Posts

দ্য ক্যাচার ইন দ্য রাই | জে ডি স্যালিঞ্জার

Image
অদ্ভুত এই বইটার শুরুর দিকে একবার মনে হলো, হোল্ডেন কফিল্ডের মধ্যে পছন্দ করার মত খুব বেশি কিছু নেই। আবার হয়তো আছেও, কে জানে! ভালো একটা স্কুলে পড়তো, কিন্তু ভালো লাগে না বলে ক্রিসমাসের ছুটির আগে আগে সে স্কুল ছেড়ে দিচ্ছে। ( অথবা এটাও বলা যায়, শুধু ইংরেজি ছাড়া আর কোনো বিষয়ে পাশ করতে পারেনি বলে স্কুলই তাকে ছেড়ে দিচ্ছে।) ছুটি যেদিন হবার কথা, তার কয়েকদিন আগেই বের হয়ে যায় হোল্ডেন। বাবা-মাকে বলা যাবে না, তাই বাড়ি না গিয়ে বাকি সময়টা পার করতে হবে এই শহরেই। এই দিনগুলোর গল্প নিয়েই এই বই। চেষ্টা করলাম যতটা নিরাসক্তি নিয়ে বলা যায়, তবে স্বীকার করছি, পড়তে গিয়ে আগ্রহ চেপে রাখা যায়নি। ঘটনার জন্যে যতটা, তারচেয়ে অনেক বেশি যেভাবে বলা হয়েছে গল্পটা তার জন্যে। সম্ভবত বলার (বা লেখার) এই সাংঘাতিক স্টাইলটাই এই বইয়ের সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব। বইয়ের মাঝপথে গিয়ে হোল্ডেনের লাগামছাড়া ভাবনাগুলি পড়তে পড়তে বহুবার হিংসা হয়েছে। মনে হয়েছে, এভাবে বলতে বা লিখতে পারলে দারুণ হতো। প্রতিটা ক্লিকের সাথে সাথে ছবির সঙ্গে অটো-ফিল্টার জুড়ে যাওয়ার এই ভানসর্বস্ব সময়ে বসে, স্যালিঞ্জারের রাখঢাকবিহীন অকপট ছবির মতন বিরতিহীন এই উপন্যাস শেষ করে সত্যি

ঋতুপর্ণ ঘোষ: চলচ্চিত্র, জীবন ও সাক্ষাৎকার | নাফিস সাদিক

Image
  রেইনকোট সিনেমার বাংলা স্ক্রিনপ্লে খুঁজতে গিয়ে ঋতুপর্ণকে নিয়ে লেখা এই বইটা হাতে তুলে নেয়া হলো। তার আগে পরিচয় হলো এর লেখক নাফিস সাদিকের সাথেও। আর ভাগ্যিস, হয়েছিল! দারুণ কিছু তথ্য জানা হলো ওঁর সূত্রে। সেটাই আরও বিশদে জানলাম বইটা পড়ে। ও’ হেনরির গল্প থেকে রেইনকোটের অস্থিমজ্জা নেয়া, এমনটাই জানতাম। দেখা গেল, এটা হয়ত পুরোপুরি সত্যি নয়। মনোজ বসুর একটা গল্প আছে, নাম প্রতিহিংসা। সেটাও পড়লাম। মিলিয়ে দেখলে, রেইনকোট যে আসলে পুরোপুরি সেটার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে, সে-বিষয়ে কোনো সন্দেহ থাকে না। সেই গল্পের চরিত্র, নামের মিল, এবং রেইনকোটের উল্লেখ, ঘটনার ক্রম, এই সব কিছুই সিনেমাটার সাথে নব্বই ভাগ মিলে যায়। তাহলে ঋতুপর্ণ কোথাও মনোজ বসুকে কৃতিত্ব দিলেন না কেন? তবে এ-কথাও সত্যি, মনোজ বসুর গল্প পড়ে আমার মনে হয়েছে, সেটা সম্ভবত ও’ হেনরির গল্পের অনুপ্রেরণা থেকে লেখা। সাহিত্যের ভাষায় যেটাকে বলে ইন্টারটেক্সচুয়ালিটি। তবে তারপরেও ঋতুপর্ণ-র বসুকে কৃতিত্ব না দেয়ার হিসাব আসলে মেলে না। এই রহস্য আর কখনো হয়ত জানাও হবে না। রেইনকোট গুটিয়ে রাখার পরে এবার বইটা শুরু থেকে পড়া ধরলাম। নাফিস সাদিকের বাংলা খুব সুন্দর, শব্দচয়ন

