হোয়াট আ ডে!!!


রাতে ভালো ঘুম হয় নাই তাই সকালে যখন ক্লাসে যাবার জন্যে উঠতে হইলো মেজাজ গেলো বিলা হইয়া। বিলা হওয়া মেজাজে পি.সি.র সামনে বইসা দেখি বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডরে শোয়াইয়া ফালাইছে! মনটা খুশিতে আনচান কইরা উঠলো কিন্তু ক্লাশে গিয়া পাইতে লাগলো বেজায় ঘুম। যাওয়ার সময় হাউজমেটের গাড়িতে চইড়া গেছিলাম তাই সীটের মধ্যে আরাম কইরা চোখ বুইজা ছিলাম। কিন্তু আসার সময় ও আর আসবো না এদিকে আমার গাড়ি আনি নাই তাই বাসে যাইতে হইবো। বাসের লাইগা লাইনে দাঁড়াইয়া দেখি গত সাত বছরে এই প্রথম আমি মানিব্যাগ বাসায় ফেইলা বাইর হইছি! মানিব্যাগের মইধ্যে আমার ব্যাংক কার্ড বাসের টিকেট সব কিছু। এখন ঐসব বাদ দিয়া কেমন কইরা কি দিয়া টিকেট কাটুম বুঝতাছি না কিন্তু ভাগ্য ভালো যে আমার আরেক হাউজমেট একই বাসে কইরা সিটিতেই ল'ইয়ারের লগে দেখা করতে যাইবো। আমি ওর কাছ থেইকাই তিন টাকা ধার লইয়া আমার কাছ থেইকা ২০ সেন্ট দিয়া একটা দুই ঘন্টার টিকেট কাইটা বাসে চইড়া আমার সাবআর্বে হাজির হইলাম। ঐখানে গিয়া আবার বাস বদলাইতে হইবো কারন এই বাস আমার বাসার সামনে দিয়া যায় না কিন্তু ঐ বাস যাইবো। বাসের লাইগা গালে হাত দিয়া বইসাই আছি বইসাই আছি কিëতু বাস আর আসে না। যাক অবশেষে বাস আসিলো আমিও খুশি হইয়া তাতে চাইপা বসলাম এবং সুন্দরমতোন সোজা বাসার সামনে আইসা নামলাম। আজকে আবার বিকালে কাজ আছে তাই ভাবছিলাম বাসায় গিয়া আরাম কইরা একটু ঘুম দিমু কিন্তু ঘুম আর আসে না। অবশেষে নাকে মুখে বালিশ চাপা দিয়া জোর জবরদস্তি কইরা ঘুমটারে টাইনা চোখের উপরে নামাইয়া আনার সময় দেখি কাজে যাওনের আর মাত্র আধা ঘন্টা আছে! আধা ঘন্টাই সই টাইপ চিন্তা মাথায় নিয়াই চক্ষু বুইজা ঘুম দিলাম আর মনে হইলো ঠিক পাঁচ মিনিট বাদেই কানের পাশে মোবাইলের অ্যালার্ম বাইজা উঠলো! ধড়মড় কইরা উইঠা কোন মতে রেডি হইয়া পেটের মধ্যে ধুমধারাককা খিদা চাপাইয়া স্পিড লিমিটের বারোটা বাজাইয়া প্রায় উইড়া গিয়া কাজে হাজির হইলাম। ম্যানেজার আমার দিকে একবার তাকাইয়া নিজের ঘড়ির দিকে একবার চাইলো আর আমি সাথে সাথেই খুব মনোযোগ দিয়া আমার ডানপাশে 'কিছু একটা' খুটাইয়া খুটাইয়া দেখতে লাগলাম। কোলস এক্সপ্রেসের আমাগো স্টেশানতে সাধারণত মঙ্গলবারে ভিড় বেশি থাকে কারণ ঐদিন তেলের দাম থাকে সবচে কম। কিন্তু বুধবারেই আবার সেইটা সবচে বাইড়া