ইদানিং বেশ কিছু নতুন বই পড়ছি

ইদানিং
---------


বছর-খানিক ধরেই খুঁজে পাচ্ছিলাম না ব্যাটাকে। অথচ খুঁজছিলাম, অনেকদিন ধরেই। আমার বুকশেলফের আড়ালে, বালিশের পাশে জমে থাকা অলস অন্ধকারে, অথবা কাজ শেষে বাড়ি ফিরে জমাটি করে বসে থাকা সোফার আরামে। কিন্তু বাস্তবিক প্রায় হারিয়েই ফেলেছিলাম তার খোঁজ। শেষমেষ একটা ষড়যন্ত্র করতে হলো। নিজের সাথে নিজেই চোখ রাঙাতে হলো। একদিন সকালে উঠে আয়নায় নিজেকে জোরসে ধমক লাগালাম, চোপ রাও বদমাশ, যা বলি তা-ই করো।

তো, করলাম। চুপচাপ। বাধ্য মানুষটির মতো ফেইসবুকের ডিএকটিভেট বাটন চেপে দিলাম। জুকারবার্গের নীল দৈত্য কঁকিয়ে উঠলো, কেন কেন?
বললাম, না হে, এটা সাময়িক বিচ্ছেদই কেবল, পাকাপাকি ছাড়াছাড়ি নয়, আবার আসিব ফিরে, সহসাই।


তারপর বুকশেলফের বইগুলোকে ওলট পালট করে ঝাড়াঝাড়ি করে নিলাম। একটা করে বই জায়গা করে নিলো আমার সবকটা চারণভূমিতে। গাড়িতে একটা, সোফার পাশে একটা, একটা ডাইনিং টেবিলে, বিছানায় বালিশের পাশে একটা, আঁকাআঁকির টেবিলে একটা।
ড্রপবক্সের একাউন্ট থেকেও ঝেড়ে মুছে বিদায় জানিয়ে দিলাম সব কটা অনাবশ্যক ফাইলকে। তার বদলে সেটা ভর্তি হয়ে গেলো হাজার-খানেক ই-বুকে।

এবং, তারপরে, সহসাই খুঁজে পেলাম তাকে। আমার হারিয়ে যাওয়া বই পড়ার তুমুল অবসরকে। ওহ, মাই প্রেশাস, এতদিন কোথায় ছিলে?

বেশ কিছু নতুন বই
------------------------


বছরে অন্তত একবার বই আনাবার একটা বদভ্যাস গড়ে উঠেছে আলগোছে। প্রবাসী হবার পর থেকেই। বইয়ের জন্যে আমি আর আমার বউ মনে মনে অল্প অল্প করে টাকা জমাই। আনানোর পরিমাণ নির্ভর করে কত জমাতে পারলাম তার উপরে। কোনবার নিজেদের ফাঁকি দিয়ে খানিক বেশি জমাতে পারলে বই আসে পঁচিশ কেজি। আর টানাটানির বছরে আসে মেরে কেটে দশ কেজি।
এই দশ আর পঁচিশের সীমানা আমাদের নিজেদের করা নয়। এটা ফেডেক্সের বদান্যতা। ওদের দুটা প্যাকেজে, হিসেবে করে দেখেছিলাম, পোস্ট অফিসের ইএমএসের খরচের চেয়ে খানিকটা বেশি লাগে। কিন্তু পাবার গ্যারান্টি আর দ্রুততার সাথে সেটুকু আপোষ করা চলে।
কিন্তু এবারে বই আনাতে গিয়ে ব্যাপক ধরা খেলাম। ফেডেক্সের খরচ বেড়ে গেছে প্রায় দ্বিগুণ। এটুকু আমাদের সাধ্যের বাইরে। ফেডেক্স দিয়ে হয়তো এই শেষবারের মত কিছু বই আনানো হলো, পরের বছর থেকে পোস্টাপিসের দুয়ারে গিয়ে হাজিরা দিতে হবে নিশ্চিত।

পড়ছি
---------------



একসাথে কয়েকটি বই পড়তে শুরু করা আমার স্বভাব। গত সপ্তা নাগাদ শেষ করে উঠলাম কিছু। মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘ও’ পড়া হলো। মোটামুটি লাগলো পড়ে। সব কটি গল্পের শুরুই চমৎকার, কিন্তু শেষটুকু আর সুন্দর থাকেনি কেন জানি। প্রথম দু’টি গল্প পড়ে আমার এমনও মনে হলো, হায়, শেষমেষ জাফর ইকবাল স্যারও বাজে গল্প ছাপাতে শুরু করলেন?

