চার এবং পাঁচের কাল্পনিক হিসাব-


কাল সারাদিনে আমি ২ টা সেদ্ধ ডিম খেয়েছি। দুপুরে আর রাতে মিলে মুরগীর ঠ্যাং খেয়েছি মিনিমাম ৪ পিস। ৫ নম্বরটার দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলাম, কিন্তু খাওয়া হয় নি।

৯/১১ হামলায় মোট মারা গেছিলো ২৯৭৬ জন মানুষ।
ইরাকে মারা যাওয়া আমেরিকান সৈন্যের সংখ্যা মে মাসের ২ তারিখে ছিল ১৫৮৬। এখন কি সংখ্যাটা ২০০০ পেরিয়েছে?
একটা ওয়েবসাইট বলছে , একই যুদ্ধে সাধারন ইরাকি নাগরিক মরেছে, ৪৩১৫৪ জন। এটা সর্বনিম্ন সংখ্যা।

ছোটবেলায় টিভিতে দেখতাম, প্রতি মিনিটে বাংলাদেশে জন্মায় ৪ টি শিশু। কেউ কি জানে কতজন মরে? হয়ত মিনিটে ১ জন। বা, ঘন্টায় ২ জন।
শিশু নয়, সব মিলিয়ে কতজন মানুষ মারা যায় প্রতিদিন বাংলাদেশে? ২০০ জন, বা ৪০০ জন? কে জানে!
কতজন দূর্ঘটনায় মরে, তাও জানি না। হয়ত ১০০ জন।

চিকিৎসার অভাবে মরে কতজন? ৭০? নাকি ৮০?
আচ্ছা, চিকিৎসার জন্যে এম্বুলেন্স এ হাসপাতালে যেতে যেতে মারা যায় কজন? রাস্তায় জ্যামে আটকা পড়তে পারে এম্বুলেন্স, অথবা প্রধানমন্ত্রীর গাড়ির বহর যাবার মতন অতি গুরুত্বপূর্ণ কোন কারনে হয়ত তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হতে পারে। পারে না?

আচ্ছা, ধরে নিলাম, গতকাল এম্বুলেন্স এ মারা গেছে ৪ জন মূমুর্ষু মানুষ।
৪ , সংখ্যাটা ৪ ই। কিন্তু যদি ৫ জন মারা যেত , তাহলেই বা কি হোত? কিছু কি আদৌ হোত?
পত্রিকায় হয়ত ৪ লেখা হতো না, বলা হতো, মারা গেছে ৫ জন। আর, সেই পাতায় চোখ বুলিয়ে ৪ এর বদলে আমি ৫ পড়তাম, চার এর বদলে পাঁচ। এইতো, ব্যস। আর কিছু না।

সত্যি বলতে কি, চারজন অথবা পাঁচজন মূমুর্ষু মানুষের জন্যে আমার মনে কোন হাহাকার জাগে না। সঠিক সময়ে হাসপাতালে পৌঁছালে তারা বেঁচে যেতে পারতো কিনা তাই বা কে ভাবে! আমি অন্তত ভাবি না।
লিখতে লিখতে আমার বরং মুরগীর ৫ নম্বর রসালো টুকরোটার জন্যে বড্ড দুঃখ হচ্ছে।
ইস, ৪ টা না খেয়ে কাল ৫ টা খেলেই পারতাম!

ছবি সূত্রঃ প্রথম আলো

Popular posts from this blog

কাফকা

আজ ১২ ই মে ...

মধ্যাহ্নভোজ | উইলিয়াম সমারসেট মম্‌ | রূপান্তরঃ তারেক নূরুল হাসান