যায় তাই পাবলিকও সেদিন আসেই না বলতে গেলে। কিন্তু আজকে স্টোরে ঢুইকাই লম্বা লাইন দেইখা মনটা চুপসাইয়া গেলো তখুনি বাইরে তাকাইয়া দেখি হালার তেলের দাম দেখি কালকের চেয়েও কম! কোনমতে কাউন্টারের পেছনে জাম্প মাইরা খাড়াইলাম আর শুরু হইলো গলাবাজি। ঘন্টাদুয়েকের মধ্যে প্রায় ৮০ জন কাস্টোমার সার্ভ কইরা আমার গলা যখন শুকাইয়া কাঠ আর পেট খিদায় চোঁ চোঁ, তখন দেখি একটা পাম্পের কাস্টমার হাওয়া হইয়া গেছে! মানে হইলো গিয়া ড্রাইভ অফ! অর্থাৎ ঐ হমুন্দির পুতে তেল লইয়া পয়সা না দিয়াই ফুটছে! মনটা দিনের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতন বিলা হইয়া গেলো গা। পুলিশে কল কইরা হাজার রকমের কাগজপত্র ফিলাপ কইরা যখন কোমর সোজা কইরা খাড়াইলাম তখন আমার কলিগ আবার আরেকটা পাম্পের দিকে আঙুল তুইলা দেখাইয়া কইলো ঐটাও গায়েব! আমি মনের দু:খে বনে যামুগা কিনা এইটা যখন ভাবতাছি তখন দেখি কাউন্টারের সামনে আবার লম্বা লাইন। আমাগো স্টোরের পাশেই হাঙ্গরি জ্যাকসের দোকান তাই খিদা লাগলেই ঐখান থেইকা একখান বার্গার আর চিপসের হুপার মিল কিইন্যা খাইয়া ফালাই কিন্তু আজকে হালার কাস্টমারের জ্বালায় সেই চান্সই পাইলাম না! খিদার জ্বালায় চোঁ চোঁ করতে করতে আরো একটা মানে হইলো মোট তিনটা ড্রাইভ অফের ঠেলা সামলাইয়া রাত ১২ টায় আবার বাসার উদ্দেশ্যে উড়াল দিলাম। বাসার কাছের ব্রিজের উপর দিয়া প্রায় ৯৫ স্পিডে চালাইয়া আসতাছি যদিও ঐখানে লিমিট হইলো ৮০ তখুনি দেখি পাশের উলটা দিকের রাস্তার একটা গাড়ি হঠাৎ কইরা ঘুইরা গিয়া মাঝখানের ডিভাইডারের উপর দিয়া লককর ঝককর করতে করতে ঠিক আমার লেনে আইসা পড়লো! আমি ৯৫ স্পিডের মধ্যেই ব্রেকের উপর প্রায় খাড়াইয়া গিয়া দুই হাতে হর্ন দিতে লাগলাম আর ঐ ব্যাটা মনে হয় ঘুমাইতে ঘুমাইতে আস্তে কইরা আমার লেন ছাইরা পাশের লেনে চইলা গেলো। আমি ঐটার পাশ দিয়া আসতে আসতেও সমানে হর্ণ দিলাম, ঈমানে কইতাছি গত আড়াই বছরেও সব মিলাইয়া আমি এত হর্ণ দেই নাই আজকে একদিনেই ঐ শশুরের ছাওয়ালরে যত হর্ন দিছি! অবশেষে বাসার সামনে আইসা পার্কিংয়ে খাড়াইয়া গাড়ির স্টার্ট বন্ধ কইরা একটা লম্বা নি:শ্বাস ফালাইয়া কইলাম হোয়াট আ ডে!

Popular posts from this blog

আরেকটিবার-

The Boy, the Mole, the Fox and the Horse | Charlie Mackesy

মধ্যাহ্নভোজ | উইলিয়াম সমারসেট মম্‌ | রূপান্তরঃ তারেক নূরুল হাসান