কষ্টে আছি ইয়াজুদ্দিন-

১।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়া আমার ব্যক্তিগত ধারণা ছিল- প্রজাতিতে এনারা বেশ নীরিহ হন, করেন না কো ফোঁসফাঁস, মারেন নাকো ঢুসঢাস।
ইশকুলে থাকতে বিএড টিচার বলে একটা ব্যাপার ছিল। বৎসরের কোন একটা সময়ে এরা হাজির হতেন। কোন এক সুন্দর সকালে আমরা বাংলা ক্লাসে গিয়ে দেখতাম, আজ রবি ঠাকুরের কবিতা পড়া হবে, সেজন্যে বোর্ডে লাল চক দিয়ে কবিতার নাম, আর নীল চক দিয়ে লেখা হয়েছে কবির নাম। তারচেয়ে মজার কথা বোর্ডের এক কোনায় ক্যালেন্ডার থেকে কেটে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে রবিদাদুর ছবি। দাদাঠাকুর সেই ছবি থেকে দাড়ির ফাঁক দিয়ে অদৃশ্য হাসি হাসতেন, আর আমরা ক্লাশের সবাই যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচতাম।
ঐ স্যাররা হতেন ভয়াবহ ক্যাটাগরির অমায়িক মানুষ। ক্লাশে যতই চিল্লাপাল্লা করতাম, কখনৈ ওনারা ধমকটা পর্যন্ত দিতেন না। বাসায় বেড়াতে আসা নতুন মামীর মতন অভিমানী গলায় বলতেন, প্লিজ, তোমরা দুষ্টামি কোরো না।

২।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার শুনলেই আমার কেন জানি বিএড টিচারদের কথা মনে হোত। তিনমাসের জন্যে এসে এনারা দেশটাকে সুন্দর ভাবে চালাবেন, শান্তিপূর্ণ ভাবে, এমনটাই ভাবতাম।
কিন্তু এ বছর দেখি ঘটনা অন্যরকম।
গত একমাসে সবকিছু কেমন ভোজবাজির মত লাগছে। 'কি হইতে কি হইলো, হঠাৎ দেখি- ' আমাদের প্রেসিডেন্ট ইয়াজুদ্দিন নিজেই হয়ে গেলেন প্রধান উপদেষ্টা! তারপরে নানা কান্ড। অন্য উপদেষ্টারা যখন নানা প্যাকেজ নিয়া হাজির হন, আমরাও আশ্বস্ত হই, কিন্তু পরবর্তিতে পত্রিকায় দেখি, ইয়াজুদ্দিন নাকি অনীহা প্রকাশ করেছেন। তার এই অনীহার কোন কারণ খুঁজে পাই না।
গতকাল রাতে ইয়াজ সাহেব তৃতীয়বারের মত জাতির উদ্দেশ্যে ওয়াজ করিলেন। সেই ওয়াজ শুনে আমি বুঝিতে পারিলাম, তিনি বড়ই কষ্টে আছেন। সম্ভবত বিয়েনপি প্রধানের বক্তৃতাটা ভুল করে তার ফাইলে চলে এসেছে, তিনিও চোখ অর্ধে ক বোজা অবস্খায় সেটাই পাঠ করলেন। এবং আমার মত বোকাদের কাছেও এতদিনকার ভোজবাজিগুলার কারণ স্পষ্ট হয়ে গেল!

৩।
ইদানীং আমার শুধু-শুধুই রাগ লাগে।
কেন ১৪ দল খালি অবরোধ দ্যায় সে জন্যে রাগ হয়। সারা দেশের জনগণ মুহিনকে না দিয়ে কেন যে শুধু সালমাকেই সব ভোট দেয় আমি সেটারও কোন কারণ খুঁজে পাই না। এই ভয়াবহ বাংলা উচ্চারণ নিয়েই এই মেয়েটাই যে ক্লোজআপওয়ান হয়ে যাবে, এটা বুঝে ফেলার পর থেকে এই প্রোগ্রামটার প্রতি আমার আর কোন আকর্ষণই নেই।
স ম জাকারিয়া কেন ছুটিতে যাবেন না সেটা ভেবেও রাগ লাগে, আবার তাকে কেন যেতেই হবে সেটা ভেবেও রাগ লাগে। এতজন জ্ঞানীগুণী উপদেষ্টারাও আসলে কতটা অসহায়, সেটা ভেবে অস্খির লাগছে।
আজ সকালে উঠে ইন্ডিয়ান ইটিভি বাংলার নিউজে দেখলাম বলা হয়েছে- বাংলাদেশে সেনা অভ্যুথান! মোতায়েন এবং অভ্যুথান শব্দ দুটোর অর্থগত পার্থক্য এরা কবে বুঝবে? এ দেশের মিডিয়াগুলো এটার প্রতিবাদ করবে? জানি না।
এইসব রাগ আর অস্খিরতা প্রকাশের জায়গা পাচ্ছি না, তাই শেষমেষ ব্লগে এসে লিখে যাচ্ছি, কষ্টে আছি, জনাব ইয়াজুদ্দিন, বড়ই কষ্টে আছি।

Popular posts from this blog

The Boy, the Mole, the Fox and the Horse | Charlie Mackesy

মধ্যাহ্নভোজ | উইলিয়াম সমারসেট মম্‌ | রূপান্তরঃ তারেক নূরুল হাসান

আরেকটিবার-