আবুল হাসান
এই বুড়ো বয়সে প্রায় বালকবেলার মতই উল্লসিত হয়ে উঠেছি, যখন কাগজের প্যাকেট খুলে দেখি, সেখানে চুপটি করে আমার জন্যে বহুকাল ধরে অপেক্ষা করছেন আবুল হাসান।
আমার শৈশব বা কৈশোর কেটেছে আবুলহাসানবিহীন, এবং আশ্চর্য হলো তাতে আমার কোন দুঃখও নেই। প্রাপ্তবয়স্ক হবার আগে মদের পেয়ালা মুখে তোলা মানা, এটা কে না জানে? এই দুপুর-রাতে তাই মাঝারি স্বাস্থ্যের বইটার পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে অজান্তেই কেমন নেশাতুর হয়ে পড়ি।
মজার ব্যাপার হলো, আবুল হাসানের নাম প্রথম ভালভাবে শুনি মির্জাপুরের সাকেব ভাইয়ের কল্যাণে। তিনি তখন প্রবল বিক্রমে সামহোয়ারইনে ব্লগিং করেন, কিন্তু আসল নামে নয়। একটা অদ্ভুত নিকে- চামেলি হাতে নিম্নমানের মানুষ। এই লম্বা ও আজব নিকের খোঁজ নিতে গিয়ে প্রথম শুনলাম আবুল হাসানের নাম, তারপরে পড়া হলো তাঁর আশ্চর্য সব কবিতা।
সাকেব ভাইই প্রথম কোট করেছিলেন, ঝিনুক নীরবে সহো, সহে যাও, ভিতরে বিষের বালি, মুখ বুজে মুক্তা ফলাও।
তারপরে কোত্থেকে কেমন করে খুঁজে পাই সেই বিখ্যাত কবিতা, আসলে আমার বাবা ছিলেন নিম্নমানের মানুষ…। পড়ে টড়ে আমি বেমক্কা তব্দা খেয়ে বসে ছিলাম অনেকক্ষণ।
এবার তাই দেশ থেকে বই আনাবার সুযোগ পেতেই লিস্টির একদম শুরুতে রেখেছিলাম আবুল হাসানের কবিতা সমগ্রের নাম।
অবশেষে ঠিক যেন আকাশ থেকে টুপ করে আমার হাতে চলে এলো বইটা।
এটা একটা আশ্চর্য বোধ, যেন তেপান্তরের মাঠের মধ্যিখানে কেউ হঠাৎ করে আমার হাতে কোন অমূল্য রত্নভান্ডার ধরিয়ে দিয়ে উধাও হয়ে গেছে, আমি পাতার পর পাতা মুগ্ধ চোখে পড়েই যাচ্ছি কেবল। সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে- এই কবিতার নামও- আবুল হাসান!
একটু বোধহয় মাতলামীতে পেয়েছে আমাকে আজ। আপাতত সদ্য পড়া একটা চমৎকার কবিতা শুনিয়ে বিদেয় হই।
নিঃসঙ্গতা
অতটুকু চায়নি বালিকা!
অত শোভা, অত স্বাধীনতা!
চেয়েছিল আরো কিছু কম,
আয়নার দাঁড়ে দেহ মেলে দিয়ে
বসে থাকা সবটা দুপুর, চেয়েছিল
মা বকুক, বাবা তার বেদনা দেখুক!
অতটা চায়নি বালিকা!
অত হৈ রৈ লোক, অত ভিড়, অত সমাগম!
চেয়েছিল আরো কিছু কম!
একটি জলের খনি
তাকে দিক তৃষ্ণা এখনি, চেয়েছিল
একটি পুরুষ তাকে বলুক রমণী!