Posts

Showing posts from 2009

তিন বছর

কীভাবে যে উড়ে যায় দিন, সাথে নিয়ে কয়েকটি ভুলে থাকা ঋণ। মুঠো মুঠো সাদা কালো জমে শুধু এলবামে, আমাদের সব ছবি আজকে রঙীন। আমরা হাসতে গিয়ে একসাথে আমরা হাঁটতে গিয়ে একসাথে আমাদের নিঃশ্বাস একসাথে গেয়ে ওঠে, আমাদের মায়ার হরিণ। স্বপ্নেতে ঘোরাঘুরি, প্রতি দানে হাজারটি ভুল। তবু আমাদের সঙ্গে আকুল, তিনটি বছর জুড়ে ফুঠে ওটা আমাদের লাল নীল ফুল। ------------- ২২/১২/০৯

অমিতাভ রেজার নাটক

বাংলাদেশি নাটকে পরিচালকের নাম দেখে নাটক বাছাই করার অভ্যেসের শুরু মোস্তফা সারওয়ার ফারুকীর কল্যাণে। কিন্তু সেই ঊষা লগ্ন এখন গত-প্রায়, এখনও তার নাটক দেখি, কেবল যদি পর্যাপ্ত সময় থাকে হাতে। তারপরেও কিছুটা একঘেয়েমিতে ভুগি, ফারুকীর নাটকের পাত্র-পাত্রীরা সবাইই কেন জানি খুব উচ্চ স্বরে কথা বলে। আর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অবিরাম ঝগড়া করতে থাকে কেউ কেউ, এবং নাটকে মোবাইলের ব্যবহার দৃষ্টিকটু রকমের বেশি, বাংলাদেশে মোবাইলের প্রথম যুগের মত অনেকটা। যেন সবাইই গত পরশু মোবাইল ফোন কিনে গতকাল সারাদিন ব্যাটারি চার্জ দিয়ে আজ নাটকের শ্যুটিং করতে চলে এসেছে। তারপরেও নাটক দেখার অভ্যাস এখনও পাকাপোক্ত আছে অল্প কজন পরিচালকের গুণে, তাঁদের একজন অমিতাভ রেজা। সম্ভবত গত ঈদেই দেখেছিলাম [i]ইকুয়াল টু[/i]। ছিমছাম একটা নাটক, আরজে নওশীন ছিলো অভিনয়ে, নাটকেও আরজেরই ভুমিকা তার। গল্পটা চমৎকার, এবং দেখতে দেখতে বারবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্নালু সময়টায় ফিরে যাচ্ছিলাম। অবশ্য, অমিতাভ রেজার ভক্ত হয়েছি তারও আগে, গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের গল্প অবলম্বনে বানানো নাটক '[i]একটা ফোন করা যাবে প্লিজ?[/i]' দেখার সময়। (অবশ্য ধন্

পুনর্জন্ম বিষয়ক একটি ব্যর্থ রচনা-

ভূমিকাঃ ------- আমি টিভি খুব একটা দেখি না। একটা লম্বা সময় হোস্টেলে থেকেছি বলে টিভি-র প্রতি আকর্ষণ একদমই উবে গেছে। সিরিজ ধরনের নাটক বা ডকুগুলোর প্রতি আবার বিশেষ এলার্জি আছে, টিভিতে ওগুলো দেখাই হয় না তেমন। এখানে এসে অবশ্য একটা উপকার হয়েছে, দোকানে গেলে বাংলাদেশী সিরিয়ালগুলো এক ডিভিতে সব দিয়ে দেয়, বিজ্ঞাপনের কোন ঝঞ্জাট নেই, মাঝখানে খবর দেখার টানাটানি নেই, একেবারে এক বসায় দশ পর্ব এক সাথে দেখে ঢেঁকুর তোলা যায়। কিন্তু এখানকার চ্যানেল বা তাতে প্রচারিত অনুষ্ঠান বিষয়ে আমি একেবারেই ওয়াকিবহাল নই। বাঙালীদের কোন আড্ডায় গেলে কেউ যখন চলমান কোন বিজ্ঞাপন বা সিরিয়াল নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে, আমি তখন ভ্যাবলার মত চেয়ে থাকি। এই আমারও অবশ্য মাঝে মাঝে টিভি দেখা হয়। এবং কিম আশ্চর্যম, সেটা হয় অন্য কারও বাসায় বেড়াতে গেলে। হতে পারে আমার অমিশুক স্বভাব এর জন্যে দায়ী, অথবা নতুন কারও সাথে হুট করে আলাপ জমাতে পারি না বলে হয়তো গভীর মনোযোগে টিভির দিকে তাকিয়ে থাকি। কিন্তু বাসায় ফিরলেই আবার যে-কে সেই। আমার ঘরের টিভি মাসে একবারও জেগে ওঠে না। বর্ণনাঃ ---------- সেদিন এমনই করে এক বন্ধুর বাসায় বেড়াতে গিয়ে টিভি দেখছিলা

