তবু মুখোমুখি এক আশাতীত ফুল আছে-

যে জীবন দোয়েলের ফড়িঙের , মানুষের সাথে তার হয় না কো দেখা...। হবেও না কখনো, জানি, তবু ইদানীং যখন প্রতিটা সকাল থেকে প্রতিটা দুপুর বা প্রতিটা বিকালকে আলাদা করতে পারি না, প্রায় একই রকমভাবে যখন সময়েরা আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়, যাচ্ছে, দু:স্বপ্নের মত করেই হঠাৎ আবিষ্কার করি আমার জীবনটা যেন ঢেঁকিতে পাড় দেয়ার মতন বড় বেশি নিয়মিত, বড় বেশি একসুরে বাঁধা পড়ে গেছে।
জীবনানন্দের কবিতা কখনোই শুধু মুখে পড়ে নিস্তার পাই নি, সে কবিতার আবেশ এরকমই তীব্র ছিলো যে বইয়ের পাতায় ছাপানো কালো অক্ষরগুলোয় আঙুল বুলিয়ে চলতাম পড়ার সময়, যেন ছুঁতে চাইতাম শব্দগুলোকে, শব্দের প্রানস্পন্দনকে। একেকটা দিন ছিলো, যখন, শুয়েছে ভোরের রোদ ধানের উপরে মাথা পেতে, আমার প্রিয়তম এই লাইনটি ঠিক কেমন করে লেখা হলো, কোন সেই তীব্র পার্থিব চোখ নিয়ে তাকিয়েছিলেন কবি যে এরকম একটি লাইন তার মাথায় চলে এলো- এই সব ভাবনা ভাবতে ভাবতে সারাটাদিন কাটিয়ে দিতে পারতাম, লিখে ফেলতে পারতাম হয়তো হাজার দশেক শব্দের চেয়েও দীর্ঘ কোন প্রবন্ধ।
সেইসব দিন গুলোকে আজকাল অনেক দূরের দেশ বলে মনে হয়। আয়নায় না তাকিয়েই ভয় পাই, সেখান থেকে যদি অন্য আমি বলে ওঠে, বুড়ো হয়ে গেছ তুমি বুড়ি পৃথিবীর মত! শিউরে উঠে ভাবি যদি আমাকেই উপহাস করে লক্ষীপ্যাঁচা বলে ওঠে, আজও চমৎকার!
বিশাল সৌরজগতে সূর্যের বিশালত্বের চেয়েও বরং তার একাকীত্বকে আমার বেশি করুণা হয়। দোয়েল অথবা শালিকের জীবনের সাথে কেন আমার দেখা হবে না, এরকম একটা তীব্র রাগে আমি একের পর এক পাতা উলটে চলি, আমরা যাইনি মরে আজও কেবলি দৃশ্যের জন্ম হয়, মহীনের ঘোড়াগুলো ঘাস খায় কার্তিকের জোছনার প্রান্তরে।
ফেলে আসা, প্রায় অবহেলায় ঠেলে দেয়া অনেক আগের সেই আমি হয়ে উঠতে আবার ইচ্ছে করে আমার। বুড়ি চাঁদেরা প্রতিদিন বেনো জলে ভেসে যায়, আমিও আমাকে কেবলই খুঁজে চলি।
কোথাও রয়েছ, জানি, তোমারে তবুও আমি ফেলেছি হারায়ে!

Popular posts from this blog

The Boy, the Mole, the Fox and the Horse | Charlie Mackesy

মধ্যাহ্নভোজ | উইলিয়াম সমারসেট মম্‌ | রূপান্তরঃ তারেক নূরুল হাসান

আরেকটিবার-