Posts

Showing posts from October, 2007

নাটকঃ মরটিন, মশা অথবা হাত

দৃশ্য-১ পর্দা উঠবে। ব্যাকগ্রাউন্ডে মশার পিন পিন শব্দ। মঞ্চের মাঝখানে একটা বিছানা, তাতে গোলাপী রঙের মশারী টানানো। পাশেই চেয়ার, সেখানে রমিজ আলী বসে থাকবেন। গায়ে স্যান্ডো গেঞ্জী, চোখে চশমা। ভুরু কুচকে পত্রিকা পড়বেন। ডানপাশের কোনা থেকে একটা ফুটলাইট জ্বলবে। আলো পড়বে রমিজ আলীর গায়ের উপরে। পেছনের দেয়ালে তার ছায়া দেখা যাবে। দৃশ্য-২ আলো বদল। এবার মাঝের ফুটলাইট জ্বলে উঠবে। আগের বাতি নিভবে না। রমিজ আলী পত্রিকা পড়তে পড়তে মাথা দোলাবেন। এপাশ ওপাশ। হতাশা সূচক। পত্রিকার এ পাশটায় নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ের ছবি দেখা যাবে। দুজন টুপিওয়ালা থাকবে সে ছবিতে, একজনের লালচে দাঁড়ি। ব্যাকগ্রাউন্ডে মশার পিন পিন অব্যাহত। দৃশ্য-৩ মাথার ওপরের বাতি জ্বলে উঠবে। আলো রমিজ আলীর ওপর। রমিজ আলী উঠে দাঁড়াবেন। পত্রিকা চেয়ারে রেখে দু'হাত প্রসারিত করে হাই তুলবেন। তারপরে মশারির ভেতরে ঢুকে যাবেন। দৃশ্য-৪ মশারির পাশের ফুটলাইট জ্বলে উঠবে। মশার পিন পিন আওয়াজ একটু বেড়ে যাবে। রমিজ আলী দু হাতের চাপড়ে দু একটা মশা মারার চেষ্টা করবেন। তারপর লম্বা হয়ে শুয়ে পড়বেন বিছানায়। আলো কমে আসবে। খানিকপর রমিজ আলীর ভারি নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাবে।

আমি গাইবো বিজয়েরই গান...

মানুষের মানসিক গঠনটাই আসলে এরকম, বিশেষ করে অপরাধী মন যাদের। নিজের অপরাধ ঢাকবার জন্যে আপন মনেই নিজেকে প্রবোধ দেয়, নিজের কৃতকর্মকে অস্বীকার করে। একটা পর্যায়ে এসে ঐ প্রবোধটাই বিশ্বাস বনে যায় আপনাতেই। জামাতে ইসলামী নামে ঘৃণ্যতম রাজনৈতিক দলটির কুখ্যাত নেতা, একাত্তরের স্বীকৃত রাজাকার আলী আহসান মুজাহিদ ঠিক এরকম কোন বিশ্বাস থেকেই মন্তব্য করেছিলো, ' বাংলাদেশে কোন যুদ্ধাপরাধী নেই।' কতখানি ঔদ্ধত্য পেয়ে বসলে মানুষ এরকম বলতে পারে এটুকু কল্পনার কোন অবকাশ আর নেই এখন। ঠিক যেন আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার জন্মকে, আমার অস্তিত্বকে অস্বীকার করার মতন তীব্রতর জ্বালা ধরানো কোন অনুভূতির জন্ম হয় মনে এই কথা শুনে। জামাতী নেতা ও তাদের সমর্থকদের নিজেদের নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টার কোন কমতি ছিলো না এতদিন। কিন্তু এরকম করে পুরো ইতিহাসকে অস্বীকার করার মতন স্পর্ধা এর আগে দেখা যায় নি। মুজাহিদের বক্তব্য নিয়ে পুরো দেশে যখন আলোড়ন হচ্ছে, তখন পর্দায় হাজির হলেন আরেক গোপাল ভাঁড়, জনান শাহ আব্দুল হান্নান। ইসলামী চিন্তাবিদ হিসেবে পরিচিত, কিন্তু জামাতে ইসলামীর অনুগত পরামর্শক হিসেবে নিজের জায়গা করেছেন অনেক আগেই। একুশে টিভির এক টক শ

