হাওয়াই মিঠাই ৬

বৈদেশে বসতি গাড়লে, কমবেশি সকলেরই পছন্দের চ্যানেল একটাই হয়, নাম তার ইউটিউব।

উপমহাদেশীয় চ্যানেলগুলায় এখন ট্যালেন্ট হান্ট জাতীয় সংগীত প্রতিযোগীতার ছড়াছড়ি। ঘরে ফিরে বউ তার জাগতিক সকল কর্ম ভুলে ইউটিউব খুলে নিয়ে বসে। এর মাঝে চ্যানেল আই সেরা শিল্পী নামের একটা অনুষ্ঠান খুব জাঁক জমক নিয়ে শুরু হয়েছে। ক্লোজআপ ওয়ানের মতই একটা প্রোগ্রাম, তবে এদের বাজনা বোধহয় আরো বেশি!

আমার আবার সময়ের টানাটানি। সারাক্ষণই নিজের জন্যে মাল্টি টাস্কিং ফর্মুলা চালাতে হয়। ডেস্কটপে কোন মুভি চালিয়ে দেখতে দেখতেই ল্যাপটপে হয়ত গুগল ডক খুলে হাওয়াই মিঠাই এর ড্রাফ্ট সেরে নিচ্ছি। অথবা সচলায়তনে ঢুকে টুক টাক মন্তব্য ঝেড়ে দিচ্ছি।
কিন্তু বউয়ের সেটা পছন্দ নয়!

সিনেমার বেলায় মুখ বুজে সহ্য করে। কিন্তু গানের এই প্রোগ্রামগুলোতে আমার হাংকি পাংকিতেও কাজ হয় না। এক দফা এক দাবী, পূর্ণ মনোযোগে সেই গান আমার দেখা চাই।

তা দেখি, কিন্তু ওর চোখ এড়িয়ে ল্যাপটপে নিজের কাজ চালাতেও ভুলি না। মাঝে মাঝে খুব ভাব নিয়ে বলি, "নাহ, এই জায়গাটা ভাল গায় নি, সুর কেটে গেছে।" অথবা, "বাহ, এ তো খুব ভাল গায়!"
সবসময় অবশ্য পার পাই না, মাঝে সাঝেই ধরা খেয়ে যাই। কারণ বউ প্রায়শই স্পট কুইজ নেয় আমার। "বলতো জাজ কি বলেছে মাত্র?" অথবা, "মেয়েটার এক্সপ্রেশানটা দেখলি?"
তো, এই ক্যুইজের ভয়েই আমার মনোযোগ বাড়িয়ে দিতে হয়, কি আর করা।

চ্যানেল আইয়ের প্রোগ্রামটা বেশ আটঘাট বেঁধেই করা হয়েছে। পরিকল্পনায় আছেন বোধহয় আফজাল হোসেন। স্টেজের জাঁকজমক দেখে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। জাজ প্যানেল নিয়ে তো কোন কথাই হবে না, আমাদের একদম সেরা সব শিল্পীদের নিয়ে আসা হয়েছে সেখানে। কিন্তু ফারজানা ব্রাউনিয়া এরকম রোবট হয়ে গেল কেমন করে? ওর আগের কোন একটা স্ট্রিট শো জাতীয় কিছু একটা দেখেছিলাম, সারাক্ষণই দৌড় ঝাঁপ করে বেড়াত সেখানে। আহা, দেখতেও ভাল লাগতো। কিন্তু গানের অনুষ্ঠান যেমনটা হওয়া দরকার, ভীষণ প্রাণবন্ত, এখানে তার ছিটে ফোঁটাও নেই! একদম নিক্তি দিয়ে মেপে মেপে কথা বলছে, ভীষণ দৃষ্টিকটুভাবে একবার ডানদিকে ফিরছে আবার বাম দিকে, সত্যিই যেন রোবোকপ দেখছি! সেই প্রাণময়তা কোথা হারালো?
এর চেয়ে বরং ঐ মেয়েটাকেই উপস্থাপনায় নিয়ে এলে ভাল হতো- নাম ভুলে গেছি- দিহানের বোন- জেলায় জেলায় বাছাই পর্বগুলোয় যে উপস্থাপনা করছিলো। ও-ই বরং অনেক বেশি মানানসই। আফজাল বোধহয় অন্য দেশের ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রামগুলো খুব একটা দেখেন নি, নিদেনপক্ষে আমাদের দেশেরই এনটিভি আয়োজিত আগের দুটো ক্লোজআপওয়ান! দেখে নিলে ভাল হতো।

