শিমুল মুস্তাফার আবৃত্তিঃ মকবুল সমুদ্রে যাবে-
শিমুল মুস্তাফার প্রসঙ্গে কে যেন একবার বলেছিলেন, সম্ভবত লুৎফর রহমান রিটন, নাকি অন্য কেউ ভুলে গেছি, যে, এত ছোট্ট একটা শরীর থেকে এত জোরালো শব্দ কেমন করে বের হয় ভাবতেই অবাক লাগে!
গানের মতই আবৃত্তি বিষয়ক কোন জ্ঞান নাই আমার। শুনে শুনেই যতটুকু বুঝি সেটুকুই, মানে হলো, শোনার জন্যে তৈরি দু'খান কানের কল্যাণে বুঝবার জন্যে তৈরি একটা প্রাণ পেয়ে গেছি আমি, সেটাই ভরসা!
আবৃত্তির জন্যে পাগল আরো অনেক আগে থেকেই। আমি আর আমার পিঠাপিঠি ছোটমামা একসাথে বড় হয়েছি। আমি যখন সেভেন বা এইটে, ঐ সময় ওনার মনে অনুরাগের আবির্ভাব হয়েছিলো- তখন তিনি সারাদিন আবৃত্তি শুনতেন। মাহিদুল ইসলাম আর শমী কায়সারের বিনাশ ও বিন্যাসে শুনতে শুনতে প্রায় মুখস্খ হয়ে গেছিলো- আমার আবৃত্তি-প্রেমও আসলে তখন থেকেই।
পরবর্তিতে কার্জন হলের ছাত্র হবার সুবাদে টি.এস.সি যখন আমার সেকেন্ড হোম, তখন অনেকগুলো আবৃত্তি সংগঠনকে কাছ থেকে দেখেছি, অনেকগুলো প্রোগ্রামে গিয়েছি। ঐ সব আবৃত্তি সংগঠন গুলার প্র্যাকটিসে যাওয়াটা আমার কাছে ভীষন লোভনীয় লাগতো- নিজে যদিও কখনো আবৃত্তি করি নাই কিন্তু পাশে থেকে শুনেও শান্তি লাগতো!
তখুনি টের পেয়েছি যে প্রতিষ্ঠিত অনেক আবৃত্তিকারের চেয়েও আসলে ঐসব ক্ষুদ্্র সংগঠনের অনেক অখ্যাত ছেলে-মেয়ের আবৃত্তি অনেক বেশি বলিষ্ঠ্য।
বিপ্লব মজুমদার এরকমই একজন। এরকম অসাধারণ আবৃত্তি আমি আর কোথাও শুনি নি। তিনি অবশ্য বিখ্যাত ছিলেন তার প্যাঁচ নামক রম্য-আবৃত্তির জন্যে। অন্যজন হলেন জগজ্জীবন জয়। জীবনানন্দের কবিতা যেরকম অসাধারণ, তেমনি কঠিন হলো সেগুলোকে আবৃত্তিতে সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা, এই কাজটা জগজ্জীবন জয়কে খুব ভালোভাবে করতে দেখতাম।
ভালো লাগতো জাহিদ হাসানের আবৃত্তি, মাসুদ সেজান মোটামুটি। নুসরাত লাবণীও অসাধারণ।
ঐসব প্র্যাকটিসগুলোয় বিনা বাধায় থাকতে দিবে, শুধু এই লোভে রোদ বৃষ্টি ঝড় মাথায় করে নিয়ে কতবার যে ওদের নানা প্রোগ্রামের টিকেট বিক্রি করে দিয়েছি তার কোন হিসেব নেই!
একটা প্রোগ্রামের কথা মনে পড়ে, তখন অপারেশান ক্লিন হার্ট চলছিলো বোধহয়। রাতের বেলা আবৃত্তির প্রোগ্রামে আমরা সম্ভবত রাশান কালচারাল সেন্টারে। আহকামউল্লাহ এসে একটা অসাধারণ প্রতিবাদী কবিতা আবৃত্তি করে স্টেজ থেকে নামলেন, তার খানিকক্ষণ পর খবর পেলাম যৌথ বাহিনির হাতে তিনি গ্রেফতার হয়েছেন। ভীষন মন খারাপ নিয়ে হলে ফিরেছিলাম সেদিন।
টি.এস.সি তে মাঝে মাঝেই মুক্ত অনুষ্ঠান হতো আবৃত্তির। ঐ সব অনুষ্ঠানের কল্যাণেই জেনেছি, বিনাশ ও বিন্যাসেই আসলে মাহিদুল ইসলামের শ্রেষ্ঠ আবৃত্তি নয়, তারচেয়েও হাজার গুণ বেশি ভালো আবৃত্তি তাঁর- আমার বন্ধু নিরঞ্জন অথবা নূরালদীন!