কবি

যখন বয়েস কম ছিলো, অনেক সাহসী ছিলাম তখন। একেকটা ছোট ছোট রুলটানা কাগজের ডায়েরি, সেগুলোতে গোল গোল হরফে নানা রকম হাবিজাবি লিখে রাখতাম। কেউ জিজ্ঞেস করলে যে “কী এগুলো?”, নেপোলিয়ান অথবা আলেকজান্ডারের চেয়েও বেশি অহমিকা নিয়ে উত্তর দিতাম, “এগুলো কবিতা। কবিতা লিখেছি। ” তারপর অনেকদিন গেলো। দিন যেতে যেতে পৃথিবীতে সবচেয়ে বাজে যে ব্যাপারটা ঘটল তা হলো যে, আমি বড় হয়ে গেলাম। কেন যে বড় হলাম, এই নিয়ে আমার দুখের সীমা নাই। এখন আর ডায়েরিতে হিজিবিজি লিখতে পারি না, লেখা আসেই না একদম। অনেকদিন পরে পরে হয়তো আসে দুয়েকটা লাইন, ভীষণ আনন্দ নিয়ে সেগুলোকে লিখে ফেলি খাতায়, কিন্তু তারপরে যখন পড়তে যাই, বুঝে যাই যে আমার সাহস কমে গেছে, আগের মতন দুর্মর বা দুর্বার ভঙ্গিতে এখন মোটেও সেগুলোকে কবিতা দাবি করতে পারি না। মনে ভয় হয়। অথচ কবি হবার লোভ আমার অনেকদিনের। এই লোভের বয়েস, যদি দিন মাস গুনতে বসি, তাহলে ঠিক আমার বয়েসেরই সমান। কিন্তু কবি হতে পারিনি আমি, অথবা কবি হওয়া হয়ে ওঠেনি আমার। ক্লাস সেভেনের দিকে নির্মলেন্দুতে জমেছিলাম খুব। এই দীর্ঘকায় কবির কবিতাগুলো কেমন করে যেন আমাকে জাদুটোনা করে ফেলেছিলো। শহরে থাকি বলে চাঁদ দেখতে

বিকেলবেলায়...

কবেকার কোন বৈশাখী মেলা থেকে একটা লাল ডুরে শাড়ি কিনে এনে দিইনি বলে সে আমার থেকে দূরে সরে সরে থাকে শুধু। ব্যস্ত দুপুরের কোন একদিন একটা কাঠি লজেন্স অথবা হাওয়াই মিঠাই এর আবদার আমার মন ভুলে গিয়েছিলো হয়ত, সেই থেকে, অভিমানী মেয়ে গাল ফুলিয়ে কেবলই ছলছল চোখে চেয়ে দেখে আমাকে, কাছে আসে না। বিকেলের ভেজা আলোয় আজ মনে পড়লে এক হাতে রঙিন ফিতে আর অন্য হাতে কিছু ঝিলিমিলি চুড়ি নিয়ে আনাচে কানাচে কেবলই খুঁজে বেড়াই তাকে। দেয়ালে বসা টিকটিকি যেন শুনে না ফেলে অথবা আমার জানলায় উঁকি দেয়া কাঠবিড়ালিকে লুকিয়ে আমি ফিসফিস করে ডাকি, কবিতা, কোথায় রে তুই? আর একটিবার আমার কাছে আয় সোনা মেয়ে। মরে যাবার আগে একটা দিন আমি কবি হয়ে বাঁচি। ------------- ২১/১১/০৯

