লেখাচুরির গল্প
তো, এটা আসলে আপনাতেই হয়ে যায়। পঞ্চাশটা ছেলে-পেলে একসাথে থাকলে, সবার দোষগুণ একদিকে ধায় না, একেকজনের প্রতিভা একেকদিকে স্ফূরিত হয়।
ব্যাতিক্রম কেবল আমি, মোটামুটি প্রতিভাহীন অবস্থাতেই আমি পুরো কলেজলাইফ কাটিয়ে দিয়েছি।
আমি খেলাধূলায় কখনোই ভাল না। রুম ক্রিকেট বা করিডোর ক্রিকেটে প্লেয়ার শর্ট পড়লে আমার ডাক পড়ে, আর তা না হলে আমার কোন গুরুত্বই নেই। আমিও অলস মানুষ, মাথা গুঁজে কোনমতে একটা বই শেষ করে কখন আরেকটা গল্পের বই ইস্যু করবো, সারাক্ষণ এই নিয়েই আছি।
ক্লাসে যারা ভাল খেলোয়াড়, সেভেনের থার্ড টার্ম পেরুবার আগেই তাই তারা সুপার-স্টার। কঠিন ভাব নিয়ে ঘোরাফেরা করে।
এই অপরিসীম ভাবের কিয়দংশ পরিমান অর্জন করতে আমাকে আমাদের ক্লাশের প্রথম দেয়াল পত্রিকা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে! সারা বছরে শুধু এই দেয়ালপত্রিকা বা কলেজ ম্যাগাজিনের সময়টুকুতেই আমি খানিকটা আলগা-মুডে থাকতাম। স্যার প্রুফ দেখার কাজ দিতেন, আমি খুব ব্যস্ত ভঙ্গিতে সে সব কাজ করতাম। যত না করতাম, তার চেয়ে বেশি ভাব নিতাম। জুনিয়র ক্লাশে থাকতে একটা গল্প জমা দিলাম, কলেজ কালচারাল প্রিফেক্ট ছিলেন রহমান ভাই, উনি ডেকে নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এইটা তুমি লিখছো? আমি হ্যা বলার পরেও বিশ্বাস করলেন না। বারবার জিজ্ঞেস করলেন কোন পত্রিকা থেকে মেরে দিয়েছি কি না! তখনই বুঝে গেছি লেখাটা ভাল হইছে। আমি তো মহা খুশি!
পত্রিকা থেকে মারার ব্যাপারটা তখন মোটামুটি সাধারণ ব্যাপার ছিলো। যে কোন উপলক্ষে লেখা দিবার সিজন আসলেই সব পুরনো পত্রিকা/ ম্যাগাজিন উল্টে পাল্টে সবাই 'ধরা খাবার চান্স কম'-এরকম লেখা বের করে ফেলতো। যাদের এইরকম 'কষ্টকর' কাজ করতেও আলসেমী লাগতো, তারা আমার কাছে চাইলেই, এবং কোন কোন ক্ষেত্রে চাইবার আগেই আমি কবিতা ধার দেবার জন্যে রেডি হয়ে বসে থাকতাম! এইসব দুইনাম্বারীর ফলে কলেজ ম্যাগাজিনে দেখা যেত আমার একারই পাঁচ ছয়টা লেখা, বন্ধুদের নামে।
আমার জুনিয়র রুমমেট একবার হাউসের দেয়ালপত্রিকার জন্যে পত্রিকা থেকে মেরে দিয়ে একটা কবিতা জমা দিয়েছিলো, ওটা ফেরত এসেছে ওর কাছে, আরও চার লাইন যোগ করে দিতে হবে। ও পড়েছে মুশকিলে! আমি তখন বীরদর্পে নতুন চার লাইন লিখে দিলাম এক বসায়। কারও বোঝারই সাধ্য নাই! আর আমার তখন কঠিন 'ভাব'!
