আ ফেয়ারওয়েল টু গ্যাবো অ্যান্ড মার্সিডিস | রড্রিগো গার্সিয়া
গতকাল রাত জেগে রড্রিগো গার্সিয়া-র এই বইটা পড়ে ফেললাম। আ ফেয়ারওয়েল টু গ্যাবো অ্যান্ড মার্সিডিস।
ঠিক কী আশা করেছিলাম বইটা থেকে, জানি না। তবে পড়া শেষে মন খারাপ হলো বেশ। ঘড়িতে তখন চারটার বেশি বাজে, বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। আমি বিছানা ছেড়ে উঠে শুধু শুধুই ঘরের এ মাথা থেকে ও মাথা হাঁটাহাঁটি করলাম কিছুক্ষণ।
সত্যি বলতে কী, সন্তানের কাছে বাবা-মায়ের মৃত্যুর অভিজ্ঞতায়, পৃথিবীর আর সব আটপৌরে ব্যাপারের মতই, কোনও নতুনত্ব নেই আসলে।
রড্রিগো-র লেখার হাত ভালো। ওর দীর্ঘশ্বাসের সাথে তাই নিজেরগুলো মিলিয়ে নেয়া গেল।
মার্কেজের সাতাশি বছরের দীর্ঘ জীবন নিয়ে তেমন কিছু বলা নেই এই বইয়ে। শুধু তাঁর মৃত্যুর আগে-পরের কিছুদিনের গল্প এখানে। আর হঠাৎ হঠাৎ অল্প কিছু স্মৃতিচারণ।
সেটুকু থেকেই জানা গেলো তাঁর প্রতিদিনের লেখার রুটিন। সকাল নয়টা থেকে দুপুর আড়াইটা। একটা ঘোরের মধ্যে চলে যেতেন মার্কেজ, লেখার সময়টায়। ডাকলে ফিরে তাকাতেন, কিন্তু কিছু শুনতেন বলে মনে হতো না। প্রতিদিনের লেখা শেষে তিনি ঘোষণা দিতেন, রাশান কালজয়ী উপন্যাসগুলোর পরে সবচেয়ে দারুণ উপন্যাসটি তিনিই এখন লিখছেন বসে বসে। যদিও দিন বাড়তে বাড়তে তাঁর ভেতরে সংকোচ জমা হতে থাকতো, ঘুমুবার আগে লেখার মান সম্পর্কে দ্বিধা নিয়ে বিছানায় যেতেন। বলতেন, কালকের দিনটা খুব জরুরী, ঠিকঠাক না লেখা গেলে পুরোটাই ফেলে দিতে হবে। তারপরে আবার, পরদিন, দুপুরের খাবার খেতে খেতে হাসিমুখে সেই নিশ্চয়তা, নাহ, এ যাবৎ কালের সবচেয়ে দুর্দান্ত উপন্যাসটিই লিখছেন এখন তিনি।
তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত উপন্যাসের একটি চরিত্র, কর্নেল ব্যুন্ডিয়া-র মা, আরসুলা ইগুয়ারাঁ-র মতই মার্কেজেরও মৃত্যু হয়েছিল ইস্টারের আগের বৃহস্পতিবারে। গল্পে সেদিন একটা পাখির মৃত্যুর কথাও লিখেছিলেন মার্কেজ। আর কী আশ্চর্য, তাঁর নিজের মৃত্যুর দিনে তাঁর বসার ঘরের সোফায়ও খুঁজে পাওয়া গেলো একটা বিহ্বল পাখির মৃতদেহ।
বই শেষ করে হঠাৎই নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মনে হলো। কারন সেখানে বর্ণিত বিদায়ের অংশটুকু কেবলই রড্রিগো-র, আমার নয়।
আমার কখনই মার্কেজকে বিদায় জানাতে হবে না, যে কোনও সময় হাত বাড়িয়ে টেনে নিয়ে যখন খুশি তাঁর পৃষ্ঠা ওলটানো যাবে, এ কথা ভেবে খুব স্বস্তি পেলাম মনে।