হাওয়াই মিঠাই ৫

ঢাকা মেডিক্যালের কোন একটা জনবহুল ওয়ার্ডে প্রায় মাসখানেক কাটিয়ে ডেঙ্গু থেকে সেরে উঠে যেবারে বাসায় ফিরি, তারপরে অনেকদিন ডাক্তারের কাছে আর অসুখ নিয়ে আমাকে যেতে হয় নি।
গতকাল হলো, সম্ভবত বছর সাতেক বা তারও বেশি কিছু সময় বাদে।

অসুখ মানে সাংঘাতিক কিছু নয়। কাল দুপুরে মূল শহর থেকে বাসায় ফিরতে ফিরতে হঠাৎ দেখি ডানে-বামে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতে পারছি না। ঘুম থেকে উঠে মাঝে মাঝে এরকম বিতিকিচ্ছিরি ব্যাপার ঘটে, কিন্তু সে তো সাত সকালে! ভর দুপুরে হঠাৎ কোত্থেকে এই জিনিস উড়ে এসে জুড়ে বসলো আমার ঘাড়ে, মালুম করতে পারলাম না। সোজা রাস্তায় চোখ রেখে গাড়ি চালানোই নিয়ম, কিন্তু গাড়ি চালানোর সময় ডানে-বামে তাকানোটাও কি ভীষন জরুরি, সেটা গতকালের আগে আর এত ভাল করে কখনো আমাকে বুঝতে হয় নি!

কোন মতে বাসায় ফিরে সিলিং-এর দিকে লম্বালম্বি তাকিয়ে ছোটখাটো একটা ঘুম দিলাম, সন্ধ্যায় ঘুম ভেঙ্গে দেখি ঘাড় আরো শক্ত হয়ে গেছে! চোখের মণি শুধু এদিক ওদিক করতে পারি, এত বড় মুন্ডুর আর কোন কিছুই নড়ছে না কোন দিকে। শুনেছি প্যাঁচা নাকি চোখের মণি নাড়াতে পারে না, এই জন্যে সৃষ্টিকর্তা তাকে অবিশ্বাস্যভাবে ২৭০ ডিগ্রি পর্যন্ত ঘাড় ঘুরাবার অনুমতি দিয়েছেন। আর বেচারা আমি, একটু খানি মণি ঘোরাই, তার বদলে আমার ঘাড় এমন করে আটকে দিতে হবে! হায়, এ কেমন বিচার!

তবুও ডাক্তারের কাছে যাবো না বলেই ঠিক ছিল মনে। 'ওষুধ খেলে রোগ সারে সাতদিনে, আর না খেলে মাত্র এক সপ্তায়'- এই মতবাদে ঘোর বিশ্বাসী আমি ঔষধও খাই না কত বছর মনে নেই।

কিন্তু আমার বন্ধু-ভাগ্য বরাবরই ভালো। এই দুরদেশেও তাতে আকাল ঘটে নি। ফোনে খবর পেয়ে সেরকমই একজন বাড়ি এসে আমাকে জোর করে ডাক্তারখানায় নিয়ে গেলো। শত আপত্তিতেও টলানো গেল না। ঘাড়ে ধরেই নিতো, নেহাৎ সেখানে ব্যথা ছিলো বলে বেঁচে গেছি।

এপয়েন্টমেন্ট ছাড়া গেছি, লম্বা সময় অপেক্ষার পরে ভেতরে ঢুকবার সুযোগ হলো।
ডাক্তার ভদ্রলোক এইদেশী নন। আফ্রিকান মহাদেশের কোন এক দেশের হবেন। আমার সমস্যা শুনে বেশ বুঝদারের মতন মাথা নাড়লেন, তার মাথা নাড়া দেখে শক্ত ঘাড়ে বসে বসে রীতিমতন ঈর্ষা বোধ করতে থাকলাম। তারপরেই পান চিবুনোর মতন ভঙ্গিতে তিনি যে কি কি আমাকে বলে গেলেন, তার কিছুই আমি বুঝলাম না। অজিদের আখাস্তা ইংরেজী শুনে ইতিমধ্যেই আমার কান পঁচে গেছে, আমেরিকান ইংরেজি এখন তাই কানে মধুবর্ষণ করে। আমি জানি যে আফ্রিকান ইংরেজিও অনেক ভালো, কিন্তু ইনি কোন ইংরাজিতে কথা কন?

আবারও উদ্ধার করলেন সেই বন্ধু, মোটামুটি দোভাষীর কাজ চালালেন কিছুক্ষণ। একটা ছোট্ট সাইজের প্রেসক্রিপশান হাতে বের হলাম, ভল্টারেন নামের কোন একটা পেইন কিলারের উপদেশ দেয়া তাতে।
আমার মনটাই খারাপ হয়ে গেলো। লম্বা সময় ওষুধ থেকে দুরে থেকেছি, ভালোই ছিলাম। এই নীরিহ-দর্শন ওষুধের কল্যাণে আবার সেই জগতে প্রবেশ করতে হবে না তো!

হে প্রভু, রক্ষা করো, আমি আর প্যাঁচাকে নিয়ে তোমার সাথে বদমাইশি করবো না। মুখপোড়া জীবনানন্দ মরুক গিয়ে, ভেসে যাক কোন বেনো জলে, আমাকে তুমি ভালো করে দাও!

Popular posts from this blog

The Boy, the Mole, the Fox and the Horse | Charlie Mackesy

মধ্যাহ্নভোজ | উইলিয়াম সমারসেট মম্‌ | রূপান্তরঃ তারেক নূরুল হাসান

আরেকটিবার-