কী শোভা কী ছায়া গো

Image
ক্রিকেট বিশ্বকাপের খেলাগুলো দেখছি মাঝে মাঝে। খেলার শুরুতে সব দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানোর সময়টা খুব ভাল লাগে দেখতে। সব খেলোয়াড়দের মুখের দিকে দেখি, কী নিখাদ ভালবাসা সবার, নিজের দেশের জন্যে। কলকাতায় বাংলাদেশের খেলার দিন মজা হলো। খেলোয়াড়দের সাথে করে মাঠে নিয়ে যায় যে ছোট্ট শিশুরা, দেখি ওদের অনেকেই বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতে গলা মেলাচ্ছে! খুব মিষ্টি লাগলো দেখতে। ওদেরও তো গানটা জানা! এই খেলার সময়গুলোয় বারবার মনে আসে, আমাদের জাতীয় সঙ্গীতটা কী সুন্দর! বড় হয়ে গেছি, শিশুবেলার মোহ কেটে গেছে অনেক আগেই। আমরা এখন জানি, সকল দেশের রাণী আসলে আমার জন্মভূমি না। রাণী হবার জন্যে চেষ্টা, উদ্যম আর শ্রম জরুরী। সেটা না দিলে রাণীর বদলে আমাদের দেশ হয়ে থাকবে ঘুঁটেকুড়ুনি। তবে হয়ত, জাতীয় সঙ্গীতে আমরা আসলেই সেরা। সবাই দেশের কথা বলে, দেশের রাজা রাণীর কথা বলে। আর আমরা কেমন দেশটাকে মা বানিয়ে সেই মাকে নিয়ে গান লিখেছি। বলেছি, কী শোভা, কী ছায়া, কী স্নেহ, আর কী মায়া মায়ের আঁচলে। বলেছি, মায়ের মুখ মলিন হলে আমরা কেঁদে বুক ভাসাই, মায়ের মুখের কথা আমাদের কানে কেমন সুধার মত বেজে ওঠে। এত সুন্দর জাতীয় সঙ্গীত কি আর কারো আছে?

পারাপার | শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

Image
  এই একটা বইয়েরই তিনটা কপি রয়েছে আমার কাছে। প্রথমটা বহু বছর আগে ছোটমামার দেয়া উপহার। নিজে দেশ ছেড়ে চলে যাবার আগে মামা কিনে দিয়েছিল। তার দু’বছর বাদে আমি দেশ ছাড়ি যখন, তখন আরও দু’টি বাংলা বইয়ের সাথে এটি ছিল আমার সঙ্গী। মামা নেই, তবে এই বইয়ের প্রচ্ছদ ওল্টালে দ্বিতীয় পাতায় মামার হাতের লেখা এখনও আছে। ‘পারাপার’ আমার খুব প্রিয় বই। এই বুড়ো বয়সে এসে সবচেয়ে প্রিয় বইয়ের তালিকা এখন আর খুব ছোট নেই। অনেকগুলো বইয়ের নাম সেখানে গাদাগাদি করে আছে। ওয়ানডে ক্রিকেটের বেস্ট অলরাউন্ডারের তালিকার মত সেখানে বইয়ের নামের বদল হয় নিয়মিতই। তবে, সবচেয়ে প্রিয় বই বলে একটা কিছু যে হতে পারে, এই ধারণা আমার ভেতরে প্রথম এসেছিল ‘পারাপার’ পড়ার পরে। এই বইয়ের সবাই; ললিত, সঞ্জয়, তুলসী, রমেন- এরা প্রত্যেকে যেন আমিই। ললিতের মতই ‘নিজের মন না বোঝা’ কোনো এক শাশ্বতীর দিকে তাকিয়ে যেন জীবন কাটিয়ে দিচ্ছি আমিও। আমি যেন তুলসীর মত ভীতু কেউ, হঠাৎ আয়নায় আগন্তুক দেখে চমকে যায় যে। অথবা আমি যেন সঞ্জয়, সুযোগসন্ধানী কোনো বেনিয়া, তবে বন্ধু-অন্তপ্রাণ। অথবা রমেন, রেলে কাটা মানুষকে যে বুকে টেনে বসে থাকে, পিয়ানো বাজিয়ে যে গায় পূব বাংলার মাঝিদের গান। বহ

