ডালিমকুমার কথন

ছ' বছর আগে একদিন
---------------------------
ঢাবি-র ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের ক্লাশ। কার্জন হলের দোতলা- গ্যালারিতে।
ফার্স্ট ইয়ারের তরতাজা রঙীন ছেলে-মেয়েরা সব, শীতের দুপুরে বসে বসে থার্মোডিনামিক্সের গলি ঘুঁপচিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
একটা ছেলে স্যারের চোখ এড়িয়ে ক্লাশে ঢুকে গেলো। বুঝাই যাচ্ছে, শীতের আলসেমো কাটিয়ে সকালে উঠতে পারে নি, এখন তাই হন্তদন্ত হয়ে ক্লাশে ছুটে আসা।
শার্টের বোতাম সব ক'টা লাগানো শেষ হয় নি এখনো। মাথার চুলে চিরুনি পড়ে নি বোধহয় মাসখানেক হয়। পানি দিয়ে হাত ভিজিয়ে তা দিয়েই চুল আঁচড়ানোর কাজ চলে যায়।
ক্লাশে ঢুকে এক পলক দৃষ্টি ছুটে বেড়ায় পুরো রুম জুড়ে।
নাহ, জায়গা নেই ওখানে, তাই সোজা পেছনের বেঞ্চিতে গিয়ে বসে পড়ে।
খানিকপর ঠুক ঠুক ঠুক। সামনের বেঞ্চির একজন একটা দলা পাকানো কাগজ বাড়িয়ে দেয়। ভুরু কুঁচকে তাকাতেই তার আঙুল অনুসরণ করে দৃষ্টি চলে যায় পাঁচ ছটি বেঞ্চ সামনে। মিষ্টি একটা মুখ ওখান থেকে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। চোখে রাজ্যের রাগ।
চিরকুটটা খুললো ছেলেটা- দ্যাখে- সেখানে লেখা-
'ব্যাটা তুই দেরি করে এলি তো এলি, আমার পাশে বসলি না ক্যান? জানি তো বলবি জায়গা নেই! বলি, এই মোটকাটারে যদি গুঁতো দিয়ে সরাতেই না পারলি, তবে ভাত খাস ক্যান? যা গিয়ে, ভাতের মাড় খা'।

হাসতে হাসতে চিরকুটটা ভাঁজ করে পকেটে ভরে ও। তারপর ব্যাগ কাঁধে নিয়ে স্যারের দৃষ্টি এড়িয়ে উঠে দাঁড়ায়। গন্তব্য- দৈত্য দানো পরিবেষ্টিত কঙ্কাবতীর বেঞ্চ।
*

ছ' বছর পরে
------------------
শীতের চাদরে মোড়ানো মেলবোর্ণ শহর।
সেই ভোরে উঠে জবে চলে গিয়েছিলো ছেলেটা। শব্দ না করে উঠে আস্তে করে দরজা খুলে বের হয়ে গিয়েছিলো ও। যেন ঘুম না ভাঙে কঙ্কাবতীর।
সারাদিনের ক্লান্তি শেষে ঘরে ফিরে ও।
দরজা খুলতেই মনে পড়লো, আজ তো কঙ্কাবতীরও কাজ রয়েছে বিকেলে। ঘরে কেউ নেই তাই।
টেবিলের ওপরে প্লেট সাজানো। রাইস কুকারের বাতিটা জ্বলছে এখনো।
শোবার ঘরে গিয়ে কম্পিউটারের সামনে চেয়ার টেনে বসে পড়ে ও। জিমেইল খুলে বসে।
ইনবক্সে একটাই মেইল।
ক্লিক করতেই হাসিতে ভরে ওঠে মুখ,
" ...,
আজকে দিনে এখন পর্যন্ত দেখাই হলো না তোর সাথে, রাত আটটা পর্যন্ত হবেও না...এটা কোন কথা বল??? ধুত্তুরি। আমি মাত্র খেয়ে নিলাম, মুরগী রেঁধেছি আজ। রানগুলোর সাইজ দেখে তুই ভয় পেয়ে যাবি, ইয়া বিশাল বিশাল, বিচ্ছিরি! রান্নাটাও মনে হয় ভালো হয় নি আজ, মাংস কেটে কেটে দিয়েছি তবু মনে হয় মশলা ঢোকে নি ঠিক মত। আমার প্লেটে ভাত পড়ে আছে, খেতে খেতে মনে হচ্ছিলো অনন্তকাল ধরে খাচ্ছি, হি হি হি, পরে দুম করে যতটা ছিলো রেখে উঠে গেছি। তবুও মনে হচ্ছে বেশি খেয়ে ফেলেছি।
তুই অবশ্যই ঠিকমতন খেয়ে নিবি। ব্লগ নিয়ে বসে থাকবি না সারাক্ষণ। আমি ব্রেক পেলে ফোন করতে পারি, আবার না-ও পারি। আর খবরদার এঁটো প্লেট মাজবার দরকার নেই, আমি এসে করে নিবো।
সকালে ঘুম হয় নি ভালো করে, এখন তাই টাইট হয়ে ঘুমো...'



ডিসক্লেইমারঃ
---------------
আমার বন্ধু, ডালিমকুমার, বললো ওর হয়ে যেন পোস্টটা করে দিই ব্লগে। তাই-ই দিলাম।
ওদের এই রূপকথায় তাই আমার কোন দায়ভার নেই।
বসন্তের শুভেচ্ছা সবাইকে।

Popular posts from this blog

আরেকটিবার-

The Boy, the Mole, the Fox and the Horse | Charlie Mackesy

সিসিফাস শ্রম | আনিসুর রহমান