এরকমই একটা মুক্ত অনুষ্ঠানের গল্প করেছিলো আমার বন্ধু কামরুল। শুনে ভীষন মজা পেয়েছিলাম। মঞ্চে আবৃত্তি করছিলেন শিমুল মুস্তাফা। সম্ভবত কেউ কথা রাখেনি বা ওরকমই কোন কমন কবিতা। মজা হচ্ছে, সেই আবৃত্তির সাথে সাথে বাউন্ডারির বাইরে দাঁড়িয়ে একটা টোকাই হাত-পা ছুঁড়ে ভীষণ নাচছে। আবৃত্তির সাথে কোন সঙ্গতি নেই, বা আবৃত্তির সাথে মানুষ নাচে এরকম উদ্ভট ধারণাই বা সে কোথায় পেল কে জানে, কিন্তু তবু সে নাচছে। শিমুল আবৃত্তির ফাঁকে ফাঁকে সেটা খেয়াল করলেন। একসময় আব ৃত্তি শেষ হলো, পরবর্তি কবিতা আবৃত্তির শুরুতে হঠাৎ শিমুল সেই টোকাইয়ের দিকে তাকিয়ে মাইকে বলে উঠলেন, “ এটা কিন্তু নাচের কবিতা নয়। তুই এবার খবরদার নাচবি না!'' টোকাই ভীষন লজ্জা পেয়ে কাঁচুমাচু মুখ করে টিএসসি ছেড়ে দৌড়ে পালালো!
শিমুলের আবৃত্তি আমার বেশ ভালো লাগে। এর মাঝে দুএকটা ভীষন প্রিয়! সেরকমই একটা হলো- মকবুল সমুদ্রে যাবে। কবিতাটি কার জানা নেই, ভাবেসাবে মনে হয় সৈয়দ শামসুল হকের হবে বোধহয়, কিন্তু জাস্ট অসাধারন একটা কবিতা। গায়ে কাঁটা দিয়ে যখন শিমুল তাঁর উদাত্ত গলায় পাকিস্তানী সেনাদের নৌকার উদ্দেশ্য বলে ওঠেন, আল্লাহু আকবর,ডুবি যা ডুবি যা ডুবি যা, বদর বদর ক, গাজী গাজী ক, হালার পুত হালারা ডুবি যা ডুবি যা, বাইনচোত ডুবি যা!!
মার্চ মাসের আগুন ঝরা দিনে তাই সহব্লগারদের জন্যে তুলে দিলাম শিমুল মুস্তাফার আবৃত্তিতে- মকবুল সমুদ্রে যাবে!
-----------
লেখাটি সামহোয়্যারে পোষ্টানর পরে অমি রহমান পিয়াল জানালেন- কবিতাটি মণিভূষণ ভট্টাচার্য্যের লেখা, নাম সমুদ্রে যাবে।
ধন্যবয়াদ পিয়াল ভাইকে।
গানের মতই আবৃত্তি বিষয়ক কোন জ্ঞান নাই আমার। শুনে শুনেই যতটুকু বুঝি সেটুকুই, মানে হলো, শোনার জন্যে তৈরি দু'খান কানের কল্যাণে বুঝবার জন্যে তৈরি একটা প্রাণ পেয়ে গেছি আমি, সেটাই ভরসা!
আবৃত্তির জন্যে পাগল আরো অনেক আগে থেকেই। আমি আর আমার পিঠাপিঠি ছোটমামা একসাথে বড় হয়েছি। আমি যখন সেভেন বা এইটে, ঐ সময় ওনার মনে অনুরাগের আবির্ভাব হয়েছিলো- তখন তিনি সারাদিন আবৃত্তি শুনতেন। মাহিদুল ইসলাম আর শমী কায়সারের বিনাশ ও বিন্যাসে শুনতে শুনতে প্রায় মুখস্খ হয়ে গেছিলো- আমার আবৃত্তি-প্রেমও আসলে তখন থেকেই।
পরবর্তিতে কার্জন হলের ছাত্র হবার সুবাদে টি.এস.সি যখন আমার সেকেন্ড হোম, তখন অনেকগুলো আবৃত্তি সংগঠনকে কাছ থেকে দেখেছি, অনেকগুলো প্রোগ্রামে গিয়েছি। ঐ সব আবৃত্তি সংগঠন গুলার প্র্যাকটিসে যাওয়াটা আমার কাছে ভীষন লোভনীয় লাগতো- নিজে যদিও কখনো আবৃত্তি করি নাই কিন্তু পাশে থেকে শুনেও শান্তি লাগতো!