কবি বলেছেন -

কবি বলেছেন, জ্ঞানের কোন শর্টকাট নাই। কিন্তু আমরা বুদ্ধিমান মানুষ, বোকা কবির কথায় ভুলবো কেন? আমরা তাই জ্ঞানার্জনের জন্যে অসংখ্য শর্টকাট খুঁজে বের করে ফেলি। উচ্চ নম্বরের সিঁড়ি বানাই, পাঞ্জেরী হই, ফোকাস করে করে পড়ি। ছোটবেলায় কোন এক গল্পে পড়েছিলাম, বালিশের নিচে ভূগোল বই রেখে ঘুমিয়েছে এক ছেলে, রাতের বেলা স্বপ্নের ভেতর তাই সে সারা দুনিয়ার ভূগোল দেখে ফেলেছে। এই গল্প পড়ে ব্যাপক উৎসাহিত হয়েছিলাম। পরীক্ষার আগের রাতে বালিশের নিচে বই নিয়ে ঘুমানোটা প্রায় অভ্যেসে দাঁড়িয়ে গেছিলো। স্বপ্ন-মামার যেন কোন স্বপ্ন দেখাবে এসব ভেবে কষ্ট না হয়, এ জন্যে যে চ্যাপ্টার পড়া হয়নি, ঠিক ঐ চ্যাপ্টারটাই খুলে রেখে ঘুমাতাম। অবশ্য দুঃখের বিষয়, তেমন কাজে আসেনি এই বুদ্ধি। আরেকটু বড় হয়ে যখন প্রোফেসর শঙ্কুর সাথে দেখা হলো, খুবই মজা পেলাম। দেখি এই ভদ্রলোক নানান রকম বটিকা নিয়ে ঘোরাফেরা করেন। মৎস্যবটিকা নামের এক জিনিস খাওয়ান তার বিড়ালকে, বিড়াল নাকি আসল মাছের সাথে তার তফাৎ করতে পারে না। নিজের জন্যে আছে ক্ষুধানিবারণ বটিকা। এটাও জব্বর জিনিস, একবার খেলে দুতিনদিন আর খাওয়া লাগে না। আমি ভাবলাম, এই ভদ্রল

আলভী আহমেদের পোস্ট

Image
মুগ্ধ পাঠক -২ : কনফুসিয়াস (হৃদয়ে ছুরি চালানো লেখক।) ২০ শে এপ্রিল, ২০০৭ রাত ১২:১০ চুমুর মধ্যে ভেজা চুমুই ভাল। ঠোঁটের প্রান্তভাগ স্পর্শ করার সাথে সাথে নীচের ঠোঁটটা টুপ করে গিলে ফেলে জিভের সঙ্গে জিভ লাগিয়ে ----------- । খাটি গদ্য আমার কাছে অনেকটা ভেজা চুমুর মত মনে হয়। গদ্যের মধ্যে ভেজা ভেজা হৃদয়ে ছূরি চালানো গদ্য আমার ভাল লাগে । আমি নিশ্চিতভাবে জানি, ব্লগের সাহিত্যিকরা অন্য কথা বলবেন। হয়তবা আমার ছেলেমানুষীতে হেসেও নেবেন দু'একবার। কিন্তু, আমার পছন্দ এরকম। এজন্যই কন্ঠস্বর গোষ্ঠীর লেখকদের হিসেব করা, কঠিন কঠিন শব্দের মাপা গদ্যের চেয়ে সুনীলের গদ্যই আমার বেশি পছন্দ। ভাবছেন, এর সাথে আমাদের কনফু'র সম্পর্ক কী? সম্পর্ক আছে। `যে জীবন দোয়েলের ফড়িঙের', মানুষ হয়েও এমন জীবন চায় যে কনফু - তার ব্যাপারে এটুকু ভূমিকার দরকার আছে। কনফু'র গদ্য আমার এতটাই জাদুকরী মনে হয়, ও কী লিখেছে কখনো পড়বার প্রয়োজন বোধ করি না। হয়তবা, ও লিখেছে নেহায়ত সাধারণ কোনো ঘটনা, সাউথ আফ্রিকায় যাপিত জীবনের কথা। অথবা হুমায়ুন আজাদের বইয়ের রিভিউ, বা পুরনো দিনের নাটকের গানের কথা। আমি গ

