হাওয়াই মিঠাই ৮

আমার এক বন্ধু দেশ থেকে ঘুরে এলো সম্প্রতি। যাবার সময় "কিছু আনতে হবে কি না"- এই প্রশ্নের উত্তরে প্রায় নির্দ্বিধায় সাম্প্রতিক সময়ের মুভিগুলোর ডিভিডি নিয়ে আসতে বললাম। এমনিতে এখানকার মুভি ক্লাবে ডিস্কপ্রতি ভাড়াও খুব বেশি না, সস্তাই বলা চলে। তবু ইষ্টার্ণ প্লাজার সাথে তার কোন রকম তুলনাই চলে না। এছাড়া একদম নতুন মুভিগুলোও পেয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে। ইতিমধ্যেই আমি দ্রোহী ভাইয়ের দেয়া লিংকে গিয়ে নতুন মুভি দেখতে দেখতে মাসের প্রথম সাতদিনেই আমার পুরো মাসের ডাউনলোড কোটা খতম করে বেজায় বিপাকে পড়েছি। এজন্যেই শাস্ত্রে আছে, দুষ্টু লোকের মিষ্টি কথায় কান দিতে নেই। দ্রোহী ভাই এর পরে যতই লোভনীয় লিংক হাজির করুন, আমি আর ঐ পথে পা বাড়াচ্ছি না।

তো, বন্ধু এখানে ফিরবার সাথে সাথে আমিও আচমকাই প্রায় শ"খানেক দেখা না দেখা সিনেমার মালিক বনে গেলাম। এই অযাচিত আনন্দে গত কদিন অনেকগুলা সিনেমাও দেখা হয়ে গেল টপাটপ।

প্রথমদিন মুভিগুলোর এলবাম হাতে নিয়ে দেখছিলাম কি কি আনা হলো, দেখতে দেখতে এই সিডি যারা তৈরি করেন, তাদের বুদ্ধির প্রশংসা না করে পারা গেল না। হরেক রকমের কালেকশান একেকটা ডিভিডিতে। একসাথে তিন/চার বা পাঁচটি মুভি হয়তো, কোনটায় থ্রিলার মুভিগুলো একসাথে দেয়া, কোনটায় হরর। আবার অভিনেতা অনুসারেও কালেকশান বানানো, টম হ্যাংক্স, কিয়ানু রিভস, এন্জেলিনা জোলি, টম ক্রুজ- এরকম নানান রকম। হঠাৎ একটা কালেকশান দেখে তুমুল মজা পেলাম। পামেলা এন্ডারসন!

আহা, একটা সময় এই মহিলা আমাদের বয়েসী কিশোরদের নিদ্রা বা জাগরণে দরজা নক না করেই ঢুকে পড়তেন। তাতে যে আমরা খুব একটা নাখোশ হতাম, এমন কথা বুকে হাত দিয়ে কেউ বলতে পারবে না। বন্ধুরা যারাই নতুন কম্প্যু কিনতো, কোন একটা ড্রাইভের ভিতরে একের ভিতরে আরেক, তার ভেতরে আরেক, এরকম গভীর গোপন কোন জায়গায় লুকোনো ফোল্ডারে গিয়ে এই স্বর্ণকেশী কানাডিয়ান ভদ্রমহিলার ছবিই সবচেয়ে বেশি জমানো হতো। কোথায় যেন পড়েওছিলাম, গুগলে পামেলার খোঁজেই নাকি সবচেয়ে বেশি সার্চানো হয়েছে। লুকিয়ে বেওয়াচ দেখার স্মৃতি এখনো মুছেনি মন থেকে, তার মধ্যে পামেলার সিনেমার কালেকশান হাতে পেয়ে মন্দের ভাল হলো এই যে, নিজের বয়স হুট করে দশ বছর কমে গেলো! ইশ, আশপাশে বন্ধুগুলো নেই, এটাই যা দুঃখ।
*

অন্জন দত্তের বানানো একটা মুভি দেখলাম মাত্রই। দি বং কানেকশান।
অন্জনের গান নিয়ে মুগ্ধতার কোন সীমা-পরিসীমা নাই। আমাদের সাংসারিক এমপিথ্রিপ্লেয়ারে নিয়ম করে কদিন পর পর গান আপডেট করা হয়। প্রায় প্রতিবারই সব গান মুছে ফেলা হয় নতুন গান ভরবো বলে, তারপর অবশ্যম্ভাবী ভাবে অন্জনের ফোল্ডার পুরোটা আবার কপি করা হয়। প্রতিবার একই কাহিনি।

