বুদ্ধিমানের জবানবন্দী-
সাপ্তাহিক ২০০০ এর এবারের ইস্যুটাতে ডা: এম এ হাসানের সাক্ষাৎকার পড়লাম মাত্রই। এম এ হাসানকে চিনেন না? চেনার কথাও না অবশ্য- উনি বোকা সোকা মানুষ, ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ান, সেই কর্মের পরিচিতি হিসাবে আবার রাশভারী একটা পদবীও দখল করে নিয়েছেন- সেটা কি? সেটা হলো- আহবায়ক, ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি। এবারে কি কিছুটা বুঝা গেলো? আরেকটু বুঝিয়ে বলি তাহলে, ৭১ এ পাকি সেনা ও রাজাকাররা এ দেশে নির্বিচারে যে গণহত্যা চালিয়েছিলো, উনি সেটার বিচার চান। সেই বিচারের জন্যে প্রমাণ খুঁজতে গিয়ে উনি সারা দেশে সেই হত্যালীলার চিহ্ণ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। তিনি জানালেন, সারা দেশে বধ্যভূমি রয়েছে পাঁচ হাজারের মতন, শনাক্ত করা গেছে ৯২০ টি। ৯৯ সাল থেকে শুরু করেছিলেন, কাজ এখনো চলছে, তবে সেটাও মৃতপ্রায়।
না, উৎসাহের অভাব ঘটেনি, আর্থিক টানাটানিই মুল কারণ। কোন সরকার কখনো তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসে নি, কেউ কোন আর্থিক সাহায্যও করেন নি।
করবে কেন? আমাদের কি আর কাজ নেই? এম এ হাসান না হয় পাগল কিসিমের মানুষ, আমরা তো নই! এত বছরের পুরোনো ইতিহাস ঘাটায় আমাদের তাই উৎসাহ নেই। কানের পাশ থেকে যখন ঘাতকদের পরবর্তী প্রজন্ম খলখলিয়ে হাসি দিয়ে বলে, প্রমাণ কই, প্রমাণ? বুকের ক্ষতটারেতো আর বাইরে টেনে এনে দেখানো যায় না, আমরাও তাই অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে মরি। কিন্তু প্রমাণ পাই না।
থাক, দরকারই বা কি? এই তো বেশ ভালো আছি। বেঁচে আছি, প্রতিদিন রুটি-গোশত খাচ্ছি। ডা: এম এ হাসান, আপনিও প্লিজ এইবারে অফ যান। দয়া করে পুরোনো জিনিস নিয়ে আর টানাটানি করবেন না। সিংগাপুর এয়ারপোর্টে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্খার লোকেরা আপনার টিকেট ছিড়ে ফেলেছিলো? বেশ করেছে। আমাদের সরকারী গোয়েন্দা বাহিনী আপনার ফোন ট্যাপ করে, সারাক্ষণ অনুসরন করে আপনার গাড়ি, নানারকম হুমকি ধামকি দেয়। দেয়াই তো উচিৎ। কি দরকার এসবের বলুন তো?
যথেষ্ঠ করেছেন। আর কিছুদিন অপেক্ষা করুন। আপনাকে আমরা নিশ্চয়ই একদিন মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করবো। ৯২০ টি বধ্যভূমির হাহাকার বুকে নিয়ে আপনি যখন ঘুমিয়ে থাকবেন, আমরা তখন সভা সেমিনারে গিয়ে স্মৃতিচারণ করবো, ডা: এম এ হাসান, আহা, বড় ভালো লোক ছিলেন, আর ভীষন বোকা, আমাদের শহীদ পিতাদের কবর খুঁজতে চেয়েছিলেন।
আহা, বেচারা!