হাওয়াই মিঠাই ১০

গত কয়েকদিন খারাপ খবর পেয়ে পেয়ে আমার সেটাই অভ্যেস হয়ে গিয়েছিলো। ব্লগ আর মেইল খুলে আজ শুনি এই তো কাল শুনি ঐ। সারাদিন মুখ কালো করে ঘুরে বেড়াতাম, আর ভাবতাম, আশি নম্বর বন্দরে এই কর্মবিরতির কারণ কি?
মাঝে অনেক জল ঘোলা হয়েছে, আপাতত সুদিন ফিরে এসেছে, এখন আবার স্বর্গের দুয়ার খোলা, আমিও হাঁপ ছেড়ে বলি লে বাবা। মনটাও বেশ ফুরফুরে।
এই ফুরফুরানির পেছনের আরও একটা কারণ- দেশ থেকে কিছু বই হাতে পেলাম কালই। অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলাম । বহুদিন বইমেলায় যাই না, নতুন বইয়ের গায়ে নতুন প্রেমিকার চেয়েও বেশি নেশা ধরানো মাতাল গন্ধ থাকে, সেটার স্মৃতি প্রায় ভুলতে বসেছিলাম, অনেকদিন পরে ফিরে এলো।

বইয়ের লিষ্টি এখান থেকেই পাঠানো। বহু দৌড়ঝাঁপ করে সুহৃদরা খুঁজে খুঁজে কিনেছেন। এর মধ্যে কিছু ব্লগারদের বই।
আলবাব ভাইয়ের বউ, বাটা বলসাবান দেখে চোখ জুড়িয়ে গেলো। এইরকম আকৃতির বই- ঠিক একটানে কিশোরবেলায় নিয়ে আছড়ে ফেলে। সেই শীর্ষেন্দুর জাদু-মাখা বইগুলোয় ছেয়ে থাকা কিশোর বেলা! আরিফ জেবতিকের ধুলিমাখা চাঁদের ফক্ফকে জোছনার একটা টুকরাও আমার বাসায় এখন। এখনও সচলায়তনের পূর্ণ ব্লগার নয়, সেই মূর্তালা রামাতের কষ্টালজিয়ার, কি মুশকিল, একেবারে দু দুটো কপি কেমন করে যেন চলে এসেছে। অমিত আহমেদের গন্দম কেনা হয়েছে জানি। কিন্তু আঁতি পাতি করে খুঁজেও বইয়ের প্যাকেটে কোথাও পেলাম না সেটা। হদিশ করার চেষ্টা চলছে এখনও।
ব্লগারদের বই কিনতে শুদ্ধস্বরে হাজির হয়েছিল আমার বউ-এর বড় বোন। সৌভাগ্য এই, গিয়ে দেখাও হয়েছিলো (আহমেদুর রশিদ) টুটুল ভাইয়ের সাথে। পরে জানতে পেরেছি, উনি বিস্তর সহায়তা করেছেন আমাদের আপুকে। মজার ব্যাপার, বইয়ের নামের লিষ্টি শুনে উনি নিজেই জিজ্ঞেস করেছিলেন, যাদের জন্যে কেনা হচ্ছে তারা ব্লগার কিনা!
টুটুল ভাই আমার পিতৃদত্ত নাম শুনে চিনতে পারেন নি। :) অন্য নামে ব্লগিং করার এই হলো কুফল। কিন্তু তারপরেও আন্তরিকতার কোন কমতি ছিল না, টুটুল ভাইকে অশেষ কৃতজ্ঞতা।
মিসিং বইয়ের তালিকায় আরও আছে শহীদুল জহিরের কোন একটা সমগ্র। এই নিয়েও দুঃখে আছি, বিচ্ছিন্ন কিছু গল্প বন্ধুদের কল্যাণে পড়েছি, তবে আরও ভাল করে পড়ার ইচ্ছে ছিলো।

অন্য বইগুলোও আপাতত শুঁকে শুঁকে দেখছি। হাসান আজিজুল হকের আগুনপাখিও এলো হাতে। প্রবাসে বই আনাতে গেলে বইয়ের সংখ্যার চেয়েও ওজন ঝামেলা করে বেশি। তারপরেও দুটো মোটা মোটা বই চলে এসেছে, একটা হলো তিলোত্তমার রাজপাট। এই লেখকের কোন গল্প এর আগে ভাল করে পড়িনি, পড়ে দেখবার জন্যেই আনা, কেমন হবে এখনো জানি না।
অন্য মোটা বইটা, এতদিন পরে, আমি জানি, খুবই আজব, তবু, হাতে যে এলো সেই অনেক, খুব খুশি, মানে বইটার নাম, অবশেষে!- সচলায়তন সংকলন!
গত বইমেলায় বের হওয়া এই বইটা সত্যিই আমি মাত্র গতকাল হাতে পেলাম। হাতে পেয়ে কি যে করবো বুঝে পাচ্ছি না! বেচারী এসে ঠিক যেন বনলতা সেনের মত লাজুক ভঙ্গিতে আমার হাতে এসে বসেছে, আর আমিই তাকে উল্টো জিজ্ঞেস করছি, এতদিন কোথায় ছিলেন?
বইটা অদ্ভুত সুন্দর হয়েছে, জাস্ট অদ্ভুত! প্রচ্ছদের জন্যে সুজন্দাকে অনেক ধন্যবাদ। পুরো খাটাখাটুনির জন্যে মাহবুব আজাদ আর সুমন চৌধুরির অনেক অনেক ভদকা পাওনা হয়ে গেছে!
এই সব সহায় সম্পত্তির মালিক বনে গিয়ে বেশ আনন্দে আছি। আগামী বেশ অনেকদিন এসব উল্টে পাল্টে পড়তে পড়তেই সময় চলে যাবে আশা করি।

শেষ করি একটা কথা বলে।
বইয়ের ফ্ল্যাপে আলবাব ভাইএর ইমেইল আইডি দেখলাম,এটা বেশ আধুনিক ব্যাপার, এখন বেশিরভাগ লেখকই তা-ই করেন। কিন্তু আমি চেয়ে দেখি, তার নিচেই আরেক ঠিকানা, সচলায়ত.কম/আলবাব, মনটা খুশিতে ভরে গেলো। এই রকম একটা ঠিকানার মালিক এখন আমরা সবাই। আমরা সবাই এই একটা ঘরের সাথে একটা স্ল্যাশের বাঁধনে বন্দী।
আলবাব ভাইকে এর আগে এত বেশি আপন মনে হয়েছে কিনা মনে করতে পারছি না!

Popular posts from this blog

The Boy, the Mole, the Fox and the Horse | Charlie Mackesy

মধ্যাহ্নভোজ | উইলিয়াম সমারসেট মম্‌ | রূপান্তরঃ তারেক নূরুল হাসান

আরেকটিবার-