অ্যানিমেল ফার্ম | জর্জ অরওয়েল
‘দ্য নভেল কিউর’ নামে ইন্টারেস্টিং একটা বই আছে। বইয়ের লেখকেরা বলছেন, মানুষের মন স্বভাবতই বিভিন্ন রকম অবস্থায় থাকে। কখনও আনন্দে থাকে, কখনও বিক্ষুব্ধ, কখনও দু:খে আকুল, কখনও চিন্তাক্লিষ্ট। তো, এই পরিস্থিতির সাথে মানানসই কিছু বই রয়েছে, যেগুলো পড়লে -লেখকদের অভিমত- অস্থির মন কিছুটা শান্ত হবে, আনন্দ দীর্ঘায়িত হবে, আর বেদনায় থাকলে সেটা উপশম হবারও সম্ভাবনা রয়েছে। এই দাবি মিথ্যা নয়, বই মানুষ কিছুটা এসব কারণেই পড়ে। তবে এরকম ওষুধের প্রেসক্রিপশনের মত বই সাজেশনের ব্যাপারটা অপ্রচলিত। আবার অপ্রচলিত হলেও, আমার ধারণা এরকম একটা অদৃশ্য তালিকা প্রায় সব পাঠকেরই থাকে। মন খারাপ হলে বহু পাঠকই জেনে বা না-জেনে ঠিকই নির্দিষ্ট কোনো বই টেনে নিয়ে পড়া শুরু করে দেন।
মনে মনে এরকম একটা তালিকা আমার নিজেরও রয়েছে। দ্য নভেল কিউর-এ বইয়ের নাম দেয়া আছে ৭৫১টা, আমার তালিকা অবশ্য তার তুলনায় অনেক ছোট।
যাই হোক, গত জুলাই ও অগাস্টের প্রায় নির্ঘুম রাত ও অস্থির দিনগুলোর পরে স্বভাবতই সেই লিস্ট থেকে আবারও পড়া হলো বহু পুরোনো 'অ্যানিমেল ফার্ম'। এ বইটা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। ইতিহাস নাকি ঘুরে ঘুরে আসে। আর কিছু বই ইতিহাসের চেয়েও নিখুঁত, তারা অরণ্যের প্রাচীন প্রবাদের মত অলঙ্ঘনীয়, ইতিহাসই বরং তাদের অনুসরণ করে। ২০২৪ সালের অগাস্ট মাসে বসে আমি তাই ইতিহাস পাঠের মতো করে পড়তে থাকি অ্যানিমেল ফার্মে মেজরের বিপ্লবের গান আর নেপোলিয়নের রাজ্য দখলের গল্প। স্নোবলের বীর থেকে দেশদ্রোহী হয়ে যাওয়া বড় বেশি চেনা লাগে। এদিকে নিজের জীবন দিয়ে সকলের উপকার করা বক্সার, ক্ষমতাসীনদের মুখপাত্র তোষামোদকারী স্কুইলার, এরাও আমাদের অচেনা নয়। এবং হঠাৎ করেই 'অল অ্যানিমেলস আর ইকুয়ালের' বদলে কিছু অ্যানিমেলের মোর ইকুয়াল হয়ে যাওয়ার মধ্যেও নতুনত্ব কিছু থাকে না।
নতুনত্ব নেই, তবে দীর্ঘশ্বাস হয়তো আছে, হয়তো আক্ষেপও, এই দু:সময়ে বই কেউ পড়ে না। সামনে আরও যুগের পর যুগ এমন করেই আমরা কেউ বক্সার, কেউ বেঞ্জামিন, কেউ মেজর বা নেপোলিয়নের ভূমিকা পালন করে যাবো, কখনও বিপ্লব কখনও স্বাধীনতা উদযাপন করবো; তবু কেউ জানতে পারবো না, একটা অ্যানিমেল ফার্মের কিছু বন্দী আমরা শুধু।