বাংলা ওসিআরঃ স্বপ্ন সম্ভব?

যাযাবরের সেই বিখ্যাত লাইন স্মরণীয়- বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ।
আবেগের দিকে এখন আর না যাই, বেগ নিয়ে যদি বলি, তো বলতেই হবে, কথা সত্য। প্রাত্যহিক সব কাজ-কর্ম নিঃসন্দেহে গতি-প্রাপ্ত হয়ে গেছে বিজ্ঞানের কল্যাণে। আর আমার মত কিছু সুযোগ সন্ধানী মানুষজন নিজের আলসে স্বভাবটাকে এই সুযোগে পাখির ডিমের মত তা দিয়ে দিয়ে বাড়তে দিয়েছে।
লিখবার জন্যে কাগজ কলমের ব্যবহার অনেক আগেই কমিয়ে দিয়েছি। লেখাজোকা-র প্রায় পুরোটাই এখন গুগল ডকে সেরে ফেলি, এ জন্যে চেয়ার টেবলে বসে খটখট কী-বোর্ড নিয়ে বসতে হয়, খাতা কলম নয়।
বেশিদিন এই আরামে পোষালো না। তাই বিছানায় আরাম করে হেলান দিয়ে কোলের উপরে ফেলে টাইপ করার জন্যে ল্যাপি কেনা হলো।
কিন্তু কদিন ধরেই এভাবেও মন জুৎ পাচ্ছে না। ইচ্ছে করছে আগের ব্যবস্থায় ফিরে যাই, আবার কাগজ কলম নিয়ে বসি।
কিন্তু লিখবা মাত্রই ছাপার মত চকচকে ফন্টে সেটা কম্প্যুতে সেইভ হয়ে যাওয়া, এই সুবিধার কী উপায় হবে? কাগজে কলমে লিখলে তো এটা পাওয়া যাবে না।

বাজার ঘুরে দেখলাম নানান রকম যন্তর পাতি এর মধ্যেই বের হয়ে গেছে। স্লেটের মত একটা টাচস্ক্রিন পাওয়া যায়। ওখানে লিখলে ছবি হিসেবে পাতার পর পাতা সেইভ হবে যায়। কিন্তু এটা বেশ ঝকমারি মনে হলো। সারাক্ষণ ওরকম একটা জিনিস বয়ে নিয়ে বেড়ানো!
বেশ কিছু কলম পাওয়া গেলো, কাগজের ওপরে লিখলেও হয়, স্লেট লাগে না, কিন্তু কলমের পেছন দিকটা কম্প্যুর সাথে তার দিয়ে জুড়ে দিতে হবে, তাহলেই লেখা সরাসরি কম্প্যুতে উঠে যাবে।
কিন্তু সারাক্ষণ যদি কম্পিউটার বয়ে নিয়ে বেড়াতে হয়, তবে আর এসব কিনে কী কাজ?

তখন পেলাম এই মজার জিনিসটা। নাম হলো ইন্টেলিপেন
দারুন জিনিস। যে কোন কাগজে লিখো, সামনে শুধু ছোট এই ক্লিপটা আটকে রাখতে হবে, তারপর যত ইচ্ছা লিখো। কোন এক ফাঁকে এই ইউএসবি-ক্লিপটা কম্পিউটারের সাথে কানেক্ট করে সব লেখা ইমেইজ হিসেবে সেইভ করে রাখলেই চলবে।
দাম মোটামুটি। অজি ডলারে ১৫০ নিলো। কিন্তু আসলেই বেশ কাজের। সারাদিনের লেখাজোকা বা আঁকিবুকি সব স্টোর করে ফেলা যায়!

কিন্তু লেখাগুলোকে টেক্সট হিসেবে সেইভ করতে গিয়ে মুশকিলে পড়তে হলো। ইন্টেলিপেনের সাথে একটা সফটওয়ার দেয়, ইংরেজি ওসিআর। সেটা ইংরেজি লেখা মুহুর্তেই চিনে নেয়। কিন্তু আমি তো লিখি বাংলায়, তো বাংলার উপায় কী?
গুগল কাকুকে জিজ্ঞেস করলাম। জানলাম, বাংলা ওসিআরের কাজ তেমন একটা এগুয়নি।
আমাদের সচল আলমগীর ভাই একটা প্রাথমিক পর্যায়ের বাংলা ওসিআর বানিয়েছেন, যেটা এখনো সম্পূর্ণ হয়নি।
তবে ব্রাক ইউনিভার্সিটির একটা প্রোজেক্ট হিসেবে বাংলা ওসিআরের একটা খোঁজ পেলাম, আজই রাতে ওটা নামিয়ে চালিয়ে দেখলাম, জিনিসটা বেশ কাজের হয়েছে। মোটামুটি ৪০০ ডিপিআই হিসেবে কোন ছাপা পাতা স্ক্যান করে ওটায় চালালে সেটা লেখা হিসেবে প্রায় ৯০ শতাংশ চিনে নিতে পারে। নিঃসন্দেহে এটা বেশ উৎফুল্ল হবার মত ব্যাপার!
তবে খানিক দুঃখ পেলাম, হাতের লেখা চিনবার মত উপযোগী এখনো সেটা হয়ে উঠেনি দেখে। জানি ব্যাপারটা সোজা নয়, সময় লাগবে। তাই নিরুপায় হয়ে আপাতত অপেক্ষায় আছি একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলা ওসিআরের।

পুনশ্চঃ এসব নিয়ে গুগলি করতে করতে মজার একটা লিংক পেলাম, বাংলায় টেক্সট টু স্পিচ সফটওয়ার। অনলাইনে টেস্ট করা যায়। বেশ মজার। যান্ত্রিক একটা কনঠে এভাবে বাংলা শুনতে বেশ মজাই লাগে।

Popular posts from this blog

The Boy, the Mole, the Fox and the Horse | Charlie Mackesy

মধ্যাহ্নভোজ | উইলিয়াম সমারসেট মম্‌ | রূপান্তরঃ তারেক নূরুল হাসান

আরেকটিবার-