আমার প্রথম বই: আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
বাংলা সাহিত্যে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের জায়গা আমার কাছে এক নম্বর। তাঁর পরে কুড়ি পর্যন্ত আর কেউ নেই, বাকি সবার নম্বর শুরু একুশ থেকে।
লেখকের অগ্রন্থিত লেখার সংকলনে ‘আমার প্রথম বই’ নামের এই লেখাটি প্রথম পড়ি। এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ব্যক্তিগত রচনা শিরোনামের অংশটিতে।
এখানে তিনি লিখেছেন তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই ‘অন্য ঘরে অন্য স্বর’ নিয়ে। বইটির গল্পগুলো লেখাকালীন ভাবনার কথা খানিকটা এসেছে, তবে বেশি এসেছে সেটির বই হয়ে প্রকাশকালীন কর্মযজ্ঞের ঘটনাগুলো।
ইলিয়াসের গল্পের ঝিম ধরানো বর্ণনা-ভঙ্গি তাঁর অন্য গদ্যগুলোয় সাধারণত থাকে না, এখানেও তাই হয়েছে। তবে বাড়তি পাওনা হিসেবে এ লেখাটায় চলে এসেছে একটা আমুদে টোন।
অনেকটা মজলিশি ভঙ্গিতে তিনি বলে গেছেন বই প্রকাশের জন্যে প্রকাশকদের দরজায় দরজায় ঘোরার কথা, তাঁদের প্রত্যাখ্যানের কথা। তারপরে যখন প্রকাশক পেলেন, কেমন করে তাঁর সব বন্ধুরা ঝাঁপিয়ে পড়লো কম্পোজ থেকে প্রুফ দেখার লম্বা আয়োজনে। এই একটি লেখায়ই আমরা জেনে যাই, লেখকের অত্যাশ্চর্য বন্ধুতালিকার কথা, যেখানে ছিলেন কায়েস আহমেদ, শওকত আলীর মত লেখক, আবার একই গুরুত্ব নিয়ে ছিলেন পুরান ঢাকার রুটিওয়ালা কিংবা জগন্নাথ কলেজের লাইব্রেরির পিওন। এঁরা সবাই লেখকের প্রথম বই প্রকাশের খুশির সাথে কেমন করে একাত্ম বোধ করেছিলেন, পড়তে পড়তে ভীষণ ভালো লাগে।
পুরো লেখাটি কী ভেবে পড়ে রেকর্ড করে ফেলি। পছন্দের লেখা নিয়ে আমার অবশ্য এই বদভ্যাসটি আছে। লেখার ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে ব্যবহার করেছি আমার পুরনো একটি ভিডিও, ইলিয়াসের পোর্ট্রেইট আঁকার সময়ে যেটা রেকর্ড করা হয়েছিলো আগেই।
আমি কুমিল্লার মানুষ, উচ্চারণ আমার কোন কালেই ভালো নয়, আঁকাও যাচ্ছে তাই। আর লেখা নিয়ে বরং কিছু নাই বলি, কারণ স্বয়ং ইলিয়াস নিজের লেখা নিয়ে কয়েক জায়গায় বলেছেন, ‘আমার তোতলা কলম’, আর আমি তো কোন ছার।
তবু, এই সব কিছু মিলিয়ে, এই পুরো ব্যাপারটি আমার সবচেয়ে প্রিয় লেখক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসকে আমার শ্রদ্ধা হিসেবে নিবেদন করতে খুব ইচ্ছা হলো।