আজ ১২ ই মে ...
প্রতিবছর ১২ মে এলে মালা-র কথা মনে পড়ে। এই দিনে অঞ্জন দত্তের জীবন থেকে চলে গিয়েছিল মালা। ১২ মে তারিখটা দেখার সাথে সাথেই নিজে নিজে গুনগুন করে উঠি গানটা।
সাথে মনে পড়ে, আরও একটা জায়গার কথা। কুমিল্লার কোটবাড়িতে যেটার অবস্থান। পঞ্চাশ একরের মত জায়গা নিয়ে দেয়াল আর কাঁটাতার ঘেরা একটা এলাকা। ঠিক সিকি-শতাব্দী আগে সে জায়গা ছেড়ে চলে এসেছি, প্রথম কৈশোরের ছয়টি বছর সেখানে কাটিয়েছিলাম।
মাঝের এতগুলো বছর যখনি সে-জায়গাটার কথা ভেবেছি, কোনও একটা নির্দিষ্ট অনুভূতিতে সীমাবদ্ধ থাকেনি মনের অবস্থা। কখনও ভালোলাগার ছবিগুলো তুলে এনেছে স্মৃতি, কখনও মনে পড়েছে ছোট্ট শিশুমনের ওপরে অহেতুক চাপের বেদনার্ত সময়ের কথা। জীবনের বিভিন্ন সময়ে এসে রহস্যময় স্মৃতি কেন যেন আলো ফেলেছে ভিন্ন ভিন্ন ছবির ওপর। আনন্দ, বেদনা, মাধুর্য ও তিক্ততায় মেশানো অদ্ভুত একটা সময় সেটা, অদ্ভুত একটা জায়গা।
এবছর ১২ মে তে কী ভেবে টেনে নিলাম শাহাদুজ্জামানের এই বইটা। খাকি চত্বরের খোয়ারি।
বেশ কয়েকবছর আগেই কেনা, পড়া হয়ে উঠছিল না। কিন্তু পড়ে বেশ ভালো লাগল। অনেকদিন পরে যেন নিজস্ব স্মৃতির পুকুরে চট করে একটা ডুব দিয়ে এলাম। আমার মনে হয়, সেসব চত্বরে ছয় বছর কাটিয়ে আসা প্রতিটা কিশোর-কিশোরীই নিজেদের খুঁজে পাবে এই বইয়ে। অবশ্য, আরও একটা কথাও মনে হল। সেই ছয় বছরের জীবনের যা-কিছু নিজের মনে করি, নিজস্ব মনে করি, সে-সবই আসলে বহু ব্যবহৃত রিপ্রোডাক্টিভ ছাঁচ। আমাদের আগে বহু কিশোর ঠিক এভাবেই এই সময়টা এখানে কাটিয়ে গেছে, আমাদের পরে এখনও কাটিয়ে যাচ্ছে অনেকে। আমরা কেউই কোথাও খুব এক্সক্লুসিভ কিছু না আসলে, ঝমঝম করে মুষলধারে পড়তে থাকা বৃষ্টির একেকটা ক্ষুদ্র ফোঁটা আমরা।