এই লেখা জমা-টমা দেবার সময় নানারকম মজার কাহিনি ঘটতো।
আমাদের মজিবের নানান রকম কাণ্ডকীর্তি রীতিমতন কিংবদন্তী হবার সামর্থ্য রাখে! ও একবার ইংরেজী ম্যাগাজিনে ( প্রতি টার্মে বের হতো, সম্ভবত দ্য রিপলস নাম ছিলো ওটার) একটা কবিতা জমা দিলো আমাদের ইংরেজী শিক্ষকের কাছে। সেই শিক্ষক খুব ভোলাভালা ছিলেন, নাম বললেই চিনবে সবাই, তাই বলছি না, শুধু বলি, উনি ডান গাল চুলকাতেন বাম হাত দিয়ে, তাও সোজাসুজি না, মাথার ওপর দিয়ে হাত ঘুরিয়ে এনে!
তো সেই শিক্ষক মজিবের কবিতা লাল দাগ দিয়ে ভরিয়ে দিলেন, তিন চার জায়গার গ্রামার ঠিক করে দিলেন। মজিব সেই কবিতা আবার হাতে নিয়ে স্যারের কাছে গিয়ে মৃদু আপত্তি জানিয়েছিলো। স্যার সপাটে বললেন, ব্যাটা এইসব কি লিখিস! গ্রামারের কোন ঠিক-ঠিকানা নেই!
বেচারা মজিব, পুরো একটা লাইব্রেরী ক্লাস বরবাদ করে অনেক ঘেঁটে শেক্সপীয়রের স্বল্প-পরিচিত একটা কবিতা তুলে এনেছিলো, স্যার যে শেক্সপীয়রের মেন্যুস্ক্রিপ্টেও লাল দাগ দিবেন ও কেমনে জানবে!
আমার সাথে বেশ কয়বার মজার কাহিনি ঘটেছিলো। বিজয় দিবস নিয়ে 'তরঙ্গ'-এর একটা সংখ্যা বের হবে। আমি দুইটা কবিতা রেডি করলাম, তুলনামূলকভাবে ভাল যেটা, নির্দ্বিধায় সেটা দিলাম আমার নামে, অন্যটা তানভীরের নামে। পরে দেখা গেলো- আমার কবিতা ছাপাই হয় নি! তানভীরেরটা গ্যাছে। :-)
আমাদের ক্লাশ যেবার হাউসে দেয়াল পত্রিকা বানালো, সে বারও তাই। দুইটা গল্প লিখলাম। খানিকটা আঁতেলিক যেটা ছিলো, সেটা আমার নামে দিলাম, সাধাসিধা অন্যটা দিলাম আরেকজনের নামে। দেয়াল পত্রিকার কম্পিটিশান শেষে দেখা গেল, ঐ গল্পটা বেস্ট গল্প হিসেবে প্রাইজ পেয়ে গেছে, আমার কপাল ভাঙ্গা! :(
শেষ করি আরেকটা ঘটনা দিয়ে।
এইরকম লেখা জমা দেবারই মৌসুম সেটা। তো দোস্ত রাজীবের শখ হইছে ওর নামে একটা কবিতা ছাপা হোক। এমনিতে একাডেমিক পড়াশোনা নিয়েই থাকে, অন্য বই-টই পড়ে না একদম। তো কবিতা ছাপানোর শখ হইছে, এদিকে আমার ক্লোজ ফ্রেন্ড ছিল বলেই মনে হয় আমার ওপর একেবারেই ওর ভরসা ছিলো না। :-) ও তাই লাইব্রেরীতে গিয়ে অনেক খুঁজে টুজে একটা কবিতা বের করে ওর নামে লিখে স্যারের কাছে জমা দিয়ে আসলো। খুব খোশমেজাজে ছিলো। আমি বললাম, ধরা টরা খাবি না তো? বিখ্যাত কারো কবিতা দিছিস নাকি?
ও বলে, আরে না, বিখ্যাত না, কেউ নামই শোনে নি এমন একজনের কবিতা দিছি।
আমার শংকা তবু কমে না, জিজ্ঞেস করি, কার কবিতা? নাম কী?
