তারেক মাসুদ-এর অন্তর্যাত্রা
এখানকার বাংলাদেশী দোকান থেকে অনেকদিন আগেই কিনে এনেছিলাম সিডি-টা। কিন্তু এতদিন সময় করে উঠতে পারি নি। অবশেষে গত পরশু দেখে ফেললাম তারেক মাসুদ-এর অন্তর্যাত্রা।
সিনেমার শুরুতে যখন এ ছবির ইংরেজী নাম দেখালো 'হোমল্যান্ড'- অর্থটা বুঝি নি ভাল করে। কিন্তু পুরোটা দেখবার পরে মনে হলো, এর চেয়ে সুন্দর নাম আর হয় না।
গল্পটা অনেক সুন্দর। একদম সুলভ (নাকি সহজলভ্য) কোন কাহিনি নয় এটা, তবে সেরকম অনেকগুলো কাহিনিকে জোড়া দিয়ে বানানো বলা চলে। সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেছে এ ছবির পাত্র-পাত্রীরা। আমি সিলেটী ভালো বুঝি না, তারপরেও যখন কারো সংলাপ বুঝতেই কোন কষ্ট হয় নি, ভাবছিলাম, আসল সিলেটী কথাবার্তা এরকমই তো ? নাকি সিনেমার খাতিরে খানিকটা প্রমিতকরণ করা হয়েছে?
সিনেমাটা, এককথায়, সাবলীল নয়। দৃশ্যান্তরে যাবার সময়গুলোকে প্রায়শই জাম্প-কাট মনে হয়েছে। ঘড়ি দেখি নি, কিন্তু খুব বেশি লম্বা নয় বোধহয় দৈর্ঘ্যে, শেষ হতে তাই সময় লাগলো না বেশি। এবং হয়তো একারণেই শেষ হবার পর মনে হচ্ছিলো, শেষ করার তাড়াহুড়ায় ছিলেন না তো পরিচালক?
কোন চরিত্রই পূর্ণতা পাবার সুযোগ পায় নি যেন, এবং পুরো সিনেমার প্রতিটি চরিত্রের পেছনে যে নিজস্ব গল্প থাকে, তার কোনটাই স্পষ্ট হয় নি এখানে, কোনটা শেষও হয় নি। বাড়ির ভৃত্য লক্ষণকে দেখে মনে হয়েছিলো একটা কিছু গল্প আছে এখানে, খানিক বাদে তাঁকে আর পাওয়া গেল না। খুব অল্প সময় পর্দায় ছিলেন জয়ন্ত, এখানেও একটা গল্পের জন্যে মন উৎসুক হবার আগেই নিভে গেল। এরকম আরো আছে, জয়ন্ত-র স্ত্রীর চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছেন, আমি গল্প খুঁজেছিলাম সেখানেও, অথবা প্রাচী ও তার ছোট্ট মিষ্টি মেয়েটা, সবাই কেমন করে যেন দূর থেকে বুড়ি ছুয়ে গেল, ভাল করে স্পর্শ করার আগেই।
তবু শেষমেষ ভাল লেগেছে, মনোলগের মত করে সারা যাকের, ও তাঁর ছেলের ভাবনাগুলো জানতে পেরেছি বলে। কোন কোন মৃত্যু মানুষকে কাছে টেনে আনে, নাকি বিচ্ছেদে পোড়ায়, এই জিজ্ঞাসাটুকু মনে জমে ওঠে। রামের জন্মস্থান অযোধ্যা নয় জানি, কবির মনভূমেই, তবু নিজেকে রামের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে যখন চমকে যাই, তখন হোমল্যান্ড আর তার ভেতরে আমাদের অন্তর্যাত্রা একাকার হয়ে যায়। কোথাও এতটুকু স্পর্শ না করেও তবু সেটা গভীর কোন দাগ রেখে যায়।