দি ওল্ড ম্যান এন্ড দ্য সী - আর্নেস্ট হেমিঙওয়ে


চেনা বামুনের পৈতে লাগে না। ক্লাসিক লেখাগুলো নিয়ে তাই খুব বেশি লিখতে মন চায় না, তারচেয়ে বরং নতুন কোনো লেখকের বই, অথবা পুরাতন হলেও কম পরিচিত কোনো বই নিয়ে লেখা শ্রেয় মনে করি, অন্তত সেই বইটা নতুন কারও কাছে যদি পৌঁছয়, এই আশায়। কিন্তু সেদিন রাত দুইটায় যখন পড়া শেষ হলো আবার, এই বইটা নিয়ে দু'কলম লিখতে ইচ্ছা হলো। 
বহু বছর আগে কোনো একটা বাংলা অনুবাদে পড়েছিলাম এই বইটা। সেবা-র ছিল কি? জানি না। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রেরও হতে পারে। সেই অল্প বয়সে খুব বেশি দাগ কাটেনি মনে। এখন বুঝতে পারি, দাগ পড়ার মত শক্ত হয়ে ওঠেনি তখনও আমার শিশু-মন। 
এতগুলো বছর পরে হেমিঙওয়ের আরেকটা না-পড়া বই, দি মোভেবল ফিস্ট, পড়তে শুরু করতেই, হঠাৎ মনে হলো, দি ওল্ড ম্যান এন্ড দ্য সী আরেকবার পড়া যাক। তাই আবার টেনে নেয়া। 
পড়তে গিয়ে অনেক অনেকবার চোখ বুজে দৃশ্যগুলো দেখে নিয়েছি। সান্তিয়াগোকে মাঝ সমুদ্রে ধ্যানে বসে থাকা গৌতম বুদ্ধের মতই মনে হয়ে যেত প্রায়, যদি না হঠাৎ হঠাৎ ইয়াঙ্কিদের খেলার ফল জানার জন্যে তার আকুতি না দেখতাম। 
খুব সহজ সরল ভাষা, তবু কয়েকটা জায়গায় হোঁচট খেয়েছি পড়তে পড়তে। একই প্যারায় বুড়ো, আটক মার্লিন আর আক্রমণোদ্যত হাঙর, সবার জন্যে একটাই সর্বনাম বরাদ্দ রেখেছেন হেমিঙওয়ে, He! 
এত সাদামাটা একটা গল্প, কিন্তু যতই শেষের দিকে এগুতে থাকি, আস্তে আস্তে টের পাই, গল্প আসলে সেটা নয় যেটা দেখা যাচ্ছে সহজে। এই যে একের পর এক মুশকিলে পড়তে থাকা, হার্পুন এবং শেষ সম্বল একমাত্র ছুরি হারিয়ে ফেলা, ক্ষত বিক্ষত হাত, তবু লড়াই করে যাওয়া সমুদ্রের পাঠানো দানবদের সাথে। এইখানে এসে যেন জীবনানন্দের হাজার বছর ধরে হেঁটে চলা মানুষের দেখা হয়ে যায় চুরাশি দিন মাছ না ধরতে পাড়া বুড়ো সান্তিয়াগোর।
বুড়োর সঙ্গে সঙ্গে যেন উচ্চস্বরে স্বগতোক্তি করে চলেছে পৃথিবীর শুরু থেকে আজ পর্যন্ত জন্মানো প্রতিটি আদমসন্তান, "হার মেনে নিতে জন্মায়নি মানুষ"। 
মানুষ এসেছে লড়াই করে জিততে। বইয়ের পাতা থেকে এই কথাগুলো ছেঁকে চোখের সামনে তুলে আনতে হলে হয়তো জীবনের কিছু পোড় খাওয়া বছর পেরুতে হয় প্রত্যেককে। তা না হলে সম্ভবত এই শব্দগুলো দেখতে পাওয়া যায় না ঠিকঠাক। 
একটা অদ্ভুত সুন্দর তৈলচিত্রের মত পুরো গল্পটা, আর শেষ লাইনটায় যেন হেমিঙওয়ে তুলির টানে নিজের স্বাক্ষর দিয়ে দিলেন ছবিটায়। এমনকি শেষ বাক্যের মাস্টার ও'হেনরিরও হিংসা হবে নিশ্চয় এই লাইনটা পড়ে। 
আমাদের যার যার জন্যে বরাদ্দ ডিঙি নৌকাটায় করে জীবন সমুদ্র পাড়ি দিতে গিয়ে, ঘুমঘোরে কখনও কখনও আমরা সবাই হয়তো এইভাবেই স্বপ্নে দেখবো বুড়ো সান্তিয়াগোকে।

Popular posts from this blog

The Boy, the Mole, the Fox and the Horse | Charlie Mackesy

মধ্যাহ্নভোজ | উইলিয়াম সমারসেট মম্‌ | রূপান্তরঃ তারেক নূরুল হাসান

আরেকটিবার-