এইসব সাদা কালো ফ্রেম-

আমার বাকশে থাকতো এতটুকু ছানা মিষ্টি, আমার চোখের কোণে তোর আটকে থাকা মুখ আমি বলতাম, বৃষ্টি! ডাক শুনে হুঁ বলে তুই তাকাতি আমার দিকে, তোর নীলচে সবুজ স্কার্টে বাদামী ধুলো- তোর সাদা শার্ট আর সাদাটে ফুল চারদিকে তোকে ডাকলাম কই, আমি বলতাম, বৃষ্টি নামবে দেখ। তোর অবাক ভুরু- আচ্ছা পাজি তো- তোর চোখে টলটলে মেঘ। আমাদের বাড়ির ঠিক পাশেই, তোদের পাশের বাড়ি, আমাদের পাশাপাশি ইশকুল, আমাদের রোদ্দুর কাড়াকাড়ি। আমার তোবড়ানো স্যান্ডউইচ- তোর বাকশের আলু পরোটা দিলে আমরা পাশাপাশি বসে, কতগুলো দুপুর উড়ে উড়ে চলে। আমার বাকশের গোল টিফিনের সাথে, মাঝে মাঝে থাকতো আমার মন তুই জানতি, ঠিকই টের পেতিস তুই আঙুল ছুঁয়ে বসে থাকতি যখন। সেই অনেক দূর থেকে ভেসে আসা এইসব সাদা কালো ফ্রেম আমরা দূরান্তে বয়ে যাই, মনে পড়ে আমাদের টিফিন বেলার প্রেম। ----------------------- ২৭/০৮/০৯

অনুবাদ প্রসঙ্গেঃ এইবার তবে উলটো পথে চলো-

এখানকার একটা নামকরা দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য পাতা পড়তে গিয়ে সম্ভবত প্রথম মাথায় আসে কথাটা। অথবা তারও আগে, হয়ত ঝুম্পা লাহিড়ি পড়ছিলাম যখন, তখন। অথবা, এখন মনে হচ্ছে আরও খানিক আগে, মার্কেজের গল্পগুলো যখন পড়ছিলাম, সম্ভবত তখনই। সাহিত্যপাতায় যে গল্পটা পড়ছিলাম, সেটা আবার সে পত্রিকার সাহিত্য আয়োজনে প্রথম পুরষ্কারপ্রাপ্ত। গল্পের শুরুতে আলাদা রঙ ও ফন্টে সে কথা বিশেষভাবে জানান দেয়া, গল্পের মাঝামাঝি আলাদা একটা বাক্সে লেখকের নাতিদীর্ঘ পরিচিতি, এবং গল্পের সাথে মানানসই চমৎকার একটা ছবি। বেশ আগ্রহ নিয়ে পড়তে শুরু করলাম, একজন লেখকের গল্প। ল্যাপটপে গল্প লিখতে গিয়ে তার কাছে গার্লফ্রেন্ডের ফোন আসে, গল্প না গার্লফ্রেন্ড এই দ্বিধায় কেটে যায় গল্পের বাকি অংশটুকু, সবশেষের লাইনে, দেখা যায় ল্যাপটপ খুলে রেখে লেখক বসে, মোবাইলটা সুইচ্ড অফ। গল্পটা খারাপ লাগে না, পড়ে নিয়ে ভাবি, গল্পটা মন্দ নয়; কিন্তু তারপরেই ভাবি, গল্পটা আসলে কতটুকু ভাল? ঝুম্পা লাহিড়ি পড়তে গিয়ে এমন হয়েছিলো। খুব ভাল লেগেছিলো ইন্টারপ্রেটার অব মেলাডিস, এই সহজ সরল বর্ণনা, বিষয় বাছাইয়ের সারল্য, সবই। কিন্তু মাথায় ঘুরছিলো ওয়ালীউল্লাহ বা হাসান আজিজুল হকের গল্পগু

