হাওয়াই মিঠাই ৩

মোবাইলের মাধ্যমে অনেক ধরণের সার্ভিস চলে এসেছে এখন বাজারে। প্রথমে ছিলো শুধুই কথা বলা, তারপরে এলো মেসেজ। এরপর ইন্টারনেট, টিভি দেখা, ক্যামেরা, ভিডিও... আরো কত হাবি জাবি। কিন্তু মোবাইলের মাধ্যমে সাত-সমুদ্র পার করে বন্ধুদের পশ্চাদ্দেশে লাথি কষাবার কোন ব্যবস্থা নাই কেন? থাকা দরকার ছিলো।
এই মুহুর্তে রাগে দুঃখে ক্ষোভে অস্থির হয়ে আছি!

আমাদের কলেজের রি-ইউনিয়ন হচ্ছে। টানা তিনদিন ধরে। পাঁচ বছর পর পর একবার করে হয়। প্রথমটা পেয়েছিলাম যখন কলেজেই পড়ি, সাঙ্ঘাতিক মজা হয়েছিলো সে বারে। তখন কলেজেও আমরা সিনিয়ার, সম্ভবত ইলাভেনে পড়ি, তাই ভাবসাব ছিলো বেশ। পরেরটা কলেজ থেকে বের হবার বছর তিনেকের মধ্যেই, সম্ভবত ২০০৪ এ।

প্রতিবারই রিইউনিয়নের নাম দেয়া হয় 'উৎসব'- সাথে সাল যোগ হয়, উৎসব'৯৩, উৎসব'৯৯ এরকম। এবারেও কি তাই হয়েছে? জানি না।
১৪ তারিখ থেকে শুরু হয়ে আজ শেষ হবে সব প্রোগ্রাম। এই তিনটা দিনই খুব অস্থির হয়ে ছিলাম। সারাক্ষণ মিস করেছি পুরনো বন্ধুদের, কলেজকে।

মেসেজে হাল্কা পাতলা খবর পাচ্ছিলাম, আজ দুপুরে আর থাকতে না পেরে ফোনই করে ফেল্লাম। তানভীরের সাথে একটু কথা বলেই ফোন হাত বদল হতে থাকলো। তারপরে নাঈম, নেভীতে আছে এখন, মাঝে নাকি নেভাল একাডেমীর এডজুটেন্টও ছিলো ও। মোরশেদের গলা শুনলাম বহুদিন বাদে। কলেজে থাকবার সময় ও হাসানের গান গেয়ে বিখ্যাত হয়ে গেছিলো। আমি ভাবতাম এরকম ভারিক্কি গলা দিয়ে ও হাসানের মতন চিকন-চাকন গান বের করে ক্যামনে?
ফয়সলের সাথেও কথা হলো- লম্বা সময় বাদে, আমাদের ব্যাচের একমাত্র ডাক্তার! বউ নিয়ে গেছে ও সাথে। সব মিলিয়ে নাকি ২১ জন গেছে আমাদের ব্যাচের। বিশাল ব্যাপারই বলা যায়- কলেজ থেকে বের হবার পরে এরকম করে আর একসাথে হয় নি বোধহয় অনেকেই। যুবায়েদের সাথে কথা হলো। জলপাই যুবায়েদ তার কলাপাতা রঙের মোটর বাইকে চেপে নাকি ঢাবিতে টহল দিয়ে বেড়ায়, এই নিয়ে টিজ করলাম বেশ।

তাদের আনন্দ করার লিষ্টি শুনে গা জ্বলে গেল আমার। আজ নাকি মাইলস আসবে রাতে। শুরুর দিন ছিলো হায়দার হোসেন। মাঝে নাকি মিলা (!!!) আর সোনিয়াকেও আনার কথা।
মাইলসের কনসার্ট মিস করলাম- এই ভেবে আমার অলরেডি রাতের ঘুম নাই হয়ে যাচ্ছে!

রি-ইউনিয়নের মূল মজাটা অবশ্যই পুরনো বন্ধুদের কাছে পাওয়া। সাথে আরো আছে- আগে পরের ব্যাচের অনেককে দেখা, যাদের সাথে এক সময় হয় ভালো সম্পর্ক ছিলো, অথবা খারাপ।
অনেক স্যারদের সাথেও দেখা হয় তখন। আমি নিশ্চিত এবারেও আবু মুহম্মদ রইস স্যার ও লতিফা ম্যাডাম ঠিকই আমাদের রিইউনিয়নে চলে এসেছেন। স্যার আর ম্যাডাম যে কলেজেই থাকুন না কেন আমাদের কলেজের জন্যে একটুও টান কমে নি তাদের- রিইউনিয়নের সময় প্রতিবার নিয়ম করে হাজিরা দেন আমাদের কলেজে।

পুরনো অনেক শিক্ষকেরা, যারা একসময় জীবন হারাম করে দিয়েছিলেন, তারাও যখন রিইউনিয়নের সময় বেশ হেসে হেসে কথা বলেন, আমার বেশ মজাই লাগে।
ফোনে বন্ধুদের সাথে কথা বলে আসলেই মন খারাপ হয়ে গেলো। ব্যাটারা নিজেরা মজা করে আর আমাকে সেই মজার বিবরণ দিয়ে দিয়ে মেসজ পাঠায়! কেমনটা লাগে!!

মনের দুঃখে একটা মানপত্র লিখে ফেলবো কি না ভাবছি।
হে মাইলস, ওগো মিলা-সোনিয়া, আর হে আমার পেট-প্রিয় রোস্টকৃত খাসীদ্বয়, তোমাদের ভুলি নাই, ভুলিবনা। এইবছর আর তোমাদের সাক্ষাৎ পাইলাম না, কিন্তু মনে রাইখো হে ডাইনিং হলের ঝকমকে বিরিয়ানি- এই দিন দিন নয়, আরো দিন আছে।

নাহ, সত্যি ভাবছি, এবারে যাওয়া হলো না, পরেরটা হবে পাঁচ বছর বাদে আবার। পাঁ-আ-আ-চ বছর!
কিন্তু ততদিনে তো আমি বুড়ো হয়ে যাবো!

Popular posts from this blog

The Boy, the Mole, the Fox and the Horse | Charlie Mackesy

মধ্যাহ্নভোজ | উইলিয়াম সমারসেট মম্‌ | রূপান্তরঃ তারেক নূরুল হাসান

আরেকটিবার-