নানা 'বর্ণে'র গালি

আমার এক বন্ধুর মামাত ভাই, বয়েস বেশি নয়। দেড় কি দুই। মাত্রই টুবলুশ গাল ফুলিয়ে টুকুস টাকুস করে কথা বলা শিখেছে। সবাই আনন্দে আত্মহারা। এরই মধ্যে কোন এক দৈব দুর্বিপাকে সে একটা 'গালি' শিখে ফেললো, 'কুত্তার বাচ্চা'! খেতে চাইছে না, জোর করা হচ্ছে, ব্যস দিয়ে ফেললো গালি।
বাড়িতে মেহমান এসেছে, কোলে নিতে চাইছে, ভাইজানের হয়ত মুড ভাল নেই। খানিক জোরাজুরির পরে অবধারিতভাবে বলে বসলো, "এই কুত্তাল বাত্তা, ছাল আমালে ছাল!'
বিরাট মুশকিল। তবে সমাধান বের হলো। তাকে আদর করে শিখিয়ে দেয়া হলো, এটা খুবই খারাপ কথা, এরকম বললে লোকে আদর করবে না।
তো সেই আদরে কাজ হলো, সেই পুঁচকা ভাইজান এখন কারও উপর রেগে গেলে চোখ মুখ বড় বড় করে বলে, " এই কুকুলেল বাবুটা, যা এখান থেকে, যা!'

*
খেলার মাঠে হরভজন 'বর্ণবাদী' গাল দিয়ে বসেছে সাইমন্ডসকে। বলেছে নাকি 'বানর'। এই গাল শুনতে হয়েছে সাইমন্ডসকে সর্বশেষ ভারত সফরেও। হরভজন বলেছে সে নাকি বানর বলে নি। ভারতীয় প্রতিনিধিরা ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, যদি ডেকেও থাকে, বানর শব্দটা উপমহাদেশে খুব খারাপ গালি নয়, বরং আদর করেই ডাকা হয় এটা।
দুই পড়েই আমার হাসি পেলো। এক, গাল দিয়েছে বলে অভিযোগ করলেন একজন অস্ট্রেলিয়ান! খেলার মাঠে স্লেজিং এর জন্যে যাদের খ্যাতি সীমা স্কাই-হাই। আর দুই, বানর আদরের ডাকই হোক কি বাঁদরের, ইন্নামাল আমালু বিন নিয়াত, বানর ডাকার উদ্দেশ্য মোটেও নির্দোষ হতে পারে না।
এই নিয়ে পত্রিকার পাতা খুব গরম ছিলো কদিন। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট গ্রেটরা পক্ষে বিপক্ষে অনেক তর্ক মাতালেন। এই চান্সে আমরা জেনে গেলাম, ভদ্রলোকের খেলা ক্রিকেট আসলে পুরোপুরি ভদ্রভাবে খেলা হয় না। এর মাঝে নানারকম মিক্সচার আছে।
মজা আরো আছে। ভারত শিবির থেকে তারপরে অভিযোগ করা হলো, ব্র্যাড হগ কাকে যেন বলেছেন 'বেজন্মা' (বাস্টার্ড)। ভারত বসে থাকবে কেন? আইসিসিকে জানানো হলো এ কথা। এই নিয়ে অজি-রা বিস্মিত! মানে, বেজন্মা শুনে আবার কেউ অভিযোগ করে নাকি! এটা কোন গাল হলো?
হুম, তার মানে বেজন্মায় আপত্তি নেই, কিন্তু বানরে আছে!

পরিস্থিতি যখন গনগনে কড়াই, হরভজন তখন জানালেন, তিনি মাংকি বলেন নি। তবে কাছাকাছি উচ্চারণের একটা পাঞ্জাবী গালি দিয়েছেন। কি সেটা? 'মা কি ......' , ইংরেজিতে যেটা হলো, " মাদার...... র' ।
তো অজিরা এইবারে খানিকটা শান্ত। ও, আচ্ছা, মাদা......র বলেছে, মাংকি তো বলে নি! এ আর এমন কি! চলো ভাই, আমরা আবার হাত মেলাই।

শুনেছি ভারত তার সফর শেষ করবে। কুম্বলে হগের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নিয়েছেন। পন্টিং এর সাথে একটা নির্বিষ আলোচনা সভাও নাকি হয়ে গেছে।

তা হোক, জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক। ওম শান্তি।

*
কনফুসীয় ফুটনোটঃ
গালি দিন, মন খুলে। সমস্যা নেই। শুধু খেয়াল রাখবেন, সেগুলো যেন সুশীল গালি হয়।

Popular posts from this blog

The Boy, the Mole, the Fox and the Horse | Charlie Mackesy

মধ্যাহ্নভোজ | উইলিয়াম সমারসেট মম্‌ | রূপান্তরঃ তারেক নূরুল হাসান

আরেকটিবার-