অতীন বন্ধ্যোপাধ্যায়ের পঞ্চাশটি গল্পের সংগ্রহ শুরু করেছিলাম, পড়ছি এখনও। এনার লেখা আগে পড়িনি। এখন পড়তে গিয়ে মনে হচ্ছে, লেখার ভঙ্গি রীতিমতন মনোমুগ্ধকর। ছেঁড়া পাজামা নামের গল্পটি পড়ে একদম শিউরে উঠলাম! একেবারে অন্তর ছুয়ে গেলো! গল্পের শেষ লাইন বা শেষ প্যারায় চমক দেয়ার একটা অভ্যাস খেয়াল করলাম লেখকের, কিন্তু এটা নিয়মিত কিনা সেটা আরো পড়ার পরে বলতে পারবো।

রাহাত খানের অমল ধবল চাকরি পড়ছি। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সদস্য হবার প্রথম দিকের কোন মাসে পড়েছিলাম তাঁর দিলুর গল্প। গল্পটা এখন আর সঠিক মনে নেই, কিন্তু সেই কিশোর বয়সে সাংঘাতিক ভাল লেগেছিলো এটুকু মনে আছে। অমল ধবল চাকরি পড়তে পড়তে লেখককে মনে মনে লম্বা সেলাম ঠুকলাম। এত স্মার্ট ভাষা, এত স্মার্ট ভাবনা সেই আদ্যিকালে কোন জাদুবলে যে আমাদের রাহাত খান আর মাহমুদুল হকেদের পকেটস্থ ছিলো কে জানে! বইটা শেষ করতে করতেই রাহাত খান যে আমার প্রিয় লেখকদের তালিকায় উঠে আসবেন সন্দেহ নেই।

স্টিফেন কিং এর লেখা একটা নন-ফিকশান বই পড়লাম- ‘অন রাইটিং’।  
কিং মূলত হরর থ্রিলার লেখক। আমার পড়াপড়ির অভ্যেসের শুরু রূপকথা আর সেবার থ্রিলারগুলো দিয়েই। তাই এখনও চটপট চানাচুর-ভাজার মত থ্রিলার পড়ে ফেলতে বেশ পছন্দ করি। অন রাইটিং বইটা লেখালেখির উপরে। ক্রিয়েটিভ রাইটিং এর উপরে এর আগেও বেশ কিছু বই পড়েছি, কিন্তু সেসবের সাথে এই বইটার অনেক পার্থক্য রয়েছে। ঐ বই গুলো মূলত উপদেশে ভরপুর। এটা করা চাই, ওটা কিন্তু নয়। কিন্তু কিং এই বইটায় সেসব থেকে অনেক দূর দিয়ে হেঁটেছেন। বইটার প্রথম ভাগে তার নিজের লেখকজীবনের শুরুর কথা আছে। কেমন করে, এবং কোন পারিপার্শ্বিকতার ভেতর থেকে তার ভেতরের লেখক স্বত্তা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো সেসবেরই বর্ণনা সেখানে। এটুকু বেশ আত্মজীবনীর মত করে পড়ে ফেলা যায়। বইয়ের শেষভাগে কিছু না-দিলেই-নয় উপদেশ রয়েছে। কিন্তু সেটাও এমনই আপন আপন স্টাইলে দেয়া যে পড়ে মনে হয় না লেখালেখির ক্লাস করছি। সবমিলিয়ে বেশ ভাল একটা বই।

অতীন আর রাহাত খানের সাথে ব্যালেন্স করার জন্যে কাল থেকে শুরু করেছি জন গ্রিশামের ‘দি ফার্ম’।

টানটান উত্তেজনা একেবারে যাকে বলে। আপাতত ৬২ পৃষ্ঠায় আছি। পড়ছিলামই খানিক আগেও, এর মাঝে হঠাৎই মনে হলো, যাই লোকজনদের খানিক বিরক্ত করে আসি গিয়ে।
অতঃপর আর কি, তাই হেতু এই জ্বালাতন-ধর্মী ব্লগের জন্মলাভ। :)

Popular posts from this blog

The Boy, the Mole, the Fox and the Horse | Charlie Mackesy

মধ্যাহ্নভোজ | উইলিয়াম সমারসেট মম্‌ | রূপান্তরঃ তারেক নূরুল হাসান

আরেকটিবার-