তখুনি টের পেয়েছি যে প্রতিষ্ঠিত অনেক আবৃত্তিকারের চেয়েও আসলে ঐসব ক্ষুদ্্র সংগঠনের অনেক অখ্যাত ছেলে-মেয়ের আবৃত্তি অনেক বেশি বলিষ্ঠ্য।
বিপ্লব মজুমদার এরকমই একজন। এরকম অসাধারণ আবৃত্তি আমি আর কোথাও শুনি নি। তিনি অবশ্য বিখ্যাত ছিলেন তার প্যাঁচ নামক রম্য-আবৃত্তির জন্যে। অন্যজন হলেন জগজ্জীবন জয়। জীবনানন্দের কবিতা যেরকম অসাধারণ, তেমনি কঠিন হলো সেগুলোকে আবৃত্তিতে সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা, এই কাজটা জগজ্জীবন জয়কে খুব ভালোভাবে করতে দেখতাম।
ভালো লাগতো জাহিদ হাসানের আবৃত্তি, মাসুদ সেজান মোটামুটি। নুসরাত লাবণীও অসাধারণ।
ঐসব প্র্যাকটিসগুলোয় বিনা বাধায় থাকতে দিবে, শুধু এই লোভে রোদ বৃষ্টি ঝড় মাথায় করে নিয়ে কতবার যে ওদের নানা প্রোগ্রামের টিকেট বিক্রি করে দিয়েছি তার কোন হিসেব নেই!
একটা প্রোগ্রামের কথা মনে পড়ে, তখন অপারেশান ক্লিন হার্ট চলছিলো বোধহয়। রাতের বেলা আবৃত্তির প্রোগ্রামে আমরা সম্ভবত রাশান কালচারাল সেন্টারে। আহকামউল্লাহ এসে একটা অসাধারণ প্রতিবাদী কবিতা আবৃত্তি করে স্টেজ থেকে নামলেন, তার খানিকক্ষণ পর খবর পেলাম যৌথ বাহিনির হাতে তিনি গ্রেফতার হয়েছেন। ভীষন মন খারাপ নিয়ে হলে ফিরেছিলাম সেদিন।
টি.এস.সি তে মাঝে মাঝেই মুক্ত অনুষ্ঠান হতো আবৃত্তির। ঐ সব অনুষ্ঠানের কল্যাণেই জেনেছি, বিনাশ ও বিন্যাসেই আসলে মাহিদুল ইসলামের শ্রেষ্ঠ আবৃত্তি নয়, তারচেয়েও হাজার গুণ বেশি ভালো আবৃত্তি তাঁর- আমার বন্ধু নিরঞ্জন অথবা নূরালদীন!
এরকমই একটা মুক্ত অনুষ্ঠানের গল্প করেছিলো আমার বন্ধু কামরুল। শুনে ভীষন মজা পেয়েছিলাম। মঞ্চে আবৃত্তি করছিলেন শিমুল মুস্তাফা। সম্ভবত কেউ কথা রাখেনি বা ওরকমই কোন কমন কবিতা। মজা হচ্ছে, সেই আবৃত্তির সাথে সাথে বাউন্ডারির বাইরে দাঁড়িয়ে একটা টোকাই হাত-পা ছুঁড়ে ভীষণ নাচছে। আবৃত্তির সাথে কোন সঙ্গতি নেই, বা আবৃত্তির সাথে মানুষ নাচে এরকম উদ্ভট ধারণাই বা সে কোথায় পেল কে জানে, কিন্তু তবু সে নাচছে। শিমুল আবৃত্তির ফাঁকে ফাঁকে সেটা খেয়াল করলেন। একসময় আব ৃত্তি শেষ হলো, পরবর্তি কবিতা আবৃত্তির শুরুতে হঠাৎ শিমুল সেই টোকাইয়ের দিকে তাকিয়ে মাইকে বলে উঠলেন, “ এটা কিন্তু নাচের কবিতা নয়। তুই এবার খবরদার নাচবি না!'' টোকাই ভীষন লজ্জা পেয়ে কাঁচুমাচু মুখ করে টিএসসি ছেড়ে দৌড়ে পালালো!
শিমুলের আবৃত্তি আমার বেশ ভালো লাগে। এর মাঝে দুএকটা ভীষন প্রিয়! সেরকমই একটা হলো- মকবুল সমুদ্রে যাবে। কবিতাটি কার জানা নেই, ভাবেসাবে মনে হয় সৈয়দ শামসুল হকের হবে বোধহয়, কিন্তু জাস্ট অসাধারন একটা কবিতা। গায়ে কাঁটা দিয়ে যখন শিমুল তাঁর উদাত্ত গলায় পাকিস্তানী সেনাদের নৌকার উদ্দেশ্য বলে ওঠেন, আল্লাহু আকবর,ডুবি যা ডুবি যা ডুবি যা, বদর বদর ক, গাজী গাজী ক, হালার পুত হালারা ডুবি যা ডুবি যা, বাইনচোত ডুবি যা!!
মার্চ মাসের আগুন ঝরা দিনে তাই সহব্লগারদের জন্যে তুলে দিলাম শিমুল মুস্তাফার আবৃত্তিতে- মকবুল সমুদ্রে যাবে!
mokbul somdre jaab... |
-----------
লেখাটি সামহোয়্যারে পোষ্টানর পরে অমি রহমান পিয়াল জানালেন- কবিতাটি মণিভূষণ ভট্টাচার্য্যের লেখা, নাম সমুদ্রে যাবে।
ধন্যবয়াদ পিয়াল ভাইকে।