ও বলে, মহাদেব সাহা। নাম শুনছস জীবনে?
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলি...।
ব্যাতিক্রম কেবল আমি, মোটামুটি প্রতিভাহীন অবস্থাতেই আমি পুরো কলেজলাইফ কাটিয়ে দিয়েছি।
আমি খেলাধূলায় কখনোই ভাল না। রুম ক্রিকেট বা করিডোর ক্রিকেটে প্লেয়ার শর্ট পড়লে আমার ডাক পড়ে, আর তা না হলে আমার কোন গুরুত্বই নেই। আমিও অলস মানুষ, মাথা গুঁজে কোনমতে একটা বই শেষ করে কখন আরেকটা গল্পের বই ইস্যু করবো, সারাক্ষণ এই নিয়েই আছি।
ক্লাসে যারা ভাল খেলোয়াড়, সেভেনের থার্ড টার্ম পেরুবার আগেই তাই তারা সুপার-স্টার। কঠিন ভাব নিয়ে ঘোরাফেরা করে।
এই অপরিসীম ভাবের কিয়দংশ পরিমান অর্জন করতে আমাকে আমাদের ক্লাশের প্রথম দেয়াল পত্রিকা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে! সারা বছরে শুধু এই দেয়ালপত্রিকা বা কলেজ ম্যাগাজিনের সময়টুকুতেই আমি খানিকটা আলগা-মুডে থাকতাম। স্যার প্রুফ দেখার কাজ দিতেন, আমি খুব ব্যস্ত ভঙ্গিতে সে সব কাজ করতাম। যত না করতাম, তার চেয়ে বেশি ভাব নিতাম। জুনিয়র ক্লাশে থাকতে একটা গল্প জমা দিলাম, কলেজ কালচারাল প্রিফেক্ট ছিলেন রহমান ভাই, উনি ডেকে নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এইটা তুমি লিখছো? আমি হ্যা বলার পরেও বিশ্বাস করলেন না। বারবার জিজ্ঞেস করলেন কোন পত্রিকা থেকে মেরে দিয়েছি কি না! তখনই বুঝে গেছি লেখাটা ভাল হইছে। আমি তো মহা খুশি!
পত্রিকা থেকে মারার ব্যাপারটা তখন মোটামুটি সাধারণ ব্যাপার ছিলো। যে কোন উপলক্ষে লেখা দিবার সিজন আসলেই সব পুরনো পত্রিকা/ ম্যাগাজিন উল্টে পাল্টে সবাই 'ধরা খাবার চান্স কম'-এরকম লেখা বের করে ফেলতো। যাদের এইরকম 'কষ্টকর' কাজ করতেও আলসেমী লাগতো, তারা আমার কাছে চাইলেই, এবং কোন কোন ক্ষেত্রে চাইবার আগেই আমি কবিতা ধার দেবার জন্যে রেডি হয়ে বসে থাকতাম! এইসব দুইনাম্বারীর ফলে কলেজ ম্যাগাজিনে দেখা যেত আমার একারই পাঁচ ছয়টা লেখা, বন্ধুদের নামে।
আমার জুনিয়র রুমমেট একবার হাউসের দেয়ালপত্রিকার জন্যে পত্রিকা থেকে মেরে দিয়ে একটা কবিতা জমা দিয়েছিলো, ওটা ফেরত এসেছে ওর কাছে, আরও চার লাইন যোগ করে দিতে হবে। ও পড়েছে মুশকিলে! আমি তখন বীরদর্পে নতুন চার লাইন লিখে দিলাম এক বসায়। কারও বোঝারই সাধ্য নাই! আর আমার তখন কঠিন 'ভাব'!