খুঁজে খুঁজে গানের অনুষ্ঠান দেখার বাতিক আছে আমাদের দুজনেরই। এরকম আরেকটা প্রোগ্রামেরও নিয়মিত দর্শক আমরা দুজন, আমারও গাইতে ইচ্ছে হলো। ফারাহ রুমার উপস্থাপনায় মূলত গীতিকার বা সুরকার যারা গানও করেন, তাদের নিয়েই এই অনুষ্ঠান। এটার ডেব্যু করেছিলাম অর্ণবকে দিয়ে, তাতেই আরো ভক্ত হয়ে গেছি। ফারাহ রুমার স্মার্টনেসও দেখবার মতন, সুন্দর বাংলায় উপস্থাপনা করে, খুব সহজেই বিজ্ঞাপন বিরতি নেয়, ব্রেক নেবার দরকার হয় না। কথাও বলে "দর্শক"দের উদ্দেশ্য করে, ভিউয়ার্সদের নয়। এইখানে নিশ্চয়ই পরিচালকের কিছু কারিগরি আছে, তারপরেও উপস্থাপিকাকে অনেক ধন্যবাদ আমাদের সহজ সুন্দর বাংলার শান্তি দেবার জন্যে।

এরকম আরেকটা অনুষ্ঠান দেখতে গিয়ে মজা হলো। নাম ভুলে গেছি সেটার, অতিথি হিসেবে এসেছিলেন বাপ্পা মজুমদার, শওকত আলী ইমন আর শ্রাবস্তী তিন্নি। বাপ্পা ইমন ঠিকাছে, কিন্তু গানের প্রোগ্রামে তিন্নিকে দেখে একটু বিষমই খেলাম। কাহিনি কি? খানিক কথাবার্তার পরে যখন শুনলাম তিন্নি গান গাইবে, এবারে সত্যিই নড়েচড়ে বসলাম। মোটামুটি নিশচিতই ছিলাম, আরও একটা ঘোড়ারোগের প্রকৃষ্ট উদাহরণ পাবো ও গলা খুললেই। আনন্দে আমার থাবা থেকে নখ বেরিয়ে গেলো, এইবার পাইছি!

কিন্তু ও গান শুরু করতেই অবাক হলাম! চমৎকার গলা, আর খুবই সুন্দর গায়কী। মিতালি মুখার্জীর বহু পুরনো একটা গান "হারানো দিনের মত, হারিয়ে গেছ তুমি" খুবই চমৎকার করে গাইলো। ভুল টুল ছাড়াই খুব চমৎকার করে সামলে নিলো গানের কারুকাজগুলো। আমি, প্রকারান্তরে মুগ্ধই হলাম বলা চলে।

ওই গানটা নেই, তবে তিন্নির আরেকটা গান পাওয়া গেছে নেট খুঁজে। এখানে তুলে দিলাম সেটা।
কদিন ধরে ঘুরেফিরেই শোনা হচ্ছে গানটা, ভালও লাগছে বেশ।


Vabe_Mon_Okaron_Sa...


Popular posts from this blog

The Boy, the Mole, the Fox and the Horse | Charlie Mackesy

মধ্যাহ্নভোজ | উইলিয়াম সমারসেট মম্‌ | রূপান্তরঃ তারেক নূরুল হাসান

আরেকটিবার-