অণুগল্পঃ বনসাঁই
থোকা থোকা আগুন ভর্তি গাছটার নিচে মুখ অন্ধকার করে দাঁড়িয়ে আছে সজীব। ছটফটে একটা ভঙ্গি ওর সারা দেহে, ঘড়ি দেখছে বারবার। শিলা আজ খুব বেশি দেরি করে ফেলছে- টিউশানীতে ঠিক সময়ে পৌঁছতে হলে সজীবের এক্ষুনি উচিৎ বাস ধরতে ছোটা। কিন্তু সে উপায় নেই। ক্লাস শেষ হবার পরে এইটুকুই যা সময়, এখন চলে গেলে আজ আর দেখা হবে না।
শুরুতে অবশ্য এত ঝামেলা পোহাতে হতো না। ক-ইউনিটে পরীক্ষা দিয়ে এক সাবজেক্টেই পড়ছিলো দু'জনে, একসাথে। পরে মাইগ্রেট করে বিষয় বদলে শিলা চলে যায় অন্য ডিপার্টমেন্টে। আর তারপর থেকেই সজীবের রোজকার এই নতুন রুটিন, প্রতিদিন ক্লাস শেষে দু'পলকের এই দেখা!
আজ সকালে ছুটতে ছুটতে ক্লাসে যাবার সময় অবশ্য শিলাকে দেখেছে একটুখানি, কমলা রঙের একটা স্বপ্ন-স্বপ্ন জামা পড়ে রিকশা থেকে নামছিলো। কথা হয় নি, তার ক্ষতিপূরণ হিসেবেই যেন আজ ক্লাসের পুরোটা সময় ওর মাথা কমলা রঙে শুধু ডুবছিলো আর ভাসছিলো।
কার্জন হলের পাশ দিয়ে টুংটাং ঘন্টা বাজিয়ে ছুটে চলা রিকশাগুলোর চেয়েও দ্রুত গতিতে ছুটছে যেন ওর ঘড়ির কাঁটা। অল্প খানিকটা বাতাস দিচ্ছে, সেই হাওয়ায় মাথার ওপর থেকে টুপ করে খসে পড়ে একটা কৃষ্ণচূড়া, সজীবের কাঁধে ধাক্কা দিয়ে অভিমানী মেয়ের মতন মুখ গুঁজে পড়ে সে মাটিতে। মাথা নীচু করে ফুলটা তুলতে যেতেই চোখের কোনা দিয়ে দেখতে পায় সজীব, শিলা আসছে।
কাঁধের ওপর বইয়ের ব্যাগ ঝোলানো, বাম হাতে ওটা ক্লাসেরই কোন বই হবে, আর ডান হাতে শাহেদের হাত ধরা মুঠি করে।
শাহেদ, বায়োকেমিস্ট্রির ভালো ছাত্র, ক্রিকেট খেলায় নির্বিচারে চার-ছয় মেরে যায়, বড় বড় হাতের আঙ্গুল চেপে খুব জোরে বলও করতে পারে। আকাশে বল উঠে গেলে নিরাপদে লুফে নেবার জন্যেও এরকম হাতেরই কদর আছে, সবসময়।
যেতে যেতে সজীবকে দেখতে পায় শিলা। দূর থেকে হাত নাড়ায়, ' কি রে, টিএসসি-তে যাবি? সিনেমা দেখাচ্ছে ফিল্ম সোসাইটি!'
মাথা নাড়ে সজীব, ' না রে, টিউশানী আছে, তোরা যা না, দ্যাখ গিয়ে'।
চলে যায় ওরা। ওদের রিকশাটা চোখের আড়ালে যেতেই জমে থাকা দীর্ঘশ্বাসটা মুঠো করে ধরে ফেলে সজীব, কৃষ্ণচূড়া ফুলটার গায়ে আদর করে বুলিয়ে দেয় সেটুকু।
হাতের ইশারায় একটা রিকশা থামিয়ে তাতে চড়ে বসে সে, ভুরু কুঁচকে ভাবছে- আজ বোধহয় দেরি হয়েই যাবে ওর।
-----------
সচলায়তন অণুগল্প সংকলন "দিয়াশলাই"-এ প্রকাশিত।
শুরুতে অবশ্য এত ঝামেলা পোহাতে হতো না। ক-ইউনিটে পরীক্ষা দিয়ে এক সাবজেক্টেই পড়ছিলো দু'জনে, একসাথে। পরে মাইগ্রেট করে বিষয় বদলে শিলা চলে যায় অন্য ডিপার্টমেন্টে। আর তারপর থেকেই সজীবের রোজকার এই নতুন রুটিন, প্রতিদিন ক্লাস শেষে দু'পলকের এই দেখা!
আজ সকালে ছুটতে ছুটতে ক্লাসে যাবার সময় অবশ্য শিলাকে দেখেছে একটুখানি, কমলা রঙের একটা স্বপ্ন-স্বপ্ন জামা পড়ে রিকশা থেকে নামছিলো। কথা হয় নি, তার ক্ষতিপূরণ হিসেবেই যেন আজ ক্লাসের পুরোটা সময় ওর মাথা কমলা রঙে শুধু ডুবছিলো আর ভাসছিলো।
কার্জন হলের পাশ দিয়ে টুংটাং ঘন্টা বাজিয়ে ছুটে চলা রিকশাগুলোর চেয়েও দ্রুত গতিতে ছুটছে যেন ওর ঘড়ির কাঁটা। অল্প খানিকটা বাতাস দিচ্ছে, সেই হাওয়ায় মাথার ওপর থেকে টুপ করে খসে পড়ে একটা কৃষ্ণচূড়া, সজীবের কাঁধে ধাক্কা দিয়ে অভিমানী মেয়ের মতন মুখ গুঁজে পড়ে সে মাটিতে। মাথা নীচু করে ফুলটা তুলতে যেতেই চোখের কোনা দিয়ে দেখতে পায় সজীব, শিলা আসছে।
কাঁধের ওপর বইয়ের ব্যাগ ঝোলানো, বাম হাতে ওটা ক্লাসেরই কোন বই হবে, আর ডান হাতে শাহেদের হাত ধরা মুঠি করে।
শাহেদ, বায়োকেমিস্ট্রির ভালো ছাত্র, ক্রিকেট খেলায় নির্বিচারে চার-ছয় মেরে যায়, বড় বড় হাতের আঙ্গুল চেপে খুব জোরে বলও করতে পারে। আকাশে বল উঠে গেলে নিরাপদে লুফে নেবার জন্যেও এরকম হাতেরই কদর আছে, সবসময়।
যেতে যেতে সজীবকে দেখতে পায় শিলা। দূর থেকে হাত নাড়ায়, ' কি রে, টিএসসি-তে যাবি? সিনেমা দেখাচ্ছে ফিল্ম সোসাইটি!'
মাথা নাড়ে সজীব, ' না রে, টিউশানী আছে, তোরা যা না, দ্যাখ গিয়ে'।
চলে যায় ওরা। ওদের রিকশাটা চোখের আড়ালে যেতেই জমে থাকা দীর্ঘশ্বাসটা মুঠো করে ধরে ফেলে সজীব, কৃষ্ণচূড়া ফুলটার গায়ে আদর করে বুলিয়ে দেয় সেটুকু।
হাতের ইশারায় একটা রিকশা থামিয়ে তাতে চড়ে বসে সে, ভুরু কুঁচকে ভাবছে- আজ বোধহয় দেরি হয়েই যাবে ওর।
-----------
সচলায়তন অণুগল্প সংকলন "দিয়াশলাই"-এ প্রকাশিত।