ফেইসবুক বিড়ম্বনা

আমার বউ রোজ সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে মনোযোগ দিয়ে প্রথম যে কাজটা করে, সেটা হলো, ফেইসবুকের অজস্র ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট ধরে ধরে গণহারে ইগনোর করে দেয়। ব্যাপারটা ওর জন্যে বেশ বিরক্তিকর, সন্দেহ নেই। আমার এসব জ্বালাতন নেই, তাই ওর দূর্ভোগ দেখে প্রায়শই মুখ টিপে হাসি। মাঝে মাঝে আমাকে ডেকে দেখায়, দুয়েকজন একদম প্রথম মেসেজেই বিয়ের প্রস্তাব পর্যন্ত দিয়ে বসে, এইরকম দুয়েকটা মেসেজ দেখে আমার চোখ কপালে উঠে গেছে!

আমি অন্তত মুখ চেনা না হলে কাউকে রিকোয়েস্ট পাঠাই না। সচলায়তন আর সিসিবি-র অনেককেই ওখানে দেখিবা-মাত্রই যোগ করে নিয়েছি, কাউকে কাউকে খুঁজে নিয়েছি, কাউকে ঘুরতে ঘুরতেই পেয়ে গেছি। ।
দুয়েকজনকে অবশ্য আমিও ইগনোর করেছি। কিছু রিকোয়েস্ট আসে এমন, একেবারেই চিনি না, কোন ফ্রেন্ডও কমন নেই কারও সাথে। প্রোফাইলে ঢুকেও কোনভাবে মনে হলো না যে চিনি। তাদের কিছুদিন রেখে দিই, তারপরেও চেনার কোন সুত্র না পেলে আস্তে করে বিদায় জানিয়ে দিই।

এক ভদ্রলোককে আমি সব মিলিয়ে ইগনোর করেছি পাঁচবার।
ওনার সাথে আমার অবশ্য ব্যক্তিগত কোন শত্রুতা নেই, ব্লগমন্ডলের বেশ পরিচিত একজন। সমস্যা হলো, উনি নানাবিধ কারণে সচলায়তনে লিখতে পারেননি, এ কারনে সব খানে খুব বাজে ভাষায় সচলায়তনের বদনাম গেয়ে বেড়ান। শুধু তাই না, মডুদেরকে শাপশাপান্ত করতেও সবখানে অগ্রগামী ভূমিকা রাখেন। সচলায়তন, এই মুহুর্তে আমার কাছে, এ পার্ট অব মি, আদর যত্নে ভালবাসায় আমাদের চোখের সামনে বেড়ে উঠছে সচল, তো এই ভদ্রলোক কেমন করে আমার বন্ধু হবে? প্রথম রিকোয়েস্টটাই তাই ইগনোর করলাম, কদিন পরে আবার এলো, আবারও বিদায়, এরকম করে পাঁচবার!

উল্টোদিকে আমার নিজের ইগনোর খাওয়ার অভিজ্ঞতা দুটো। অবশ্য বেশিও হতে পারে। কারন, ব্যাপারটা টের পেয়েছি কালই প্রথম। এর আগে বুঝিনি, কারন, আমি কি জানি যে এমনকি একটা হাঁচি দিলেও নোটিফিকেশান পাঠায় যে ফেইসবুক, সে ইগনোর হবার মত গুরুত্বপূর্ণ নোটিফিকেশানকে জাস্ট ইগনোর করে!
যে দুজনেরটা টের পেয়েছি, তার প্রথমজন বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় লেখক। আমি এমনিতে ওনার ভক্ত নই। এমনকি দুয়েকটা ব্লগে ওনার বেশ কিছু লেখা ও কাজের কড়া সমালোচনা করেছি, কিন্তু পুরনো কিছু ভাললাগা এখনো অবশিষ্ঠ থেকে যাওয়ায় ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিলাম। কাল টের পেলাম, সেটা একসেপ্টেড হয়নি। না হবার কারণ কি বুঝিনি, তবে উনি আমার মত একজন ছাপোষা ব্লগারের লেখা পড়ে রুষ্ট হয়েছেন, এমনটা ভাবছি না। তার কোন সম্ভাবনাই নেই, অত উপরের সারির লেখকদের পক্ষে আমাদের লেখা খুঁজে পাবার, পেলেও পড়বার, আর পড়লেও গুরুত্ব দেবার কোন কারণ নেই।

দ্বিতীয়জনের ব্যাপারটায় আমি খুবই লজ্জিত! তার পেছনে আবারও প্রথম ও প্রধান কারণ ঐ নোটিফিকেশান।
কোন একটা ব্লগে মুখ চেনা, ফেইসবুকে দেখে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি। তারপর ভুলেই গেছি। কদিন পরে আবার দেখি বন্ধু হিসেবে যোগ করার অপশানটা এখনো এক্টিভ। আমি বেকুব মানুষ, ভাবলাম ব্যাপার কি, কদিন আগেই না ওটায় ক্লিক করেছিলাম? আবার ক্লিক করলাম, এবং এবারেও বেমালুম ভুলে গেলাম! তারপর অনেকদিনের বাদে কাল আবার দেখি একই কাহিনি, সেই অপশান এখনো এক্টিভ, এবং এবারেই আমি টের পেলাম, বাছাধন, ইহাকেই বলে ইগনোর!
খুবই বিব্রত হলাম। ইগনোর বাটনে ক্লিক করার সময় বউয়ের বিরক্ত মুখটা মনে পড়লো, না বুঝে বোকার মতন আর কারও সেই একই বিরক্তির কারণ হয়েছি আমি, বুঝতে পেরে এখন সত্যিই খারাপ লাগছে।

অতঃপর মনে করার চেষ্টা করলাম আর কারও কাছ থেকে আমার ইগনোর জুটেছে কি না। খুঁজে পেতে এ দুটাই পেলাম। কিন্তু আমি নিশ্চিত আরও কিছু নিশ্চয়ই রয়ে গেছে, আমি ভুলে গেছি বা টের পাইনি।
যাকগে, জগতের সকল ইগনোরকারীদের কাছে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি, জেনে বা না জেনে যাদের বিরক্তির কারন হয়েছি, তাদের সবার কাছেই।
আপাতত, আমার মহা-বিব্রত মনটাকে লুকোনোর জায়গা কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না! ধরণী দ্বিধা হও, প্লীজ!

Popular posts from this blog

The Boy, the Mole, the Fox and the Horse | Charlie Mackesy

মধ্যাহ্নভোজ | উইলিয়াম সমারসেট মম্‌ | রূপান্তরঃ তারেক নূরুল হাসান

আরেকটিবার-