প্রকাশায়তন নিয়ে টুকটাক ভাবনা-

১। বিদেশী বইগুলো সরাসরি ইংরেজিতে পড়া শুরু করি মূলত দেশের বাইরে এসে। তবে খুব আনন্দ নিয়ে নয়, বাংলা বইয়ের যোগান ছিলো না পর্যাপ্ত, এদিকে বই না পড়লে মাথায় তালগোল লেগে যায়, তখুনি স্থানীয় গণপাঠাগারে গিয়ে বই আনা শুরু করি। সেবা প্র‌কাশ‌নীর অনুবাদের পর সেই প্রথম বিদেশী সাহিত্যের সাথে ভালমতন মোলাকাৎ হলো, লেখকের নাম ধরে ধরে বই শেষ করার পুরনো অভ্যাসটা আবার ভাল মতন জাগিয়ে তুললাম। সাহিত্যের প্রসঙ্গ অবশ্য আজ তুলবো না। সম্প্রতি প্রকাশায়তনের আত্মপ্রকাশ সম্পর্কিত ঘোষণার পর থেকে মাথায় একটা জিনিস ঘুরছে, তাই নিয়ে আলাপ জুড়বো বলেই আজ লিখতে বসা। এখানে এসে পড়া বইগুলো হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখি, প্রায় অনেকগুলো উপন্যাস বা গল্পের বইয়ের লেখক ছাড়াও সম্পাদক ( এডিটর এর বাংলা এ ক্ষেত্রে কী হবে?) বলে একজন আছেন সেখানে। পত্র-পত্রিকার বাইরে বইয়ের সম্পাদ্ক হিসেবে কাউকে দেখতে আমরা অভ্যস্ত নই আসলে। বইয়ের সম্পাদক যিনি, সেটাও ক্ষেত্র বিশেষে, যেখানে আসলে তিনি সংকলক। হয়ত লোকান্তরিত কোন কবি বা সাহিত্যিকের লেখা নিয়ে একটা সমগ্র বেরুবে, সেখানে লেখাগুলো একসাথে জড়ো করে একটা জবরদস্ত ভুমিকা লিখে দেয়া আমাদের সংকলকের দায়িত্ব। আমি একটু অব

আপনার সন্তানকে অন্তত এই বইটি পড়তে দিন-

একদম পলকা একটা বই। বড় বড় হরফে ছাপা সবমিলিয়ে মাত্র ৬৪ পৃষ্ঠা। তার নিজস্ব ওজনের সিংহভাগই হচ্ছে শক্ত বাঁধাইয়ের কল্যাণে। আমার খাবার টেবলের পাশে রাখা ওজন মাপার মেশিনটায় তুললে কাঁটা খুব একটা নড়ে চড়ে না, দেখেছি। কিন্তু পড়তে গিয়ে যতবারই বুকের ওপর রেখেছি, মনে হয়েছে, এর চেয়ে ওজনদার বা ভারী কিছু বোধহয় আর নেই! বইয়ের নাম, একাত্তরের কিশোর মুক্তিযোদ্ধা। মেজর হামিদুল হোসেন তারেক বীর বিক্রমের লেখা বই। একাত্তর সালে লেখক নিজেও কমবয়েসী ছিলেন, হায়ার সেকেন্ডারীতে পড়তেন। তবু সেই সময়েই তিনি যুদ্ধে চলে যান; এবং দেশের নানা জায়গায় তিনি সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করেন। এই বইটি অবশ্য মেজর হামিদুল হোসেনের নিজের গল্প নয়। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তিনি বেশ কয়েকজন কিশোরের সংস্পর্শে আসেন যারা নানা ভাবে যুদ্ধের ময়দানে তাঁকে সহযোগীতা করেছিলো। সেইসব কিশোরদের নিয়ে স্মৃতিচারণ করেই এই বই। সাতটি আলাদা অনুচ্ছেদে সাতজন কিশোর কিশোরীর কথা আছে এখানে। রমজান আলী, শশীলাল চর্মকার, নুরু নাপিত, পুতুল, আজিজ মন্ডল, বারেক ও তোতা। মেজর হামিদুল হোসেন নিয়মিত সাহিত্যিক নন। এই বইটির ভাষায় তাই তেমন কোন মাধুর্য্য নেই। একদম সোজা সাপ্টা লেখা। লেখকের বাংলাও খুব

সাপুড়ে লেখক, মাহমুদুল হক?

