হালুম হুলুম ক্রিকেট খেলুম-
আমার সৌভাগ্যই বলতে হবে, শেষবার বাংলাদেশের খেলা লাইভ দেখেছিলাম কার্ডিফের সেই ম্যাচটা, যেটায় অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দিয়েছিলো তারা। আর তারপরে আবার দেখলাম গতকালের ম্যাচ।
সুতরাং এরপর থেকে বাংলাদেশের খেলা দেখা মানেই একটা করে সুখস্মৃতি বাড়বার সম্ভাবনা, এরকম কোন আশাপ্রদ ভাবনা মনে উঁকি দিলে নিজেকে দোষাই কেমন করে?
ক্রমশঃ জয় পাওয়ায় অভ্যস্ত হচ্ছে আমাদের দেশ। এরকম জয়ে খুব বেশিদিন আর টিএসসিতে মিছিল করবো বলে মনে হয় না। একসময় আমরা নিশ্চয়ই বাংলাদেশ হেরে গেলে রেগে যাওয়ার মত আভিজাত্যে পৌঁছে যাবো। অনেকদিন পর পর দুয়েকটা হারে বাশার বা তাঁর পরবর্তীদের পদত্যাগ চাইবার মত বিলাসিতার দিনও আমাদের খুব বেশি দূরে নেই, এই আনন্দভাবনায় আমার আজকের সারাটা দিন কেটে গেল।
কালকের খেলাটা অন্য জয়গুলোর চেয়ে অনেকাংশেই আলাদা। শুরু থেকে একদম শেষ পর্যন্ত আর কখনো একক আধিপত্য বিস্তার করে জিতেছে বাংলাদেশ- ঠিক এরকমটা দেখি নি। একবারের জন্যেও তাঁদের ভীত মনে হয় নি। পেশাদার ক্রিকেটের সুন্দর উদাহরণ দেখিয়েছে তারা বোলিং ব্যাটিং ও ফিল্ডিং-এ।
তামিমের খেলা আগে দেখি নি। ভীষন জেদী ছেলেটা। মুনাফ পাটেলের সাথে বিরামহীন তর্ক বা জহির খানের বাউন্সারের জবাবে ডাউন দ্য উইকেটে নেমে এসে চার মারার সাহস দেখে মুগ্ধ হয়েছি। বয়সে আরো পরিণত হবে, ঠিক এরকম একটা প্রশ্রয়ে অহেতুক অস্থিরতায় আউট হয়ে যাবার অপরাধও ক্ষমা করে দিয়েছি।
সাকিবের খেলাও খুব ভাল লাগলো। বুদ্ধিমানের মতন শট বাছাই করেছে ও। পাইলট নেই বলে যে দুঃখটা ছিলো মনে, মুশফিক সেটার উপর পর্যাপ্ত মলম লাগিয়ে দিতে পেরেছে। সব মিলিয়ে এবারের বিশ্বকাপের শুরুটা- সুন্দর একটা সকালে কড়া করে এক কাপ চা খেয়ে ফুরফুরে মেজাজে গান গেয়ে ওঠার মতন আনন্দময় হয়েছে।
বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা মানজারুল ইসলাম রানাকে হারাবার কষ্ট বুকে চেপে খেলতে নেমেছিলেন। সেই শোকটাকে শক্তিতে রূপান্তরিত করবার জন্যে এমন জয়ের আসলেই কোন তুলনা নেই।
দেশের পত্রিকাগুলোয় বারবার করে ম্যাচ রিপোর্ট পড়ছিলাম বসে বসে, তবু যেন মন ভরছিলো না। ভারতের উন্নাসিকতার একটা জবাব দেয়া গেছে ভেবে আসলেই ভাল লাগছিলো। এখানকার হেরাল্ড সান পত্রিকায় তেমন বড় করে আসে নি খবরটা। আনন্দবাজারের রিপোর্ট নতুন কোন চমক দেয় নি অবশ্য। তীব্র সমালোচনা করেছে দ্রাবিড়ের দলের- অবশ্য এটাই স্বাভাবিক ছিলো। খুব রাগ হয়েছে দেখে যখন মাশরাফি ওদের নিজস্ব উদ্ভট বানানে একবার হয়েছে মাশারাফে, আরেকবার মোশারাফি! রাজ্জাককে রজ্জাক লিখতে দেখে অবাক হই নি, তবে সত্যিই কষ্ট পেয়েছি মানজারুল ইসলাম রানাকে অবলীলায় " মঞ্জুরাল হুসেন রানা'' লিখতে দেখে!
আচ্ছা, ওরা কি ভুল করেও দু'একবার শুদ্ধ বানান লিখতে পারে না? সুযোগ পেলে জিজ্ঞেস করতাম।
খুঁজতে খুঁজতে আরেকটা দুঃখজনক খবর পেলাম। ঝাড়খন্ডে মহেন্দ্র সিং ধোনীর নির্মীয়মান বাড়িটির দেয়াল বেশ কজন উগ্র সমর্থক ভেংগে ফেলেছে! শুধু ধোনীর দোষ কোথায় বুঝে পেলাম না। ক্রিকেটীয় আবেগ আসলেই বড় সাংঘাতিক জিনিস!
যাক, অবশেষে ভারত-বধ কাব্য রচিত হলো। সামনে আছে শ্রীলংকা আর বারমুডা। শিরদাঁড়া কেঁপে ওঠার মতন জোরাল "হালুম'' আগামী দুটো ম্যাচেও শুনতে পাবো- এই প্রত্যাশাই রাখি।
গুড লাক বাংলাদেশ।