হাওয়াই মিঠাই ১২
তুমুল গরম নেমেছে এখানে। চোখের পাতায়, চামড়ায়, এমনকি চামড়া ভেদ করে একদম ভেতর পর্যন্ত অনুভুত হয় গরম। পুরো শীতকাল কাটিয়ে দিলাম ১৩/১৪-র আশপাশ দিয়ে। এখন দিন নেই রাত নেই- সারাক্ষণই ৩০!
গরম নেমেছে মাথায়, নেমেছে রাস্তায়, রাস্তার লোকেদের জামা কাপড়েও। মাথার চুল একদম ছোট করে ফেলবো ভাবছি, দিনের বেলা রাস্তায় আর বেরুবো না ভাবছি, রাস্তার মানুষদের দিকে, ও হরি, মেয়ে বলেই তাকাতে হবে? নাহ, আর তাকাবো না ভাবছি। পাপ হয়ে যাবার চান্স আছে বিস্তর।
বর্ষার দিনে তবু মনে হয়, এমন দিনে তারে বলা যায়। এমন গরমে কারে কী বলি?
সবচে মজায় আছেন যিনি, তার নাম আকাশ। রোজ সক্কাল থেকে তিনি রঙিলা হয়ে ওঠেন, সারা দিনমান ধরে সাজেন গুঁজেন, সন্ধ্যায় তিনি টকটকা রূপসী! সেই কবে কখন কোন কৈশোরে, ইশকুলের সিঁড়িতে কারে দেখে যেন হৃদয় থেমে গেছিলো, আজকাল আকাশ দেখলেও তাই কেন হবে? একপাশে গোলাপী একপাশে কমলা, মাঝে শুধু নীল নীল নীল, আর কি ভীষণ দেমাকী!
কাজ শেষে, বিকেলে, ভুল করে ওপরে তাকিয়েছি তো গেছি, আমি আর নেই নেই নেই। মাথা খারাপ হবার জোগাঢ়! তাপ্পর, পক্ষীরাজ নিয়ে দেই ছুট। আবারো ছেলেবেলা, যেন স্কুল-ড্রেস পরা কোন কিশোরীর রিকশার পিছু নিয়েছি, বুকের ভেতর দ্রিম দ্রিম দ্রিম। তেমন করেই পক্ষীরাজ ছোটাই, আজ আমি আকাশ ধরবোই ধরবো।
কিন্তু তিনি জোছনার ফুলের মতই মায়াময়, সন্ধে নেমে আসে, তবু ধরা দেন না। আমি দিক বদলে বাড়ি ফিরে আসি।
*
মিষ্টি আর খাবো না, মনে মনে পণ করেছি। কিন্তু তা রাখবার উপায় পাচ্ছি না। দোকান ঘুরে ঘুরে মিষ্টি চাখার অভ্যেস যাও বা যাই যাই, কিন্তু মিষ্টি খাওয়া কমেনি এক ফোঁটা।
সব দোষ আলমগীর ভাইয়ের। তিনি সচলে লিখেন বলেই না তার বাড়ি যাওয়া। তিনি ভাল গিটার বাজান বলেই না আসর জমিয়ে বসা সেখানে।
অথবা, সব দোষ ভাবীরও। ডেজার্টের উপরে পিএইচডি দেয় না এই দেশের সরকার, দিলে প্রথমটা নির্ঘাত ওনার কবলে চলে আসতো।
অথবা, সব দোষ অপনারও। নইলে আমার বউ কেন বলবে, চল, গিয়ে ওই পিচ্চিটাকে দেখে আসি আজ?
তো যাই আমরা। গীটার বাজে, ভাবী বাজান কী-বোর্ড, আমার বউ গান গায়। এত সব গুণীদের মাঝে আমরা দুই বেকুব শ্রোতা, আমি আর পিচ্চি অপনা, চুপচাপ শুনে যাই শুধু।
খেয়ে আসি, আসবার সময় ভাবী আবার বাক্সে ভরে দিয়ে দেন ফালুদা, রসগোল্লা। আমি চকচকে চোখে দেখি, আগামী দিন কুড়ির বন্দোবস্ত হয়ে যায় তাতে। মনে মনে ঠিক করে ফেলি, মিষ্টি শেষ হয়ে গেলে আবার হাজির হতে হবে এই বাড়িতে!
*
ধুমধাম মুভি দেখছি অনেক। দেখলাম ট্রেড। নারী পাচার নিয়ে সিনেমা, মেক্সিকান পটভূমিতে। গা শিরশির করে উঠলো দেখে। সিনেমার পর্দায় ভাইটা যখন কাঁদছিলো, ভাবছিলাম ভাগ্যিস, আমার কোন বোন নেই!
দেখলাম, ড্রাগন ওয়ার! একদমই ভুয়া! গ্রাফিক্সের কাজের কি দারুণ অপচয়। এত বাজে অভিনয়! এত বাজে কাহিনি!!
ডিভিডির কাভারে বড় করে লেখা, নিউ ইয়র্ক টাইমসের এন্ডি ওয়েবস্টার লিখেছেন, ড্রাগন ওয়ার রকস! লিখেছেন, ইট ইস ইম্পসিবল নট টু বি এন্টারটেইন্ড।
এই নামটা ঝটপট মুখস্ত করে ফেললাম। এঁর ভাল বলা মুভি আর জীবনেও দেখা যাবে না!