Consider This | Chuck Palahniuk

Image
বইয়ের লেখক Chuck Palahniuk কে চিনতাম না। তবে তাঁর ঝুলির সবচেয়ে বিখ্যাত বইয়ের নাম Fight Club জানতে পেরে এই বইটা উল্টে পাল্টে দেখার ইচ্ছা হল।   লেখালেখির কলাকৌশল নিয়ে এ বই। তবে নির্দিষ্ট কোনো ফর্মুলা বা কার্যবিধি দেয়া নেই এটায়। বরং ছোট ছোট বিভিন্ন দিক নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা , উপলব্ধি আর পর্যবেক্ষণ বলে গেছেন লেখক।   পড়তে সহজ ও আগ্রহোদ্দীপক লেগেছে , টানা পড়ে শেষ করে ফেলা গেল।  তবে বারবার হয়ত পড়া হবে না। 

ঊনগল্প | বিবর্তন

Image
মানুষ বেঁচে থাকলে বদলায়, আর মরে গেলে স্ক্রিনশট হয়ে যায়।

The Boy, the Mole, the Fox and the Horse | Charlie Mackesy

Image
  কুইন্সটাউন এয়ারপোর্টের ওয়েটিং লাউঞ্জে কয়েকটা খাবার দোকানের পাশে একটা বইয়ের দোকানও আছে। ফ্লাইটের জন্যে অপেক্ষা করার ফাঁকে সেখানে ঢুকে প্রথম কয়েকটা পাতা উল্টেই এই বইটা বেশ ভাল লেগে গেল। এরকম মোটা নিবের কালি-কলমের লুজ স্ট্রোকে আঁকা আর জলরং এর ওয়াশ দেয়া ইলাসট্রেশন আমার খুব ভাল লাগে। অনেকটা মোটা তুলির টানের মত। বইয়ের গল্পটাও বেশ। অবশ্য নির্দিষ্ট কোনো গল্প আছে এখানে, সেরকমটা বলা যাবে না। বরং এখানে একটা ভ্রমণের গল্প বলা। আর সেই ভ্রমণের বাঁকে বাঁকে দারুণ সব আত্মোপলব্ধি জুড়ে দেয়া। "আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া হচ্ছে কোনো ঘটনায় আমরা কী প্রতিক্রিয়া দেখাব সেই স্বাধীনতা থাকা।" এই কথাটা, এবং এরকম আরও কয়েকটা কথা খুব সুন্দর করে বলা এখানে। কেমন স্বস্তি দেয় মনে, এক ধরনের অ্যাফার্মেশনের মত। বুড়ো হয়ে গেছি বলেই হয়ত এখন আর উপদেশ-ঘেঁষা কথা খুব বেশি উপভোগ করতে পারিনা। তবে এই বইটা পড়ে যেতে বেশ শান্তি লাগলো। সব মানুষই হয়ত কোনো না কোনো ভাবে একটা বোধিবৃক্ষের খোঁজ করে মনে মনে।

ঊনগল্প | আশীর্বাদ ২০২৩ | তারেক নূরুল হাসান

Image
  অনাহারে চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে দেখতে পেয়ে ভিক্ষা চাইতে আসা মানুষটাকে দরজার পাশে বসিয়ে বেশ খানিকটা ডাল-ভাত খেতে দিল বাড়ির গৃহিনী। পেট পুরে খেতে পেয়ে খুউব খুশি হল সে। বাড়ির ছোট খোকন খেলতে বেরুচ্ছিল। গৃহিনী বলল, 'একটু দোয়া করে দেন ওকে।' সন্তুষ্ট ভিখারী খুব করে গায়ে মাথায় আশীর্বাদের হাত বুলিয়ে দিল খোকনের। আর মুখে বলল, 'অনেক দোয়া করি বাপ, বড় হয়ে জীবনে অনেক বড় কন্টেন্ট হও, বংশের মুখ উজ্জ্বল করো।' আশীর্বাদ ২০২৩ | তারেক নূরুল হাসান  (২৭/০৬/২০২৩)