এই লেখা জমা-টমা দেবার সময় নানারকম মজার কাহিনি ঘটতো।
আমাদের মজিবের নানান রকম কাণ্ডকীর্তি রীতিমতন কিংবদন্তী হবার সামর্থ্য রাখে! ও একবার ইংরেজী ম্যাগাজিনে ( প্রতি টার্মে বের হতো, সম্ভবত দ্য রিপলস নাম ছিলো ওটার) একটা কবিতা জমা দিলো আমাদের ইংরেজী শিক্ষকের কাছে। সেই শিক্ষক খুব ভোলাভালা ছিলেন, নাম বললেই চিনবে সবাই, তাই বলছি না, শুধু বলি, উনি ডান গাল চুলকাতেন বাম হাত দিয়ে, তাও সোজাসুজি না, মাথার ওপর দিয়ে হাত ঘুরিয়ে এনে!
তো সেই শিক্ষক মজিবের কবিতা লাল দাগ দিয়ে ভরিয়ে দিলেন, তিন চার জায়গার গ্রামার ঠিক করে দিলেন। মজিব সেই কবিতা আবার হাতে নিয়ে স্যারের কাছে গিয়ে মৃদু আপত্তি জানিয়েছিলো। স্যার সপাটে বললেন, ব্যাটা এইসব কি লিখিস! গ্রামারের কোন ঠিক-ঠিকানা নেই!
বেচারা মজিব, পুরো একটা লাইব্রেরী ক্লাস বরবাদ করে অনেক ঘেঁটে শেক্সপীয়রের স্বল্প-পরিচিত একটা কবিতা তুলে এনেছিলো, স্যার যে শেক্সপীয়রের মেন্যুস্ক্রিপ্টেও লাল দাগ দিবেন ও কেমনে জানবে!
আমার সাথে বেশ কয়বার মজার কাহিনি ঘটেছিলো। বিজয় দিবস নিয়ে 'তরঙ্গ'-এর একটা সংখ্যা বের হবে। আমি দুইটা কবিতা রেডি করলাম, তুলনামূলকভাবে ভাল যেটা, নির্দ্বিধায় সেটা দিলাম আমার নামে, অন্যটা তানভীরের নামে। পরে দেখা গেলো- আমার কবিতা ছাপাই হয় নি! তানভীরেরটা গ্যাছে। :-)
আমাদের ক্লাশ যেবার হাউসে দেয়াল পত্রিকা বানালো, সে বারও তাই। দুইটা গল্প লিখলাম। খানিকটা আঁতেলিক যেটা ছিলো, সেটা আমার নামে দিলাম, সাধাসিধা অন্যটা দিলাম আরেকজনের নামে। দেয়াল পত্রিকার কম্পিটিশান শেষে দেখা গেল, ঐ গল্পটা বেস্ট গল্প হিসেবে প্রাইজ পেয়ে গেছে, আমার কপাল ভাঙ্গা! :(
শেষ করি আরেকটা ঘটনা দিয়ে।
এইরকম লেখা জমা দেবারই মৌসুম সেটা। তো দোস্ত রাজীবের শখ হইছে ওর নামে একটা কবিতা ছাপা হোক। এমনিতে একাডেমিক পড়াশোনা নিয়েই থাকে, অন্য বই-টই পড়ে না একদম। তো কবিতা ছাপানোর শখ হইছে, এদিকে আমার ক্লোজ ফ্রেন্ড ছিল বলেই মনে হয় আমার ওপর একেবারেই ওর ভরসা ছিলো না। :-) ও তাই লাইব্রেরীতে গিয়ে অনেক খুঁজে টুজে একটা কবিতা বের করে ওর নামে লিখে স্যারের কাছে জমা দিয়ে আসলো। খুব খোশমেজাজে ছিলো। আমি বললাম, ধরা টরা খাবি না তো? বিখ্যাত কারো কবিতা দিছিস নাকি?
ও বলে, আরে না, বিখ্যাত না, কেউ নামই শোনে নি এমন একজনের কবিতা দিছি।
আমার শংকা তবু কমে না, জিজ্ঞেস করি, কার কবিতা? নাম কী?
ও বলে, মহাদেব সাহা। নাম শুনছস জীবনে?
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলি...।