Posts

অর্ধেক জানুয়ারি-

Image
লিলি-রোজ বিনতে জ্যাক স্প্যারো দারুণ অভিনয় করে। এতটা আশা করিনি। মতি নন্দী-র ছোট গল্পও, এতটা আশা করিনি। কে জানত এত ভাল গল্প লেখেন তিনি। কোনো অং বং চং নেই, গল্প বলছি বলে অহেতুক টালবাহানা নেই, সলিড সব গল্প একেবারে। সেগুলো পড়ার ফাঁকে ফাঁকে তবু হেলাল হাফিজকে মনে পড়ল অনেকবার। বড় বেদনার মত বেজে গেলেন তিনি বুকে, বারবার, বারবার। 'পান্তাভাতে' পড়তে পড়তেও মনে হল একবার, গুলজার যদি চিনতেন হেলাল হাফিজকে, কত ভালই না হতো। পান্তাভাতে বইটায় নিজের নামে একটা চ্যাপ্টারের মালিক হয়ে যেতেন তিনি হয়ত। অথবা, যেমনটা ফিটজেরাল্ড বা এজরা পাউন্ড জায়গা পেয়েছেন হেমিংওয়ের প্যারিসের স্মৃতিতে। অবশ্য স্মৃতিতে জায়গা পেলেই বা কী আসে যায়। ইমতিয়ার শামীম চিরসত্যের মত তবু বলে যান, কোভিডে মরুক বা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে লাগা আগুনে, সেই মরাকে আরও একবার করে মারে চেনা জানা মানুষেরাই। মানুষ তাই বাঁচাবে মানুষকে, এতটুকুও হয়ত আশা করি না আর।

পান্তাভাতে । গুলজার

Image
  গুলজারকে কত ভূমিকায়ই না দেখি। সবচেয়ে বেশি চেনা হলেন গীতিকার গুলজার। অথবা কবি। পান্তাভাতে পড়তে পড়তে পরিচালক আর চিত্রনাট্যকার গুলজারকেও জানা হলো ভালো করে। পাঞ্জাবি পরিবারে জন্ম নেওয়া গুলজারের বাংলা প্রীতি অসামান্য, এতটাই যে নিজেকে বাঙালী বলে পরিচয় দিতে দ্বিধা করেন না। তাঁর দীর্ঘ জীবনে সঙ্গী হওয়া আরও কিছু মানুষ, যাদের সবাই আমাদের চেনা, তাঁদের কথা উঠে এসেছে এই বইয়ের লেখাগুলোয়। বিমল রায়, সলীল চৌধুরী, কিশোর কুমার, সঞ্জীব কাপুর, শর্মিলা, ঋত্বিক ঘটক, রাহুল দেব বর্মন, মহাশ্বেতা দেবী, ভীমসেন যোশী, রবিশংকর, এরকম আরও অনেকে। টুকরো টুকরো স্মৃতির মত লেখাগুলো, কোনোটাকেই পূর্ণাঙ্গ বলা যাবে না হয়ত। বরং অনেকটা স্ন্যাপশটের মত। ছবির অ্যালবামের মতই, জমিয়ে রাখা যায়। 

হলুদের গাঢ় সমাচার | ইমতিয়ার শামীম

Image
এই বছর ইমতিয়ার শামীমের আরও কয়েকটি বই আনা হলো দেশ থেকে। বাতিঘরের কাছে লিস্ট দেয়া ছিল, ছোটভাই মেলবোর্নে আসার সময় নিয়ে এলো সাথে করে।  হলুদের গাঢ় সমাচার একটা ছোটগল্প সংকলন। সব মিলিয়ে ১৫ টা গল্প। গল্পগুলো প্রায় সবই সাম্প্রতিক, গল্পের বিষয়বস্তুতেও সমসাময়িক ঘটনা ও চরিত্র প্রাধান্য পেয়েছে।    কোভিড, কোনো কারখানায় লাগা আগুন, ধর্মকে ব্যবহার করে জমিদখল, একটা বোমা হামলার ষড়যন্ত্র - এরকম সব বিষয়। ইমতিয়ার শামীমের গল্প পড়লে মনে হতে থাকে, একটা ঘটনাই কত ভিন্ন ভিন্ন চোখেই না দেখা যায়! 