সূর্যমুখীর এরোপ্লেন | ইন্দ্রাণী

Image
  এই বইটার আমার কাছে আসবার কোনো কথা ছিল না। তবু যে এটা পথ খুঁজে নিয়ে ঠিকই আমার কাছে পৌঁছে গেল, তার পেছনে নিশ্চয়ই কোনো কারন রয়েছে। সেটা কী হতে পারে, তা জানতেই হয়ত আজ বইটা হাতে তুলে নেয়া হল। আর তারপরেই সূর্যমুখীর এরোপ্লেন আমাকে একটা ভীষণ টার্বুলেন্সের মধ্য দিয়ে উড়িয়ে নিয়ে চলল যেন। বিগত অনেকগুলি বছর ধরে ইন্দ্রাণীদির লেখা অনিয়মিতভাবে পড়া হয়েছে অনলাইনে। কিন্তু দুই মলাটের ভেতরে এক সাথে এতগুলো গল্পসহ এই বইটা যেন একটা ঘুমিয়ে থাকা বোমা। গল্পগুলোর ভেতরে অনেক চিন্তার উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। বোঝা যায়, এলেবেলে করে এগুলো লেখা হয়নি, বরং সময় নিয়ে, যত্ন নিয়ে এদের পরিচর্যা করা হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমার যে ধরনের গল্প সবচেয়ে পছন্দের, এগুলো একদম সেই টেক্সটবুক থেকে উঠে এসেছে যেন। গল্প যেন নয় শুধু, পাতার পর পাতা জুড়ে যেন ছবি বসানো হয়েছে পর পর। অথবা যেন একটা ছবিরই বই এটা, সব ছবি মিলে গল্প হয়ে গেছে হঠাৎ করে। লেখা দিয়ে ছবি আঁকা সহজ কাজ নয়। কিন্তু এত সাবলীলভাবে সেটা এ বইয়ে করা হয়েছে, মনে হবে এর চেয়ে সহজ কিছু নেই বোধহয় আর। ইন্দ্রাণী যেন নিজের গল্পের সেই কালো টুপি পরা ম্যাজিশিয়ান। শব্দের ওপর, ভাষার ওপর, চরিত্রের ও

মহাশূন্যের গন্ধ নাকি পোড়া মাংসের মত | মিনহাজ রহমান

Image
চমৎকার একটা থ্রিলার পড়ে ফেললাম। লেখক মিনহাজ রহমানের খোঁজ পেয়েছি অনেক বছর হয়ে গেল। বাংলা ইবুক প্রকাশের চেষ্টায় আমি একটা সাইট খুলেছিলাম, নাম ছিল বইদ্বীপ প্রকাশনী। আমার নিজস্ব খামতিসহ আরও বিভিন্ন কারণে এই প্রকল্প নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে, তবে সে সময়কার কিছু সম্পর্ক এখনও টিকে আছে। মিনহাজ রহমানের একটা বই প্রকাশিত হয়েছিল বইদ্বীপ থেকে। নাম- চন্দ্রগ্রস্ত। সেটা ছিল একটা সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার। এই বইটাকেও সেই দলে ফেলা যায় বোধহয়। তবে থ্রিলার হলেও এই উপন্যাসের ভাষা বেশ উইটি। প্রচুর ইমেজারি ব্যবহার করেছেন লেখক। আর অনেক ক্লু ছড়িয়ে রাখা বই জুড়ে। যেগুলো মজা নষ্ট করেনি, বরং বই শেষ করে ক্লুগুলির কথা মনে করিয়ে বই পড়ার আনন্দ বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক। আনরিলায়েবল ন্যারেটর এর একটা চমৎকার উদাহরণ হয়ে থাকবে এ বইটা আমার কাছে। এই টেকনিকটা খুব ঝামেলাপূর্ণ, খানিক এদিক ওদিক হলে গল্পের বারোটা বাজিয়ে দিতে পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও মিনহাজ রহমানের পরিমিতিবোধ ঈর্ষণীয়। চরিত্রগুলি বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে, নিজেদের মধ্যে আলাপগুলিও অবান্তর মনে হয়নি। বইটি প্রকাশ করেছে দ্বিমত প্রকাশনী। ওদের আর কোনো বই আগে হাতে আসেনি আমার। এই বইয়ের প্রোডাকশন