বাতের ব্যথা

কোন একটা অসুখকে আগে বড়লোকদের অসুখ বলে জানতাম, কী যে সেটা, ভুলে গেছি। যেমন জানতাম 'বাতের ব্যথা' হলো খাস গরিবী অসুখ। অসুখের খোঁজ খবর নিচ্ছি, তার একটা অগভীর কারণ আছে। ইদানীং কিছুই লেখা হচ্ছে না। দু'তিনটে গল্প সিনেমার মত করে অনবরত মাথার ভেতর পুনঃপ্রচারিত হয়ে চলছে। বিচ্ছিন্ন কিছু কিছু কবিতার লাইন মাথার ভেতর কাঠঠোকরার মতন ঠোকর মেরে মেরে যায়। মুশকিল হলো, এগুলোকে খাতার ভেতরে স্থায়ীভাবে বেঁধে ফেলাটাই হচ্ছে না। এইরকম একটা অবস্থাকে বড়লোক লেখকেরা বলেন 'রাইটারস ব্লক'। কিন্তু এই শব্দ আমার বেলায় খাটবে না, আমি তো আর বড়লোক লেখক নই। আমি হলাম হত-দরিদ্র কলমবাজ। এখন তাই আমাকে কলম্বাসের মতই রাইটার্স ব্লকের সমার্থক বাতের ব্যথা জাতীয় নতুন কোন গরিবী শব্দ আবিষ্কার করতে হবে। কি মুশকিল!

প্রিয় সেগুন বাগান

খুব সিরিয়াসলি সত্যজিৎ রায় হতে চাইবার আগে আমি তারচেয়ে সিরিয়াসলি হতে চেয়েছি ম্যাকগাইভার কিংবা মিঠুন চক্রবর্তী। এই দুইয়ের অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে বন্ধুদের নিয়ে গোয়েন্দা দল বানিয়ে আমি প্রায় হয়েই গিয়েছিলাম কিশোর পাশা। গোয়েন্দা রাজু খুব বেশিদিন আমার সহচর ছিলো না। কাকাবাবু বা ফেলুদা পড়েছি, তবে হতে চাই নি কোনদিন। এখন এই আধাযুবক বয়সেও ছেলেবেলার যে হিরোর আবেদন একটুও কমেনি আমার কাছে, সেই দুর্দান্ত ছোকরার নাম 'মাসুদ রানা'। হু, ইনি তিনিই, যে 'টানে সবাইকে, কিন্তু বাঁধনে জড়ায় না।' এইরকম স্বার্থপর একটা বর্ণনাই বোধকরি আমাদের মাসুদ রানার প্রতি আগ্রহী করে তুলেছিলো। আরো অনেক কারণও ছিলো। সদ্য কিশোর তখন আমরা, এরকম একটা সময়ে প্রতিবার বিপদে পড়া বাংলাদেশকে বাঁচাতে, অথবা কোন বন্ধুরাষ্ট্রকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে যখন কাঁচা পাকা ভুরুর মেজর জেনারেল রাহাত খান অফিসে ডেকে পাঠাতেন মাসুদ রানা-কে, আমরা সেই সময় আরো একটি চমৎকার স্পাই থ্রিলারের আশায় বসের সামনে বসা মাসুদ রানার কানের পাশে সমানে ফিসফিস করে বলে যেতাম, 'রাজি হয়ে যা ব্যাটা, রাজি হয়ে যা।' সোহানা চৌধুরির আদুরে ভালোবাসার লোভ ছিলো হামেশাই। স