হেলাল হাফিজ

" বড়ো বেদনার মতো বেজেছ তুমি হে  আমার প্রাণে, মন যে কেমন করে মনে মনে  তাহা মনই জানে। "  ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ 

গল্প

Image
 গল্প দু'রকম।  ভুলে যাওয়ার মত গল্প, আর মনে রাখার মত গল্প। 

নো ওয়ান রাইটস টু দ্য কর্নেল | গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ

Image
রেমন্ড কারভারের একটা গল্প আছে, নাম- 'কল ইফ ইউ নিড মি'। এটা দেখলেই আমার কেন জানি মনে হয়, 'মাঝে মাঝে পত্র দিয়ো'। জগজিৎ সিং এর ওই গানটা খুব পছন্দ, 'কিসকা চেহরা আব মে দেখু, তেরা চেহরা দেখকার'। আর আমি শুনি, 'বাংলার রূপ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর'। রোজ সকালে কফির কাপে চামচ নাড়তে নাড়তে এই বুড়ো কর্নেলকে খুব মনে পড়ে। বছরের পর বছর লঞ্চঘাটে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো সে, একটা চিঠি আসার কথা তাঁর নামে। মার্কেজের লেখা এই নাতিদীর্ঘ নভেলা আমার খুব প্রিয়। মাঝে মাঝেই এর পাতা উল্টাই, আর নতুন নতুন দৃশ্য চোখে জ্যান্ত হয়ে ওঠে যেন। এবারে যেমন মনে হলো, কর্নেল দম্পতির একমাত্র সন্তানের মৃত্যু হয়েছে, তবু বাড়ির পোষা মোরগটাকে হারানোর আসন্ন ভয় কি কোথাও কোথাও ছেলে হারানোর বেদনাকে ছাড়িয়ে গেছে? হয়ত। এখানে, এখন নিয়ম করে মাসে একবার ডাক্তার দেখাতে যাই। হাতে সিরিয়াল নাম্বার লেখা স্লিপ নিয়ে অপেক্ষা করি ক্লিনিকের ওয়েটিং রুমে। সামনের স্ক্রিনে একের পর এক নাম্বার ভেসে ওঠে, আর পাশে বসে থাকা মানুষেরা একজন একজন করে উঠে ভেতরে ঢুকে যায়। প্রতিবার স্ক্রিনে আওয়াজ হলেই চট করে একবার তাকি...

কিছু এর রেখে যাই | আলী আহমাদ রুশদী

Image
স্মৃতিকথা পড়তে ভালো লাগে বলে এক দুপুরে বইটা পড়া শুরু করেছিলাম। বারোটায় শুরু করে মাঝে কেবল খাওয়ার বিরতি ছাড়া উঠতে পারিনি, রাত নয়টায় পুরো বই শেষ করে তবে থেমেছি। সময়ের বিচারে অনেক বিস্তৃত এই স্মৃতিকথা, স্থানের বিচারেও। ৪/৫টি দেশে কাটানো সময় আর প্রায় সাত দশকের কথা...। প্রায় আড়াইশ পৃষ্ঠায় একটা কর্মমুখর জীবনের বিবরণ পড়ে গেলাম গোগ্রাসে, আর মুগ্ধ হলাম। তবে আমার হয়তো বেশি ভালো লেগেছে কিছু কিছু স্মৃতি মিলে যাওয়ায়। গ্রামের কোন্দা চালানো, জাল ফেলে মাছ ধরা আর সুপারি গাছে ওঠার স্মৃতি, অথবা ডাকাতিয়া নদী। আবার কুমিল্লা, ঢাকা, টাংগাইল, মেলবোর্ন, এক জায়গায় এক সাথে এই পরিচিত চারটে শহরকে পাওয়াও হয়তো আরেকটা কারণ। গ্রামের মাদ্রাসা থেকে পাশ করা একজন তরুণ পড়তে চান অর্থনীতি নিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার তীব্র ইচ্ছাও ছিলো তাঁর, কিন্তু এখানে এসে শুনলেন ভালো ফলাফল থাকা সত্বেও অর্থনীতি পড়ার সুযোগ পাবেন না, শিক্ষকেরা তাঁকে ভর্তি হতে বললেন ইসলামিক স্টাডিজে। তিনি ভাবলেন, ইসলামিক স্টাডিজ নতুন কিছু শেখাতে পারবে না তাঁকে, তিনি অর্থনীতিই পড়বেন। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছায় মুলতুবি দিয়ে অর্থনীতি নিয়ে পড়ার জন্যে তি...

