অনীক দত্তের অপরাজিত (দি আনডিফিটেড)



অনীক দত্তের অপরাজিত (দি আনডিফিটেড) দেখলাম গত সপ্তাহে। বেশ ভালো লাগল। 

(স্পয়লার রয়েছে। মুভি দেখা না থাকলে আর না পড়াই ভালো।) 
.
.
.
.
.
.
.


সিনেমা দেখার আগে ট্রেলার বা অন্যান্য খবর খুব বেশি দেখিনি বলে, সিনেমায় বসে যখন প্রথম টের পেলাম, এটা সত্যজিতের ওপরে নয়, বরং পথের পাঁচালীর ওপরে বানানো সিনেমা, বেশ মজা পেলাম। 

সবার অভিনয় দারুণ একেবারে। চরিত্র অনুযায়ী কাস্টিং একেবারে ফুলমার্কস পেয়ে যাবে, মেকআপও দুর্দান্ত। 

শুধু সব কিছুর নাম বদলে দেয়াটা ভালো লাগেনি। পরিচালকের নিশ্চয়ই কোনও ব্যাখ্যা আছে এ নিয়ে, আমার এখনও চোখে পড়েনি যদিও, কিন্তু সিনেমা দেখার সময় দর্শক হিসেবে বেশ বিরক্ত হচ্ছিলাম এটা নিয়ে। এক শুধু সত্যজিতের অপরাজিত রায় হওয়াটাই মানতে সমস্যা হয়নি, কিন্তু পাঁচালীর ‘পদাবলী’, বিন্দুকে ‘বৃন্দা’, কৃষ্ণকান্তের উইলের ‘উকিল’ অথবা রবিশংকরের সূর্যবাবু হয়ে যাওয়া কেমন স্যাটায়ার হয়ে যাচ্ছিল বারে বারে। আর এই নাম বদলের ফর্মূলাই বা কী ছিল? বাইসাকেল থিভস ঠিক কীভাবে বাইসাইকেল ‘রাইড’ হয়? একেকটা নতুন চরিত্র আসছিল পর্দায়, আর আমার কুইজ খেলার মত করে ‘সেটা আসলে কে’ এই গেমে জড়িয়ে পড়তে ভালো লাগছিল না। 
আমার কাছে মনে হয়েছে, চিত্রনাট্যও এ কারণে কিছু জায়গায় বেশ ঝুলে গেছে। কারণ অনেকবারই অন্য চরিত্রের মুখ দিয়ে বলাতে হয়েছে, ‘উনি তো এই, তাই না?’ বা ‘উনি তো ইনি’। অথচ নাম না বদলালে এই ঝামেলার দরকারই হতো না। 

আর কেন যেন মনে হল, যারা ইতিহাস খুব বেশি জানেন না, এই মুভি তাদের ভেতরে বেশ কিছু ভুল তথ্য ঢুকিয়ে দেবে নাম-বদলের কল্যাণে। অবশ্য ইতিহাস শেখানোটা পরিচালকের দায় নয়, বরং জেনে নেওয়াটা দর্শকের দায়িত্ব, এটাও মানি। 

তবে বলতেই হয় যে, পথের পাঁচালীর শুটিং এর কিছু দৃশ্যের পুনর্চিত্রায়ন একেবারে হা করে গিলেছি। পুকুর পাড় ধরে সার বেঁধে মিষ্টিওয়ালা, দুর্গা, অপু আর কুকুরের হেঁটে যাওয়া, অথবা ইন্দির ঠাকরুনের দৃশ্যগুলো ছিল অসাধারণ। আর প্রথম ট্রেন দেখার দৃশ্যটাও চমৎকার হয়েছে। 

সত্যি কথা বলতে গেলে, হয়ত বার বার দেখা হবে না এই মুভি, কিন্তু সত্যজিৎ এবং অনীক দত্তের ভক্তদের অন্তত একবার এই মুভিটা দেখতেই হয়। 

Popular posts from this blog

The Boy, the Mole, the Fox and the Horse | Charlie Mackesy

মধ্যাহ্নভোজ | উইলিয়াম সমারসেট মম্‌ | রূপান্তরঃ তারেক নূরুল হাসান

আরেকটিবার-