যুদ্ধের দেবতা-
ভিডিও ক্লাবের মেম্বার হয়ে গিয়ে গত ক'মাসে বেশ কিছু ভাল মুভি দেখা হয়ে গেল। এর মধ্যে কয়েকটা সত্যিই খুব ভাল লেগেছে।
এরকম একটা মুভি হলো লর্ড অব ওয়ার। নিকোলাজ কেজ-এর। আমার খুব পছন্দের একজন নায়ক।
আমার একটা অভ্যাস হলো, ছবি দেখার সময় আমি মোটামুটি একটা লিংক ফলো করে যাই। প্রথম যে ছবিটা দেখলাম, পরেরটা হয়তো একই নায়ক অথবা পরিচালকেরই ছবি হয়। অথবা নায়িকার। কোন নির্দিষ্ট কারন নেই অবশ্য, নিজের কাছেই মজা লাগে এরকম করে দেখতে।
এই ছবিটা পুরোপুরি রাজনৈতিক। অস্ত্রব্যবসা নিয়ে, অথবা বলা যায় যুদ্ধ নিয়ে যে ব্যবসা হয় দুনিয়া জুড়ে, তাই নিয়ে এই সিনেমা। একজন সাধারন মানুষ কেমন করে অস্ত্রব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে, তারপর সেখান থেকে আস্তে আস্তে হয়ে যায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী, খুব সুন্দর করে দেখানো হয়েছে এখানে। এই অংশটুকু অবশ্য খানিকটা ফাস্ট ফরোয়ার্ডের মত মনে হয়েছে আমার। আরেকটু রয়েসয়ে দেখালে ভাল হতো মনে হয়েছে।
ব্যাকগ্রাউন্ডে কেজের নিজের গলায় জীবনী বলার মত করে দেখানো হয়েছে সিনেমা। এই ব্যবসার কথা নিজের পরিবারের কাছে লুকিয়ে রাখতে গিয়ে নানা জটিলতা, এই কারণেই নিজের ভাইকেও হারাতে হয়।
মাঝখানে একটা জায়গায় এসে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক শুনে চমকে যাই। এ.আর.রাহমানের কোন একটা মিউজিক শুনেছি এরকম, কোন ছবির মনে নেই, বোম্বে, নাকি রোজা? একটা বিষন্ন সুর। একদম হুবহু, নাকি একই মিউজিক? কে জানে!
একদম শেষে এসে কিছু দুর্দান্ত বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে। প্রায় সারাজীবন ধরে তাড়িয়ে বেড়ানো ইন্টারপোলের একজন পুলিশ অবশেষে নিকোলাসের নাগাল পায়, গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে তাকে। ইন্টাররোগেশান সেলে বসে যখন সে দেখে- তবু অবিচল নিকোলাস কেজ, ভীষন অবাক হয়। শান্ত স্বরে কেজ তাকে জানায়, এরপরে কি হতে যাচ্ছে। এই সেল-এর দরজার একটা নক হবে, মার্কিন সরকারের একজন সিনিয়ার অফিসার পুলিশ অফিসারকে বাইরে ডেকে তার এই অসাধারণ কীর্তির জন্যে তাকে অভিনন্দন জানাবে, তারপর বলবে, কেজকে ছেড়ে দিতে।
খানিকপরে এই কথা একদম অক্ষরে অক্ষরে সত্য করে যখন সত্যিই কেজ বের হয়ে আসে, পুলিশ অফিসারের ঐ অবাক চোখগুলো সহজে ভুলবো না।
একদম শেষে প্রায় নিরাসক্ত গলায় নিকোলাজ কেজ জানায়, বিশ্বের রাজনীতি আসলে এমনই।পৃথিবীর প্রধান পাঁচটি অস্ত্রবিক্রেতা দেশ হলো আমেরিকা, চীন, রাশিয়া, ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্স। এবং বড্ড হাস্যকরভাবে এই পাঁচজনই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য!
কি প্রচন্ড কৌতুকবোধে আমার মুখটা তখন অসহায়ভাবে বেঁকেচুরে যায়!