ঋতুপর্ণ ঘোষ: চলচ্চিত্র, জীবন ও সাক্ষাৎকার | নাফিস সাদিক
রেইনকোট সিনেমার বাংলা স্ক্রিনপ্লে খুঁজতে গিয়ে ঋতুপর্ণকে নিয়ে লেখা এই বইটা হাতে তুলে নেয়া হলো। তার আগে পরিচয় হলো এর লেখক নাফিস সাদিকের সাথেও। আর ভাগ্যিস, হয়েছিল! দারুণ কিছু তথ্য জানা হলো ওঁর সূত্রে। সেটাই আরও বিশদে জানলাম বইটা পড়ে।
ও’ হেনরির গল্প থেকে রেইনকোটের অস্থিমজ্জা নেয়া, এমনটাই জানতাম। দেখা গেল, এটা হয়ত পুরোপুরি সত্যি নয়। মনোজ বসুর একটা গল্প আছে, নাম প্রতিহিংসা। সেটাও পড়লাম। মিলিয়ে দেখলে, রেইনকোট যে আসলে পুরোপুরি সেটার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে, সে-বিষয়ে কোনো সন্দেহ থাকে না। সেই গল্পের চরিত্র, নামের মিল, এবং রেইনকোটের উল্লেখ, ঘটনার ক্রম, এই সব কিছুই সিনেমাটার সাথে নব্বই ভাগ মিলে যায়। তাহলে ঋতুপর্ণ কোথাও মনোজ বসুকে কৃতিত্ব দিলেন না কেন?তবে এ-কথাও সত্যি, মনোজ বসুর গল্প পড়ে আমার মনে হয়েছে, সেটা সম্ভবত ও’ হেনরির গল্পের অনুপ্রেরণা থেকে লেখা। সাহিত্যের ভাষায় যেটাকে বলে ইন্টারটেক্সচুয়ালিটি। তবে তারপরেও ঋতুপর্ণ-র বসুকে কৃতিত্ব না দেয়ার হিসাব আসলে মেলে না। এই রহস্য আর কখনো হয়ত জানাও হবে না।
রেইনকোট গুটিয়ে রাখার পরে এবার বইটা শুরু থেকে পড়া ধরলাম।
নাফিস সাদিকের বাংলা খুব সুন্দর, শব্দচয়ন সাবলীল। ইদানিং সবার বাংলা পড়ে আরাম পাই না, এই বইটা পড়ে তা পেলাম। লেখক নিজে যে অত্যন্ত মনোযোগী পাঠক, সেটা বোঝা যায় সহজেই।
ঋতুপর্ণ ঘোষকে নিয়ে এর আগে আস্ত একটা জীবনীমূলক বই আর কেউ হয়ত লেখেনি, সেদিক দিয়েও বইটা অনন্য। তাঁর অনেকগুলো সিনেমা নিয়ে সাবলীল আলাপ রয়েছে এতে। কিছু ইংরেজি সাক্ষাৎকারের বাংলা করে এখানে রাখা হয়েছে। আগে দেখিনি, এমন বেশ কিছু ফটোগ্রাফ। আর একদম শেষে গিয়ে দেখি, ঋতুপর্ণ-র লেখা বিভিন্ন গানের লিরিকও তুলে দেয়া হয়েছে বইয়ে। খুব ভালো লাগলো দেখে। মেঘপিয়নের ব্যাগ অথবা মথুরা নগরপতি গানগুলো খুব প্রিয় আমার অনেক আগে থেকেই।
বাতিঘরের বইগুলোয় যত্নের ছাপ সবসময়ই পাই। এটাও ব্যতিক্রম নয়। দৃষ্টিনন্দন ছাপা, বাঁধাইও।
এই বইমেলায় কেনার জন্যে বইয়ের তালিকা করছেন যারা, এই বইটা সেখানে যুক্ত করতে পারেন নির্দ্বিধায়।
আর শেষ খবর, রেইনকোটের স্ক্রিনপ্লে এখনও পাইনি। তবে সেটার একটা অডিও ভার্সন খুঁজে দিয়েছেন নাফিস সাদিক। তার জন্যেও তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আপাতত সেটা দিয়েই কাজ চলবে।