অনুবাদ প্রচেষ্টাঃ রবিন হলের দি কার্টুনিস্ট'স ওয়ার্কবুক এর ভূমিকা


ভূমিকা: দি কার্টুনিস্ট’স ওয়ার্কবুক 


    কার্টুন আঁকার ব্যাপারটা আমার কাছে চিরকালই খুব আকর্ষণীয় মনে হয়েছে, কারণ আমার ধারণা ছিল অন্য চাকুরেদের মত কার্টুনিস্টদের নিশ্চয়ই রোজ সকালে ঘুম ভেঙ্গে উঠে কাজে যেতে হয় না। অবশ্য এটাই একমাত্র কারণ নয়। আমি রীতিমতন মুগ্ধ হয়ে ভাবি যে, কেবলমাত্র একটা কার্টুন দিয়েই কেমন সহজে আমাদের জীবনের প্রায় সবধরণের দৃষ্টিভঙ্গি ফুটিয়ে তোলা সম্ভব  খুব গম্ভীর কোনো ব্যাপার থেকে শুরু করে খুব মজার কিছু- অথবা দুনিয়া কাঁপানো কোনো ঘটনাই হোক বা খুব সাধারণ কোনো ব্যাপার- সব কিছু কেবল একটা ছবিতেই কেমন করে এঁকে ফেলা যায়! 

        মুশকিল হচ্ছে, আমি সেই সৌভাগ্যবানদের দলে পড়ি না যারা নানারকম সৃজনীশক্তি নিয়ে জন্মেছে। সত্যি বলতে কি, আমার আঁকা ছবিও একেবারেই ভাল ছিল না; এমনকি একেবারে শুরুর দিকের আঁকাআঁকি দেখতে কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং মনে হতো। সুতরাং কার্টুনিং যদি করতে চাই, আমাকে যে খুব ভালমতন উঠে পড়ে লাগতে হবে সেটা আমি বেশ বুঝতে পেরেছিলাম। তাই হাতের কাছে আমি যা কিছু কার্টুন পেতাম সব ভাল করে দেখা শুরু করলাম; শত শত কার্টুন। আর সেগুলো দেখে দেখে আঁকা অনুশীলন করতে থাকি আমি, একের পর এক কার্টুন শুধু এঁকেই যেতাম।

       অল্প অল্প করে যখন আমার আঁকা ভাল হতে শুরু করলো, আমি বুঝে গেলাম, যদি কার্টুন আঁকবার সময় আমি কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতি আর ধরাবাঁধা কিছু উপায় অনুসরণ করি, তাহলে সেগুলো সত্যিই ভাল হতে বাধ্য। সময়ের সাথে সাথে এই পদ্ধতি বা উপায়গুলোকেই আমি একটা কার্যপ্রণালীতে পরিণত করে ফেললাম, যেটা শেষমেশ আমাকে কার্টুনিং জগতের দরজা খুলে দিতে সাহায্য করলো।

       এই বইটি মূলত সেই পদ্ধতিগুলোকে ভাগ করে নেওয়ার একটা প্রচেষ্টা, বিশেষত তাদের সাথে যাদের আমার মতই উৎসাহের কোনো কমতি নেই, শুধু কমতি আছে সৃজনীশক্তিতে। যারা মাত্রই শুরু করতে যাচ্ছেন অথবা যারা ইতিমধ্যেই পেশাদার কার্টুনিস্ট, তাদের সবার জন্যেই আমি বেশ কিছু প্রাসঙ্গিক ছবি যোগ করে দিয়েছি এখানে, সেগুলো আশা করি সকলের কাজে আসবে।

     সবশেষে, সকল নব্য কার্টুনিস্টের জন্যে আমার শুভকামনা রইলো। সেই সাথে বলে রাখি ঐ কথাটি কিন্তু মিথ্যে নয়। কার্টুনিস্টদের আসলেই খুব সকালে ঘুম ভেঙ্গে কাজে যেতে হয় না।

- রবিন হল 


( যে-কোনো বইয়ের ভূমিকা পড়তে আমার খুব ভালো লাগে। লম্বা দৌড়ের আগে খানিকটা ওঠবস করে গা-গরম করে নিতে হয় যেমন, বইয়ে ঢুকবার আগে লেখকের নিজের লেখা ভূমিকাটুকু অনেকটা সেরকম আমার কাছে। বইয়ের মূল লেখার চেয়ে কোনো অংশেই কম উপভোগ করি না আমি সেটা। তারচেয়ে বড় কথা, এগুলোকে আমার কাছে অনেকটা, ঠিক কৈফিয়ত বা কনফেশান নয়, বরং ‘সত্যকথন’ শব্দটাই ভালো মানাবে হয়ত, সেরকম লাগে। অল্প কিছু পছন্দের বইয়ের ভূমিকা এরকম অনুবাদ করেছি আমি। সেগুলোর কিছু কিছু ঝালাইমতন করে ব্লগে দেবো ঠিক করলাম। অনুবাদের ব্যাপারে আমি এখনো দ্বিধায় আছি। ভাষান্তর নাকি রূপান্তর, এই দ্বন্ধে ভুগি সর্বদাই। সেবা প্রকাশনীর মত রূপান্তর ভালো লাগে, কিন্তু ভাষান্তরে মূলের যে স্বাদটুকু থাকে, সেটার লোভও কম নয় আমার। এই সব কিছু মিলিয়ে মিশিয়ে কোন নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে আসা সহজ নয়। এগুলো তাই কোনোটাই ঠিক অনুবাদ হবে না হয়তো, বরং অনুবাদ-প্রচেষ্টা নাম দেয়াই ভালো হবে এদের।)




Popular posts from this blog

আরেকটিবার-

The Boy, the Mole, the Fox and the Horse | Charlie Mackesy

সিসিফাস শ্রম | আনিসুর রহমান