না না, নষ্টালজিয়ায় পায় নি, আজ আবার অষ্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ ম্যাচ। নিজে নিজেই তাই পুরোনো খেলা দেখছি বসে বসে। কোন উদ্দেশ্য নেই, মনের গভীরে লুকানো কোন বাসনাও নেই, জাস্ট স্মৃতিচারণ আর কি! :-))
কুইন্সটাউন এয়ারপোর্টের ওয়েটিং লাউঞ্জে কয়েকটা খাবার দোকানের পাশে একটা বইয়ের দোকানও আছে। ফ্লাইটের জন্যে অপেক্ষা করার ফাঁকে সেখানে ঢুকে প্রথম কয়েকটা পাতা উল্টেই এই বইটা বেশ ভাল লেগে গেল। এরকম মোটা নিবের কালি-কলমের লুজ স্ট্রোকে আঁকা আর জলরং এর ওয়াশ দেয়া ইলাসট্রেশন আমার খুব ভাল লাগে। অনেকটা মোটা তুলির টানের মত। বইয়ের গল্পটাও বেশ। অবশ্য নির্দিষ্ট কোনো গল্প আছে এখানে, সেরকমটা বলা যাবে না। বরং এখানে একটা ভ্রমণের গল্প বলা। আর সেই ভ্রমণের বাঁকে বাঁকে দারুণ সব আত্মোপলব্ধি জুড়ে দেয়া। "আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া হচ্ছে কোনো ঘটনায় আমরা কী প্রতিক্রিয়া দেখাব সেই স্বাধীনতা থাকা।" এই কথাটা, এবং এরকম আরও কয়েকটা কথা খুব সুন্দর করে বলা এখানে। কেমন স্বস্তি দেয় মনে, এক ধরনের অ্যাফার্মেশনের মত। বুড়ো হয়ে গেছি বলেই হয়ত এখন আর উপদেশ-ঘেঁষা কথা খুব বেশি উপভোগ করতে পারিনা। তবে এই বইটা পড়ে যেতে বেশ শান্তি লাগলো। সব মানুষই হয়ত কোনো না কোনো ভাবে একটা বোধিবৃক্ষের খোঁজ করে মনে মনে।
ক্লাস ইলেভেন-এর পাঠ্যবইয়ে প্রথম পড়েছিলাম সমারসেট মম্-এর The Luncheon গল্পটা। এখনও মাঝে মাঝেই মনে হয়, পাঠ্যসূচী কার তৈরি করা ছিল জানি না, কিন্তু আমাদের ইন্টারের ইংরেজি বইয়ের সবগুলো লেখাই দুর্দান্ত ছিল আসলে। বিশাল ইংরেজি সাহিত্য-জগতের প্রতি ভালোলাগার দরজা খুলে দেয়ার জন্যে, অন্তত আমার ক্ষেত্রে, খুবই কার্যকরী ভূমিকা রেখেছিল সেগুলো। সেই দারুণ গল্পটা অনুবাদের চেষ্টা করবো ভেবে রেখেছিলাম অনেকদিন ধরেই। তবে অনুবাদের নিয়ম-কানুন নিয়ে সদা সংশয়ে ভুগি। বাংলাদেশে প্রচলিত ধারার অনুবাদ পড়ে তেমন আরাম পাই না আমি। আমার এখনও সবচেয়ে বেশি পছন্দ সেবা প্রকাশনী আর সত্যজিৎ রায়ের করা অনুবাদগুলোই। এই গল্পটা অনুবাদ করতে বসার আগে নিজের জন্যে একটা চেকলিস্টের মত করে নিয়েছিলাম; সেবা আর সত্যজিতের অনুবাদ সামনে রেখে একটা হোমওয়ার্কের মতন ব্যাপার। অনুবাদের সময় চেষ্টা করেছি সেগুলো মেনে চলতে। শেষমেশ যা দাঁড়িয়েছে সেটাকে অনুবাদ না বলে রূপান্তর বলাই সমীচীন হবে বোধহয়। গল্পটি পড়া যাবে এই লিংক থেকে।