মাহমুদুল হকের "কালো বরফ" পড়তে পড়তে, সম্ভবত, বার তিনেক আমাকে পাতা উল্টে প্রথম প্রকাশের তারিখটা দেখে নিতে হয়েছে। ১৯৯২ সালে বেরিয়েছিলো এই বই। ঠিক সতের বছর আগে। কিন্তু তারচেয়েও বড় ব্যাপার হলো, এটির রচনাকাল আরও পেছনে, অগাস্ট ১৯৭৭! তিরিশ কিংবা তারও বেশি বছর বাদে, আমার নিজের চেয়েও বেশি বয়েসী এই বইটা হাতে নিয়ে আমি অবাক হয়ে ভাবছি, মাহমুদুল হক কেমন করে এত বছর আগেই এরকম একটা চির-আধুনিক উপন্যাস লিখে গেলেন! চারপাশের পাওয়া বইগুলোকে চিরকালই আমি উঁইপোকার চেয়েও বেশি যত্নে আর আদরে গিলে নিয়েছি। লেখক বা বইয়ের সংখ্যা হিসেব করলে সেটা অ-নে-ক ল-ম-বা একটা লিস্টি হয়ে দাঁড়াবে কোন সন্দেহ নেই। এবং, কে জানে, মনের গভীরে কোথাও এই নিয়ে হয়তো কোন আত্মতৃপ্তিও কাজ করে আমার মধ্যে। কিন্তু সেটি যে আসলে অনেকটা বোকার স্বর্গের মতই ব্যাপার, এটা টের পেলাম সম্প্রতি "প্রতিদিন একটি রুমাল" আর "কালো বরফ" পড়ার পরে। লেখায় জাদু-টাদুর কথা শুনেছি অনেক। কালো বরফের প্রতিটা পাতায় আমি মনে হলো সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম। উত্তম পুরুষে লেখা একটানা উপন্যাস। আবার ঠিক একটানা নয়। একটা জীবনেরই দুটি সময়ের কথা পরপর অথবা পাশ

আবুল হাসান

এই বুড়ো বয়সে প্রায় বালকবেলার মতই উল্লসিত হয়ে উঠেছি, যখন কাগজের প্যাকেট খুলে দেখি, সেখানে চুপটি করে আমার জন্যে বহুকাল ধরে অপেক্ষা করছেন আবুল হাসান। আমার শৈশব বা কৈশোর কেটেছে আবুলহাসানবিহীন, এবং আশ্চর্য হলো তাতে আমার কোন দুঃখও নেই। প্রাপ্তবয়স্ক হবার আগে মদের পেয়ালা মুখে তোলা মানা, এটা কে না জানে? এই দুপুর-রাতে তাই মাঝারি স্বাস্থ্যের বইটার পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে অজান্তেই কেমন নেশাতুর হয়ে পড়ি। মজার ব্যাপার হলো, আবুল হাসানের নাম প্রথম ভালভাবে শুনি মির্জাপুরের সাকেব ভাইয়ের কল্যাণে। তিনি তখন প্রবল বিক্রমে সামহোয়ারইনে ব্লগিং করেন, কিন্তু আসল নামে নয়। একটা অদ্ভুত নিকে- চামেলি হাতে নিম্নমানের মানুষ। এই লম্বা ও আজব নিকের খোঁজ নিতে গিয়ে প্রথম শুনলাম আবুল হাসানের নাম, তারপরে পড়া হলো তাঁর আশ্চর্য সব কবিতা। সাকেব ভাইই প্রথম কোট করেছিলেন, ঝিনুক নীরবে সহো, সহে যাও, ভিতরে বিষের বালি, মুখ বুজে মুক্তা ফলাও। তারপরে কোত্থেকে কেমন করে খুঁজে পাই সেই বিখ্যাত কবিতা, আসলে আমার বাবা ছিলেন নিম্নমানের মানুষ… । পড়ে টড়ে আমি বেমক্কা তব্দা খেয়ে বসে ছিলাম অনেকক্ষণ। এবার তাই দেশ থেকে বই আনাবার সুযোগ পেতেই লিস্টির একদম শু

আহত ভারতীয় ছাত্র এবং অজিদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদের অভিযোগ-

