে আগলে রাখে। ২৪/০৫/২৪