সংলাপ | লাতিন আমেরিকান উপন্যাস নিয়ে | অনুবাদ - রফিক-উম-মুনীর চৌধুরী


 

দৃশ্যটা মাথায় আনতে অবশ্য বেশি বেগ পেতে হলো না। একজন ভদ্রলোক হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছেন। আর সামনে দাঁড়ানো অপর ভদ্রলোক সপাটে তাঁকে ঘুষি চালালেন। 

ক্রিস রক আর উইল স্মিথের কল্যাণে এই দৃশ্য অবশ্য আমাদেরকে কল্পনা করে নিতে হয় না আর। 

যদিও আমি যে দৃশ্যের কথা বলছি, সেটা প্রায় পঞ্চাশ বছর আগের ঘটনা। এই দৃশ্যের মানুষদের একজন, গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস—দ্য প্যারিস রিভিউ-এ যেভাবে বলা—দুহাত মেলে বন্ধুকে আলিঙ্গনের জন্যে সামনে যেতেই তাঁর বন্ধু মারিয়ো বার্গাস ইয়োসা তাঁর ডান চোখ বরাবর মারলেন এক ঘুষি। মার্কেসের চশমা ভেঙ্গে একাকার, সাথে চোখে পড়লো কালশিটে। তাঁদের বন্ধুত্বের ইতিও ঘটলো সেখানেই। আর ঘুষির কারণ? এটা আর না বলি, ইচ্ছে থাকলে নিজেই খুঁজে নিন। :) 


এই ঘটনা কিংবা দুর্ঘটনার বছর আটেক আগে, দুই বন্ধু পেরুর এক বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তনে আলাপে বসেছিলেন, তৎকালীন ল্যাটিন অ্যামেরিকার সাহিত্য নিয়ে কথা বলার জন্যে। সেটিরই অনুবাদ এই বইটা, স্প্যানিশ থেকে সরাসরি, করেছেন রফিক-উম-মুনীর চৌধুরী। 

খুব ছোট একটা বই। শনিবারের দুপুরে প্রায় এক বসাতেই পড়ে ফেললাম। যদিও শুরুতে দীর্ঘ সব বাক্যে দাঁত বসাতে কিছু সমস্যা হচ্ছিলো, কিন্তু কয়েক পৃষ্ঠা যেতেই দেখি কখন যেন উঠে গিয়ে পেন্সিল নিয়ে এসে পাতায় পাতায় দাগ বসানো শুরু করে দিয়েছি! 

খুব ভালো লাগলো, সেই সময়ের তরুণ ও জনপ্রিয় দুই লেখকের আলাপ। খুব স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে তখনকার সময়ে হঠাৎ করে ল্যাটিন অ্যামেরিকার উপন্যাসগুলির জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ার পেছনের কারণ অনুসন্ধানের গল্প। এই আলাপে বার্গাস ইয়োসা ছিলেন মূলত প্রশ্নকারী, আর মার্কেস উত্তরদাতা, তবু অনেকগুলো প্রসঙ্গেই দুজনেরই পরিষ্কার মতামত জানা গেলো। বারবারই বোর্হেসের কথা এলো। কেমন করে বোর্হেসকে তেমন পছন্দ করেন না মার্কেস, কিন্তু প্রায় প্রতিদিনই তাঁর লেখা পড়তেন গল্প বলার  কৌশল জানতে। মার্কেসের বিখ্যাত সব বইয়ের পেছনের গল্প এলো কিছুটা। পড়ে অবাক হলাম, নিঃসঙ্গতার একশ বছর তিনি লেখা শুরু করেছিলেন ষোল বছর বয়সেই। কিন্তু লিখতে গিয়ে তাঁর মনে হলো, এই উপন্যাসটা ঠিকঠাক বলার জন্যে যে ভাষা প্রয়োজন, সেটা তাঁর কব্জায় নেই। অনেকটা তাঁর প্রস্তুতির জন্যেই নাকি প্রথম চারটি বই লিখেছিলেন। তারপরেই নাকি তিনি বুঝতে পারলেন কেমন হবে সেই উপন্যাস বলার কৌশল। 

সবচেয়ে ভালো লাগলো তাঁর এই কথাটা, যা লিখছি সেটা আগে নিজে বিশ্বাস করতে হবে, তবেই তা বিশ্বাসযোগ্য হবে পাঠকের। 

মাত্র ৬৪ পৃষ্ঠার এই বইটা প্রকাশ করেছে শুদ্ধস্বর, ২০১৪ এর ফেব্রুয়ারি মাসে। 

Popular posts from this blog

The Boy, the Mole, the Fox and the Horse | Charlie Mackesy

আরেকটিবার-

মধ্যাহ্নভোজ | উইলিয়াম সমারসেট মম্‌ | রূপান্তরঃ তারেক নূরুল হাসান