আমার সহকর্মী ভারতীয় ছেলেটা আমাকে উত্তেজিত স্বরে জিজ্ঞেস করলো, তুমি কি গিয়েছিলে আজ, ফেডারেশন স্কয়ারে? আমি কী একটা খুটখাট করছিলাম কম্পিউটারে। ওর দিকে তাকিয়ে বুঝলাম, ঘটনা খারাপ, পাশের চেয়ার দেখিয়ে বসতে বলে জানালাম, না যাইনি, আমি তো সকাল থেকেই এখানে। কী খবর বলো তো? ও বেশ উঁচু গলায় হড়বড় করে অনেক কথা বলে গেলো। সারমর্ম এরকম, আজ নাকি প্রায় হাজার পাঁচেক ভারতীয় ছাত্র প্রোটেস্ট করেছে সেখানে। পুলিশের সাথে ব্যাপক কথা কাটাকাটি হয়েছে। প্রায় নাকি মারামারি হবার জোগাড় কয়েকবার। ছাত্রদের অভিযোগ ভিক্টোরিয়ান পুলিশ ততটা সক্রিয় নয় নিরাপত্তার ব্যাপারে। মাত্র কদিন আগের ঘটনা। একটু রাতের দিকে স্টেশানে নেমে বাড়ি ফিরছিলো কয়েকজন ভারতীয় ছাত্র। সেখানে হুট করেই ওদেরকে আক্রমণ করে বসে বেশ কিছু ককেশিয়ান যুবক। আক্রমণটা হেলা ফেলা করার মত নয়। মেরে ধরে সাথে যা ছিলো সবই কেড়ে নেয়া হয়েছে, এবং সেই সাথে দু জনকে মারাত্মক আঘাত করা হয়েছে স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে। আমি সেদিন টিভিতে ভিডিও দেখেছিলাম কিছু, দেখে শিউরে উঠেছিলাম, বুকের মাঝামাঝি থেকে একেবারে পেটের তলদেশ পর্যন্ত চিরে ফেলেছে একজনের। তার অবস্থা ভয়াবহ। টিভিতেই দেখালো যে ডাক্তার বলছে

হাওয়াই মিঠাই ১৪

Image
সূর্য বললো ইশ, তুই খাস কেন কিসমিস? এখানকার আবহাওয়াটা সম্ভবত কোন কারণে খুব কনফিউজড হয়ে আছে। কখন কেমন আচরণ করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। বাইরে ঝাঁ চকচকে রোদ, কিন্তু বেরুলেই দেখা যায় সে রোদে কোন তাপ নেই। আমি মনে মনে একচোট হেসে নিই এসব দেখলে। নরকে শুনেছি এমন আগুন থাকবে, তাতে কোন আলো নেই, কিন্তু তাপে সেটা গনগনে হবে। এই রোদের ঠিক উল্টো আচরণ দেখে ভাবি, লোকে এবারে এ জায়গাটাকে স্বর্গ বলে ভুল না করে বসলেই হলো। আলাপের বিষয় খুঁজে না পেলে নাকি আবহাওয়ার আলাপ দিয়েই শুরু করতে হয়। আমি বুঝছি না, আমিও কি সেই পন্থাই ধরলাম? কিছু না পেয়ে শেষে রোদ-সূর্য নিয়ে পড়লাম? অথবা, হয়তো আমিও এখানকার সূর্যের মতই কনফিউজ্ড হয়ে আছি। রাতের বেলা হিটার আর পাখা দুটা জিনিসই বিছানার পাশে দাঁড় করিয়ে রাখি। হুট করে ঘুম ভেঙ্গে গেলে প্রয়োজন মত সুইচ টিপে দিই, ব্যস, আবহাওয়া বদলে যায়। গত কদিন ধরে ভাবছি, আমার হাতে আসলে আরও কিছু সুইচ থাকা খুব দরকার ছিলো। অন্তত, ইচ্ছে হলেই যদি চারপাশের দেশটা বদলে ফেলতে পারতাম! বাসা ভেঙ্গে বাক্স বানাই চার মাস আগে আমার ফেইসবুকের স্ট্যাটাস ছিলো এরকম কিছু। চারমাস আগে আসলে বাসা বদলাচ্ছিলাম। এটা একটা বিরাট যন্ত্

পুরনো প্রেমিকাদের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে-

উহুঁ, আলাদা ফিস-টিস নেই চাইলে, হাতে লেখা সাদা কাগজের একটা ফরম দিতে পারি। সেখানে নাম-ধাম লিখে- সাথে পিতার বৈষয়িক বৃত্তান্ত, এবং নীল না পেলে না হয় সাদা খামে পুরেই আমার বুক পকেটে ফেলে যেও মেয়ে। শুধু তোমার জন্যই, জেনো, শুধু তোমাকে ভেবেই আমি কাগজে বিজ্ঞাপন দেইনি কোনও। নইলে দু"কলামে রঙীন হরফে ছেপে দেয়াই তো যেতো- "কবি-র প্রেমিকা পদে লোক নিয়োগ হচ্ছে।" হাওয়া শুঁকে শুঁকে আমি টের পেয়ে গেছি, আমার পুরনো সব প্রেমিকাদের ইদানিং সার বেঁধে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। -------------- ৪ মে, ২০০৯