আমাদের চিঠিযুগ কুউউ ঝিকঝিক | ইমতিয়ার শামীম

Image
  আমাদের সমস্ত গা-জুড়ে বড় বড় শহরের গন্ধ। আমাদের গল্প কবিতা গানে কেবলই নগরের নুয়ে পড়া আলাপ। অথচ, তার মধ্যেও এই অদ্ভুত গল্পটার কথককে বইয়ের ভাঁজ খুলে একটা মৃত পাতাকে সাক্ষী রেখে খানিকক্ষণ কেঁদে নিতে দেখে খুব অবাক হই আমি। কোন ভুলে যাওয়া এক মফস্বলের এক বিশাল চওড়া রাস্তার ধারে একটা ভাঙা চায়ের দোকানে আমাদের যে অস্তিত্ব ডোবানো, মনে পড়ে যায় তার কথা। যেনবা টাইম মেশিনে চড়ে বহু আগের কোনো বিষণ্ণ কিশোরের লুকিয়ে রাখা ডায়েরি পড়লাম বসে বসে। মনে পড়লো, রঙ্গন গাছের ঝাঁকে, অথবা কুয়াশায় ডুবে যাওয়া ফুটপাতে এরকম কত কত ডাকঘর, আর তাতে লুকিয়ে থাকা কত কত চিঠি খুঁজে বেড়ানো কয়েকজন কিশোরের কথা।

ব্ল্যাক ডগ | নিল গেইম্যান

Image
ব্ল্যাক ডগ নতুন গল্প নয়, নিল গেইম্যানের ট্রিগার ওয়ার্নিং নামের সংকলনে আছে গল্পটা। এই বইয়ে শুধু ব্ল্যাক ডগ আলাদা করে ছাপা, সাথে ইলাস্ট্রেশন। আর এই অলংকরণের লোভে পড়েই মূলত কেনা হলো বইটা। আমার কাছে এই ব্যাপারটা খুব ইন্টারেস্টিং লেগেছে। মানে সংকলন থেকে নিয়ে বড় একটা গল্পকে ছবিসহ আলাদা বই হিসেবে প্রকাশের চিন্তাটা। নিলের লেখা পড়তে গেলে একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটে। যেকোনো বই পড়ার সময়, আমাদের মাথার ভেতরে একজন কেউ বইটা শব্দ করে পড়তে থাকে। আমরা যখন মনে মনে পড়ি, আমরা আসলে সেই শব্দটা শুনতে থাকি। সাধারণত সেই কণ্ঠ হয় আমাদের নিজের (সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না-ও হতে পারে)। কিন্তু আমি খেয়াল করে দেখেছি, গেইম্যানের লেখা যখন পড়ি, তখন মাথার ভেতর পড়ে চলা কণ্ঠটা আমার থাকে না, সেটা হয়ে যায় নিলের গলা। ব্যাপারটা প্রায় ভৌতিকই বলা যায়! তবে এর পেছনে কারণ কী তা ভেবে বের করেছি। অডিওবুক এমনিতে আমার পছন্দ নয়, বিশেষ করে ফিকশনের জন্যে। নন-ফিকশন বা পডকাস্ট অবশ্য শুনতে পারি। তবে কোরালাইন দিয়ে নিলের নিজের কণ্ঠের অডিওবুকের সাথে পরিচয় হবার পরে, তাঁর ন্যারেশনের ভক্ত হয়ে গেছি। ব্ল্যাক ডগের অডিওবুক লোকাল লাইব্রেরি থেকে ধার নেয়া যাবে ...

গ্রামায়নের ইতিকথা | ইমতিয়ার শামীম

Image
  উপন্যাস ভেবে পড়া শুরু করি, শুরুর তিন অধ্যায় পড়া হয়ে গেলে প্রথম চোখে পড়ে যে নতুন চরিত্ররা এসে হাজির হচ্ছে প্রতিবার। চরিত্র নতুন, কিন্তু গল্পগুলো যেন অভিন্ন মানুষদের, কেমন একের ওপর আরেক ছড়িয়ে ছিটিয়ে এলিয়ে বিছিয়ে আছে। বইয়ের শেষ পাতায় গিয়ে জানলাম ছয়টা ভিন্ন গল্প এগুলো। এবারে ফ্ল্যাপে পড়া কথাটার মানে বুঝতে পারলাম, 'উপন্যাসের আদলে...কথকতার এক নতুন বিন্যাস...,যা একই সাথে ছোটগল্প আবার উপন্যাসের বিশাল মাত্রাকেও ছুঁয়ে যায়।' 'আমরা হেঁটেছি যারা'-র পরে আমার পড়া ইমতিয়ার শামীমের লেখা মাত্রই দ্বিতীয় বই এটা, কিন্তু সর্বশেষ যে নয়, এ কথা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি। পাঠক হিসেবে ব্যাপারটা ভীষণ আনন্দেরও বটে।