কঙ্কাবতী আখ্যান অথবা আমি ইহাকে যেমন করিয়া পাইলাম-


তোমার কথা শুনতে ভালো লাগে, বন্ধুরা বলে,
শোনায় তোমার কথা আমায় প্রায়।
তাই শুনলাম তোমার কথা গান শোনার ছলে,
শুনলাম- তোমাকে তাই।

অনেক কথা কত কথা কথকতার সুরে-
ভরে গেলো ভেতরটা আমার-
ইচ্ছে হলো বলতে কথা সুরের তালে তালে...
আমার ইচ্ছে হলো বাজাতে গীটার...।
মন আমার, মন আমার, মন আমার।

...... ভার্সিটিতে ভর্তির ছয় মাস পরে ক্লাস করতে গেছি। গিয়ে দেখি কাউকেই চিনি না। মহা সমস্যা। মুখ গোমড়া করে বসে আছি- কী যে করবো ভেবে পাই না কিছুই। হঠাত দেখি সজীব। বহুদিন আগে একবার কথা হয়েছিলো। ওর সঙ্গেই ঘুরলাম খানিক্ষণ, চিনলাম রুমাকে। আমি প্রাকটিক্যাল গ্রুপ-ট্রুপ কিছুই জানি না। অবশেষে জানলাম- গ্রুপ-সি।
প্রাকটিক্যাল ক্লাসে গিয়ে নাম এনট্রি করাতে খবর হয়ে গেলো। নওরীন ম্যাডামের কাছে জবাবদিহি করতে করতে জান শেষ। এতদিন কোথায় ছিলাম , ( আহা, যেনবা বনলতা! ), কেন আসিনি! বললাম হাবিজাবি অনেক কিছু। উনাকে তো আর বলা যায় না যে প্লান করেছিলাম এক বছর ঘুম দিবো শুধু- কিছুই করবো না!
শেষ পর্যন্ত মোটামুটি ঝামেলা শেষ হলো। কিন্তু আমার ব্যাচমেটদের কারো কোন খবর নেই। পরপর দু’ক্লাশ কেটে গেলো ্লাইড ক্যালিপার্স আর স্ক্রুগজ নিয়ে গুতোগুতি করতে করতে।
বুঝলাম এভাবে চলবে না। সজীব আর রুমা বুদ্ধি দিলো- কোন একটা ব্যাচের সাথে মিলে শুরু করে দিতে। তা-ই ভালো মনে হলো।
ছেলেমেয়ের আলাদা গ্রুপ ওখানে। তাই গেলাম একটা ছেলেদের গ্রুপে, বললাম, কিন্তু ওদের চারজন পুরো হয়ে গেছে। আরেকটা গ্রুপে গিয়ে দেখি ওখানেও কোন কোটা খালি নেই। কি যে করি! আমার বিভ্রান্ত চেহারা দেখে ভাস্করের ভীষন মায়া হলো। বললো,“ তুমি এক কাজ করো, ঐ যে মেয়েটাকে দেখছো- ওর পার্টনার অসুস্থ তিনদিন ধরে, তুমি বরং ওকে গিয়ে বলো।’
আমি তাকালাম। হ্যা, সত্যিই। আমিও গত দু’দিন দেখেছি ভীষন মিষ্টি ঐ মেয়েটা একা একা খুব গম্ভির মুডে
প্রাকটিক্যাল করছে। কারো সঙ্গে কোন কথা নেই- শুধু মাঝে মাঝে নওরীণ ম্যাডামকে গিয়ে কি জানি জিজ্ঞেস করে আসছে।
এত গম্ভির একটা মেয়েকে গিয়ে কিছু বলবো- কেন জানি সাহসে কুলালো না। আমি ছেলেটার দিকে তাকাতেই সে একটা হাসি দিলো, যার অর্থ মোটামুটি এরকম, “ তুমি যাও, ভয়ের কিছু নেই।’

আমি গেলাম। বললাম। মেয়েটা রাজী হলো। খুব মনোযোগ দিয়ে
প্রাকটিক্যাল করা শুরু করলাম। অজানা রোধ নির্ণয় করতে হবে। আমি জকি নাড়াচ্ছি তারের এ মাথা থেকে ও মাথায়, ও রিডিং নিচ্ছে। মিটারের কাটা শূন্যতে আনতে হবে। ও “ডানে, আরেকটু ডানে, না না, বামে , আবার ডানে’..... এরকম বলছে.., আমি জকি সেট করছি .....। হঠাত কি হলো, মেয়েটা খিলখিল করে হেসে দিলো। আমি তো অবাক! “ কি হলো? ’’
ও হেসে বললো, “ ধুত্তোরি, মনে হচ্ছে তুমি যেন রিকশাওয়ালা, আর আমি তোমাকে ডানে-বামে ডিরেকশান দিচ্ছি!!’’

এ-ই হলো কংকাবতী। আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। এই অসাধারন মানুষটাকে আমি এমন করিয়াই পাইলাম।


Popular posts from this blog

The Boy, the Mole, the Fox and the Horse | Charlie Mackesy

মধ্যাহ্নভোজ | উইলিয়াম সমারসেট মম্‌ | রূপান্তরঃ তারেক নূরুল হাসান

আরেকটিবার-