সূর্যমুখীর এরোপ্লেন | ইন্দ্রাণী
এই বইটার আমার কাছে আসবার কোনো কথা ছিল না। তবু যে এটা পথ খুঁজে নিয়ে ঠিকই আমার কাছে পৌঁছে গেল, তার পেছনে নিশ্চয়ই কোনো কারন রয়েছে। সেটা কী হতে পারে, তা জানতেই হয়ত আজ বইটা হাতে তুলে নেয়া হল। আর তারপরেই সূর্যমুখীর এরোপ্লেন আমাকে একটা ভীষণ টার্বুলেন্সের মধ্য দিয়ে উড়িয়ে নিয়ে চলল যেন।
বিগত অনেকগুলি বছর ধরে ইন্দ্রাণীদির লেখা অনিয়মিতভাবে পড়া হয়েছে অনলাইনে। কিন্তু দুই মলাটের ভেতরে এক সাথে এতগুলো গল্পসহ এই বইটা যেন একটা ঘুমিয়ে থাকা বোমা।
গল্পগুলোর ভেতরে অনেক চিন্তার উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। বোঝা যায়, এলেবেলে করে এগুলো লেখা হয়নি, বরং সময় নিয়ে, যত্ন নিয়ে এদের পরিচর্যা করা হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমার যে ধরনের গল্প সবচেয়ে পছন্দের, এগুলো একদম সেই টেক্সটবুক থেকে উঠে এসেছে যেন। গল্প যেন নয় শুধু, পাতার পর পাতা জুড়ে যেন ছবি বসানো হয়েছে পর পর। অথবা যেন একটা ছবিরই বই এটা, সব ছবি মিলে গল্প হয়ে গেছে হঠাৎ করে। লেখা দিয়ে ছবি আঁকা সহজ কাজ নয়। কিন্তু এত সাবলীলভাবে সেটা এ বইয়ে করা হয়েছে, মনে হবে এর চেয়ে সহজ কিছু নেই বোধহয় আর। ইন্দ্রাণী যেন নিজের গল্পের সেই কালো টুপি পরা ম্যাজিশিয়ান। শব্দের ওপর, ভাষার ওপর, চরিত্রের ওপর এই অনায়াস দখল প্রতিটি লেখকেরই আরাধ্য।
সমকালীন গল্পে যারা নতুন কিছু খুঁজে বেড়ান; সেটা বিষয়ে হোক, বা বয়ানে, তাদের বলব এই বইটা পড়ুন। আশাহত হবেন না, বরং বইটা শেষ করে আমার মতই বেশ খানিকক্ষণ হতভম্ব হয়ে বসে থাকতে হতে পারে।
সবগুলো গল্পই ভাল লেগেছে, তবু আলাদা করে বলতে হয় উইদাউট আ প্রিফেস, পিং পং, সূর্যমুখীর এরোপ্লেন, যাপনকাল, প্রস্তুতি পর্ব, মুকুলের বাড়ি, এগুলোর কথা। মোট বারোটি গল্প নিয়ে এই সংকলনটি প্রকাশ করেছে গুরুচন্ডা৯ প্রকাশনী। বইটির দাম ভারতীয় মুদ্রায় ১৩০ টাকা।