ঈশ্বর যেখানে অবশ্যই উপস্থিত-

অল্প কয়বছর হলো আমি খানিকটা সুস্থির হয়েছি, তার আগে, যখন ছোট ছিলাম, অথবা এমনকি কলেজে থাকাকালীনও, যাবতীয় রোগ বা অসুখের আমি খুব প্রিয় ছিলাম। যখন যে রোগের চল দেখা যেত, আমি বীরত্বের সাথে সেই রোগ বাঁধিয়ে বসতাম। ক্লাস সেভেনের থার্ড টার্মে, আমাদের কলেজে একধারসে অনেকের চিকেন পক্স হয়ে গেলো। ক্লাসের বন্ধুরা একেকদিন ক্লাসে আসে, লানচের পরে গেমসে যাবার সময় দেখি হাসপাতালের বারান্দা থেকে তাদের বিগলিত হাসি। কী হয়েছে? না, ওনারা চিকেন পক্স বাঁধিয়ে বসেছেন। আগামী একুশ দিন তাদের কলেজের যাবতীয় পিটি-প্যারেড-পাঙ্গা থেকে ছুটি! কি মজা, আমি নিশ্চিত যে আমারও হবে। কিন্তু টার্ম প্রায় শেষ হতে চললো আমার পক্সের কোন লক্ষণ নেই। বিরক্ত হয়ে ভাবছি ব্যাপার কী? তো, টার্ম শেষের তিন দিন আগে পক্স বাবাজী ভাবলেন, এ ছেলেকে হতাশ করে কী লাভ? তিনি আমাতে অবতীর্ণ হলেন। সবাই যখন ছুটিতে যাবার আনন্দে মশগুল, আমি তখন বিরস বদনে হাসপাতালে গেলাম। একুশ দিনের ছুটির আঠারো দিনই আমার ঘরবন্দী কেটে গেলো, বিছানায়। এরকম কম ঘটেনি। হাত-কাটা বা পা-ভাঙ্গা, এসব সাধারণ ঝামেলা বাদেও আমি নিজ থেকে আরও ভয়াবহ সব অসুখে পড়তাম নির্দ্বিধায়! এর ধারাবাহিকতা কাটলো না কলে

গল্পঃ কাঠের সেনাপতি

আব্বার সাথে রাশেদের আজ আশ্চর্য শত্রুতা। আজ সারাদিন, দিনমান। ছোট্ট চায়ের টেবলের দু'পাশে ওরা দু'জন ঠিক দুই যুযুধানের মতন দাবার গুটি নিয়ে বসে আছে সকাল থেকে। কখনও গালে হাত, কখনও বাঁকানো ভ্রু, কখনও চুপচাপ। আব্বার অফিস ছুটি আজ, রাশেদের ইশকুলও তাই। ওদের সারা ঘরে ছুটির আমেজ এলিয়ে আছে, বসার ঘর থেকে রান্নাঘর, সেখান থেকে বারান্দায়, সবখানে। আপাতত শুধু ছুটি নেই দুজনের মাথার ভেতর, তুমুল তান্ডব তাতে, যুদ্ধ পরিকল্পনায় ব্যস্ত, আর বাইরে তবু বেশ নিরাবেগ, অথবা ভঙ্গিটা সেরকমই, খাঁজ কাটা সুন্দর কাঠের সাদা কালো সৈন্যদের ওরা লেলিয়ে দেয় একে অপরের দিকে। একটা অদ্ভুত দৃশ্য যেন টুপ করে বসে পড়ে টেবলের চারপাশ ঘিরে, যেন ঢাল-তলোয়ার হাতে দুই সৈন্য, যুদ্ধের ময়দানে পরস্পরের মুখোমুখি। দাবা, আসলে বুদ্ধিরই খেলা, দু'জনের কেউই তাই হার মানতে রাজি নয়। কেউ কেউ জানে, কেউ জানে না, দাবার ছক কাটা বর্গাকার ঘরগুলোকে পেরিয়ে যেতেও বাস্তবিক, যোদ্ধাসুলভ একটা দক্ষতার খুব প্রয়োজন হয়। আব্বার সাদা গুটি হয়ত পেছন থেকে তাড়া করে আসতে থাকে রাশেদের কালোর দিকে, আর রাশেদ তখন তার অলক্ষ্যে কাগজের ময়দানের অন্য কোন পার্শ্বে হয়তো তার অন্য কোন