কিন্তু অন্জনের সিনেমা ঠিক একইরকম ভাললাগা মনে আনে কি না তাই ভাবছি। এর আগে, অন্জনের একটা সিনেমার কথাই মনে করতে পারছি, বোধহয় আট বা দশ বছর আগে, বাংলা নয়, হিন্দী মুভি ছিলো সেটা- বড়া দিন। সিনেমার কাহিনি মনে নেই ঠিকঠাক, তবে গানগুলো খুব সুন্দর ছিল।

তারপরে, ভারতীয় কোন একটা বাংলা চ্যানেলে দেখেছিলাম অন্জনের বানানো একটা ড্রামা সিরিয়াল বা এরকম কিছু। নাম মনে নেই, রাজা অপেরা সম্ভবত। তবে সেটাও একেবারেই মনে দাগ-টাগ কাটেনি।

দি বং কানেকশান দেখতে বসার সময় অবশ্য আগের এসব কথা তেমন মনে ছিল না। বেশ আয়েশ করেই দেখে গেছি পুরোটা।

সিনেমার গল্প খুব সাদামাটা। মূলত প্রবাসী বাঙ্গালী এবং শেকড়ের সাথে তাদের টানা-পোড়েন নিয়ে গল্প। শুরুতে দেখায় একজন চাকরী নিয়ে ইউএস যাচ্ছে, অন্যদিকে ইউএস-এ বড় হওয়া আরেকজন বাঙ্গালী কোলকাতায় ফিরে আসে নাড়ীর টানে। এই দুই পরবাসে দুই বাঙ্গালীর কান্ডকীর্তি, নানা ঘটনাপ্রবাহে তাদের অভিজ্ঞতা এবং আশপাশের মানুষদের নিয়ে তৈরি দি বং কানেকশান।

গল্পে আসলে কোন অভিনবত্ব নেই। এরকম গল্পগুলোকে আমি গুগল-গল্প বলি। মানে, কোন একটা শব্দ নিয়ে গুগলে খোঁজ লাগালে একদম প্রথম দিকে যে লিংকগুলো আসে, ওগুলোই সবচেয়ে কমন লিংক। বং কানেকশানের গল্পটাও তেমনি। পরবাসী মন নিয়ে ভাবতে বা লিখতে গেলে একদম কমন-গল্প হিসেবে যে ঘটনাগুলো মনে আসবে, বং কানেকশান তার বাইরে হাঁটেনি একদম।

তবু, পুরো ছবিটা দেখে যেতে কোথাও খারাপ লাগেনি। নতুন কোন গভীর ভাবনার উদ্রেক ঘটায়নি মনে, তেমন বিষম কোন চিন্তা-টিন্তায় ফেলে দেয়নি, একদম সরলরৈখিক ভাল লাগা।

নীল দত্তের মিউজিক, এক কথায় দারুণ লেগেছে। থিম মিউজিক ছাড়াও, সুজন মাঝিরে গানটা তুমুল। অন্জন বেশ অনেকটা বদলে নতুন করে গেয়েছেন তার "তুমি না থাকলে" গানটা। এটাও চমৎকার।

আর যে গানটার কথা লিখবো না ভেবেছিলাম, তবু লিখছি- রবি দাদুর পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে গানটা সম্পূর্ণ ঝিনচ্যাক কম্পোজিশানে গাওয়া হয়েছে এই সিনেমায়। পরীক্ষা নিরীক্ষা আমার কাছে বরাবরই বেশ লাগে, শুনে ভাল লাগলে ভাল বলবো, নইলে বলবো "দুরে গিয়ে মর", ব্যস, এইতো।

ঘটনা হচ্ছে, পাগলা হাওয়ার মুল গানটাকে রীতিমতন ওলট পালট করে দেয়া এই নতুন ভার্সানটা শুনতে, খারাপ দুরে থাক, বরং বেশ ভাল লেগেছে। এতই যে, মাঝে মাঝেই ইউটিউবে গিয়ে গানটা শুনে, বেশ খানিকটা অপরাধী-অপরাধী মন নিয়েও মজা নিচ্ছি।
*
ইউটিউবের লিংকগুলো দিয়ে দিচ্ছি নীচে। ভাল লাগলে পরে সিনেমাটাও দেখে নিতে পারেন। হাতের কাছে না পেলে ইউটিউবেই পেয়ে যাবেন।

১। পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে
২। থিম মিউজিক
৩। সুজন মাঝিরে
৪। তুমি না থাকলে

Popular posts from this blog

The Boy, the Mole, the Fox and the Horse | Charlie Mackesy

মধ্যাহ্নভোজ | উইলিয়াম সমারসেট মম্‌ | রূপান্তরঃ তারেক নূরুল হাসান

আরেকটিবার-