অমল ধবল পালে লেগেছে মন্দ মধুর হাওয়া-
গানেরা কেমন করে ফিরে ফিরে আসে!
তখন কুমিল্লা জিলা স্কুলে পড়ি। ফাইভ অথবা সিক্সে। স্কুলের সামনের ছোট মার্কেটের সিঁড়ি ঘরটাকেই কায়দা করে বদলে নিয়ে একটা ‘ক্যাসেটের দোকান’ চালু হল। গান মানেই তখন ‘ক্যাসেট’- আমাদের কাছে। দোকানের নামটাও একেবারে সেইই- জিপসী! আমাদের কিশোর মনে একটা নতুন ধুমদাড়াক্কা কিছুর ডুগডুগি বাজিয়ে দিলো দোকানটা। ঈদ উপলক্ষে তখন প্রচুর এলবাম বের হতো। এখন কী হয় জানি না। তো কোনও এক ঈদের আগে আগে আমি আর ছোটমামা সম্ভবত ৩৫ টাকা পকেটে নিয়ে গেলাম সদ্য বের হওয়া একটা এলবাম কিনতে। শক্তি, নাকি স্টারজ, নাকি স্রোত- ভুলে গেছি। কিন্তু এরকম কোনও নাম নিশ্চিত।
সেই ছোট্ট দোকানে ঢুকে আমরা নানা রকম ক্যাসেট দেখছি। বাইরে বিশাল সাউন্ডবক্সে দারুণ কোনও ব্যান্ডের গান বাজছে।
সেই সময় দরজা ঠেলে এক মাঝবয়সী ভদ্রলোক ঢুকলেন দোকানে। দেখলাম বাইরে যে রিকশা থেকে তিনি মাত্র নামলেন, সেখানে আরেকজন স্নিগ্ধ চেহারার ভদ্রমহিলা বসে আছেন।
তিনি ঢুকে দোকানের ঝকমারি দেখে একটু থমকে গেলেন। তারপরে মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনাদের কাছে কি অমল ধবল পালে ক্যাসেটটা আছে?’
দোকানী বুঝলেন না, আবার জিজ্ঞেস করলেন ক্যাসেটের নাম। ভদ্রলোক আবারও বললেন, ‘অমল ধবল পালে।‘
স্বভাবতই ওই নামের ক্যাসেট ওখানে নেই। তিনি চলে গেলেন।
আমি আর ছোটমামা মিটিমিটি হাসতে লাগলাম, অমল ধবল পালে, এটা আবার কেমন গান?
তারও বেশ কিছু বছর বাদে ঋতুপর্ণ ঘোষ আমাদের বুঝিয়ে দিলেন এটা কেমন গান, ‘উৎসব’ সিনেমায়। আহা ঋতুপর্ণ, পেছনে দূর্গাপুজার ঢাকের বাজনা রেখে রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনাবার সাহস আর কারই বা হবে! সেই দৃশ্যে চিলেকোঠায় বসে অর্পিতা পাল খালি গলায় গাইছেন ‘অমল ধবল পালে লেগেছে মন্দ মধুর হাওয়া...।‘ অসাধারণ এই সিনেমাটার সাথে সাথে এই ছবিটাও মাথায় গেঁথে গেল একেবারে, এবং গানটাও।
তারও অনেক বছর বাদে মেলবোর্নের কোনও এক স্টেজ শো-তে শ্রাবণী সেন এলেন গান শোনাতে। সেই অনুষ্ঠানের ইন্ট্রো-তে এসে জানলাম, ‘উৎসব’ ছবির গানটায় কণ্ঠ দিয়েছিলেন শ্রাবণী সেন। শুনে ভালো লাগল অনেক।
মেলবোর্নে শীত পড়ে গেছে এখন, ঘরে হিটার চালাতে হয় রাতে। বাইরে বিচ্ছিরি ঝুম বৃষ্টি। এর মাঝেই কদিন ধরে দেখি অফিস শেষ করে তিথি বসে বসে গিটারে তুলছে এই গান।
দেখলাম, শীতের শহরে বসে স্মৃতির ওপরে ভর করে শরতের এই গান শুনতে মন্দ লাগছে না!