হাওয়াই মিঠাই ১৪

সূর্য বললো ইশ, তুই খাস কেন কিসমিস?
এখানকার আবহাওয়াটা সম্ভবত কোন কারণে খুব কনফিউজড হয়ে আছে। কখন কেমন আচরণ করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। বাইরে ঝাঁ চকচকে রোদ, কিন্তু বেরুলেই দেখা যায় সে রোদে কোন তাপ নেই। আমি মনে মনে একচোট হেসে নিই এসব দেখলে। নরকে শুনেছি এমন আগুন থাকবে, তাতে কোন আলো নেই, কিন্তু তাপে সেটা গনগনে হবে। এই রোদের ঠিক উল্টো আচরণ দেখে ভাবি, লোকে এবারে এ জায়গাটাকে স্বর্গ বলে ভুল না করে বসলেই হলো।
আলাপের বিষয় খুঁজে না পেলে নাকি আবহাওয়ার আলাপ দিয়েই শুরু করতে হয়। আমি বুঝছি না, আমিও কি সেই পন্থাই ধরলাম? কিছু না পেয়ে শেষে রোদ-সূর্য নিয়ে পড়লাম?
অথবা, হয়তো আমিও এখানকার সূর্যের মতই কনফিউজ্ড হয়ে আছি। রাতের বেলা হিটার আর পাখা দুটা জিনিসই বিছানার পাশে দাঁড় করিয়ে রাখি। হুট করে ঘুম ভেঙ্গে গেলে প্রয়োজন মত সুইচ টিপে দিই, ব্যস, আবহাওয়া বদলে যায়।
গত কদিন ধরে ভাবছি, আমার হাতে আসলে আরও কিছু সুইচ থাকা খুব দরকার ছিলো। অন্তত, ইচ্ছে হলেই যদি চারপাশের দেশটা বদলে ফেলতে পারতাম!

বাসা ভেঙ্গে বাক্স বানাই
চার মাস আগে আমার ফেইসবুকের স্ট্যাটাস ছিলো এরকম কিছু।
চারমাস আগে আসলে বাসা বদলাচ্ছিলাম। এটা একটা বিরাট যন্ত্রণা। দেখে মনে হয় কিছুই না, কিন্তু সব কিছু একটা একটা করে গোছাতে গেলে দেখা যায় রাজ্যের জিনিস জমে গেছে। সব কিছু ঠাসাঠাসি করে বাক্সে ভরো, তারপরে সেটা নিয়ে চলো নতুন বাসায়, তারপরে সেসব বাক্স থেকে বের করে নিয়ে আবার সাজাও নতুন করে।
আমি অলস প্রকৃতির মানুষ। কোথাও ঠেলে ঠুলে নিজের জায়গা করে নিতে পারলে আর কিছু চাই না। সহজে নড়তে চড়তেও চাই না। কোন একভাবে জীবন কাটিয়ে দিতে পারলেই হলো। কিন্তু সেটা মানুষের সহ্য হবে কেন? মন খারাপ
বাড়িওয়ালী নোটিশ দিয়েছে, দু মাসের মধ্যে বাসা ছাড়ো। সম্ভবত কিছু ঘষামাজা করে নতুন করে বাড়তি ভাড়া বসাবে। এ জন্যে পুরো বিল্ডিং-এর ছয়টা ইউনিটের সবাই দুম করে আমরা বাস্তুহারা কমিটির সদস্য হয়ে গেলাম!
একদম মহা বিপদে পড়েছি।
এখানে বাসা ভাড়া পাওয়া সোনার হরিণের কাছাকাছি ব্যাপার। তার উপরে মাত্রই কদিন আগে নতুন বাসায় এসে সবে স্থিত হয়েছি, এখন আবার বাসার খোঁজে দৌড় ঝাঁপ অসহনীয় লাগছে!
আমার দৈনন্দিন রুটিনে বেশ বদল ঘটে গেছে। রোজ রাতে কাজ থেকে ফিরে নেটে বাসা খুঁজে বেড়াই। সকালে উঠে কাজে যাবার আগে আবার লিস্টি মিলিয়ে সেগুলো দেখে আসি। কিন্তু মন মতন হয় না একটাও। বাসা ভাল হলে দেখা যায় ভাড়া সাধ্যের বাইরে। ভাড়া দেখে খুশি হয়ে দেখি বাসার অবস্থা সুবিধের নয়।
আমরা দুই বুড়ো-বুড়ি এখন সকাল বিকেল কোরাসে হা-পিত্যেশ করি। জীবনে ভালবাসার কোন অভাব নেই আমাদের, কিন্তু একটা ভালো বাসার আজ বড়ই প্রয়োজন!

Popular posts from this blog

The Boy, the Mole, the Fox and the Horse | Charlie Mackesy

মধ্যাহ্নভোজ | উইলিয়াম সমারসেট মম্‌ | রূপান্তরঃ তারেক নূরুল হাসান

আরেকটিবার-