মন্তব্য-পোষ্টঃ প্রজাপতিকাল

প্রজাপতিকাল দেখা শুরু করেছি রাত বারোটায়, এবং তাও সকাল পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠতেই হবে এরকম একটা তাড়া নিয়ে। তবে সত্যি কথা হচ্ছে, টেলিফিল্মটি শুরু হবার পরে ঘুমের কথা একেবারেই ভুলেই গেছি, এবং ঘুম থেকে উঠবার কথাও।

এক কথায় অনুভুতি জানতে চাইলে বলবো, খুব ভাল লেগেছে। কিন্তু তাহলে আরো কিছু বলার বাকি থেকে যায়।

প্রথমেই চমকে উঠেছি বাবু'র মেকআপ দেখে। দুর্দান্ত হয়েছে সেটা, একদম প্রথমবার স্ক্রীণে বাবুকে দেখেই একটা গা শিউরানো ভাব হয়েছে মনে। কিন্তু নাটক ক্রমশ এগুতে থাকলে জয়া ( বাবুর স্ত্রী) যেমন করে ঐ ভয়ংকর মুখটার আড়ালে সবচেয়ে সুন্দর মুখ খুঁজে পেয়েছিল, জয়ার সাথে সাথে আমরাও দেখতে পাই যেন সেই মুখটাকে।

জয়ার অভিনয় চমৎকার হয়েছে। বাবুর কথা নতুন করে বলার নেই আর। এই সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী অভিনেতার নাম জানতে চাইলে আমি কোন দ্বিধা ছাড়াই বলবো বাবুর নাম।
ভাল হয়েছে মিলনের অভিনয়ও। সোজা করে আচড়ানো চুলের সমান্তরালে বারবার হাত মুখের উপর বুলিয়ে নেয়ার দৃশ্যায়ন বাস্তব মনে হয়েছে পুরো সময়েই। অথবা কাজীর সামনে জয়া'র বিয়ে হয়ে যাবার আকস্মিকতায় হঠাৎ যখন সে কেঁদে ওঠে, একটুও বাড়াবাড়ি লাগে নি।
নিমা রহমানকে অনেকদিন পর দেখলাম পর্দায়। আলাদা কোন আবেদন রাখতে পারেন নি তিনি।
পুলিশের চরিত্রটা ভালো লেগেছে, আগের ও এখনকার পার্থক্য বুঝাতে মানানসই মেকআপ খুবই ভালো হয়েছে।

শুরুতে প্রফেসরের চরিত্রটা দরকারী মনে হয় নি। যদিও খুব বেশি সময় সেটা পর্দায় ছিলো না, তবে ওনার অভিনয়ে অনেকটা আড়ষ্টতা ছিলো। নাটকের শুরুটা অন্যরকম হলেও ভালো হতো বলে মনে হয়েছে বেশ কয়েকবার। একটা বাস্তবগল্পের উপরে বানানো হয়েছে কাহিনি, শুরুতেই বলা হয়েছে সেটা, তাই ভেবে নিয়েছি হয়তো সেই গল্পের সাথে মিল রেখেই এরকম একটা স্টার্টিং দেয়া হয়েছে নাটকে। কিন্তু তবু মনে হলো, নাটকের খাতিরে গল্পের খানিকটা পরিবর্তন করা তো যেতেই পারে, না কি?

নাটকের পেছনের শব্দ ( যেটাকে আবহ সঙ্গীত বলে বোধহয়) নিয়ে মিশ্র অনুভুতি হলো। কিছু জায়গায় খুব ভালো লেগেছে, আবার কিছু জায়গায় লাগে নি। মিলন যখন বাজারের ভেতরে ঢুকতে থাকে, তখন পেছনে বাজে পুরনো হিন্দি গান, এটা বেশ জমেছে। এবং এই সময়টায় ক্যামেরার কাজও বেশ মুগ্ধ হয়ে দেখলাম। এবং আর কিছু দৃশ্যে চারপাশের শব্দের প্রতি খুব মনযোগ দেয়া হয়েছিলো, এটা টের পাওয়া গেছে বেশ। কিন্তু শুরুর দৃশ্যে সংলাপহীন একটানা মিউজিক একটা সময়ে ক্লান্তিকর লেগেছে, যেটা আরেকটু ছোট হলেও পারতো। একই ব্যাপার ঘটেছে আরও কিছু দৃশ্যের সুরে।
চমৎকার গানের অংশ রয়েছে নাটকে। খুবই দারুন। এবং জয়াকে নিয়ে ' ঘরের রানী' গানটা চোখে আরাম দিয়েছে বেশ, শুনতেও ভালো লেগেছে। তবে একটা আপত্তি রয়েছে এখানে, কেমন করে যেন গানটা নাটকের বাইরে থেকে হুট করে জায়গা করে নিয়েছে বলে মনে হলো। অপ্রাসঙ্গিক বা সামঞ্জস্য নেই- এইরকম রূঢ় কোন অর্থ বুঝাতে চাইছি না, অর্থাৎ এইখানে এরকম একটা গানের খুব দরকার ছিলো, তবে হয়তো ঠিক এই গানটাই নয়, এরকম করেই নয়।

ছোট ছোট কিছু দৃশ্য মাথায় গেঁথে থাকবে মনে হচ্ছে অনেকদিন। খালিপায়ে এসে থেমে গিয়ে জয়ার পায়ে স্যান্ডেল পরার দৃশ্য, অথবা জয়া ও বাবুর ছোয়াছুয়ি খেলার দৃশ্যটা অসাধারণ বললেও কম বলা হবে। পরিচালকের উদ্দেশ্যে গুণে গুণে তিনবার তালি দেয়াই যেতে পারে এ জন্যে।

ব্লগে অলৌকিক হাসানের দেখা পেয়ে, এখানকার বাংগালী দোকানে নাটক নিতে গিয়ে একবার কামরুল হাসানের পরিচালিত নাটক আছে কি না খোঁজ করছিলাম। কিন্তু আমাদের পরিচালকের নাম দেখে নাটক দেখার সংস্কৃতি সরওয়ার ফারুকীকে দিয়ে শুরু হয়ে সেখানেই আটকে আছে, তাই নাটকের নাম না জানায় দোকানী তেমন সাহায্য করতে পারলো না, আমিও সারিবদ্ধ করে রাখা দুই শেলফ ভর্তি নাটকের ডিভিডিগুলো উল্টে পাল্টে খুঁজে দেখার কষ্ট করতে চাইলামনা।
প্রজাপতিকাল দেখার পর, বলতে দ্বিধা নেই, কামরুল হাসানের খোঁজে ওরকম তিনচারটে শেলফ খুঁজতে হলেও সম্ভবত আর পেছপা হবো না।

Popular posts from this blog

The Boy, the Mole, the Fox and the Horse | Charlie Mackesy

মধ্যাহ্নভোজ | উইলিয়াম সমারসেট মম্‌ | রূপান্তরঃ তারেক নূরুল হাসান

আরেকটিবার-