জেসমিন মানে কি জুঁই?


ছোটবেলায় কেউ যখন বাবার নাম জিজ্ঞেস করত, উত্তরে পুরো নাম বলতাম। কিন্তু যখন জিজ্ঞেস করত, আম্মুর নাম কি? খুব সিরিয়াস মুখ করে বলতাম,আম্মুর নাম হচ্ছে আম্মু।
এটাই তখন নিয়ম ছিল, বাসা থেকে শিখিয়ে দেয়া হয়েছিল, কখনো আম্মুর নাম বলবে না। আম্মুর নাম বলতে হবে আম্মু।
কাল অনেকদিন পরে সেই কথা মনে পড়ে গেল।

বিকেলে বের হয়েছি, আমি আর আমার হাউসমেট, বাসা থেকে খানিকটা সামনে এগুতেই দেখি পিচ্চি একটা মেয়ে, দুই বা আড়াই হবে বয়েস, দু রাস্তার মাঝখানের আইল্যান্ডে দাঁড়িয়ে ব্যাকুল হয়ে কাঁদছে!
ওখানে কারো দাঁড়িয়ে থাকার কথা না। পাশ দিয়ে ৮০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি ছুটে যাচ্ছে। তারচেয়ে বড় কথা মেয়েটার আশপাশে কেউ নেই, এমনকি যতদূর দেখা যাচ্ছে, অভিভাবক টাইপের কাউকেই দেখছি না।
অগত্যা গাড়ি থামালাম। সন্দেহ হলো, সম্ভবত হারিয়ে গেছে।
কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই এই মহা কিউট মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতেই চোস্ত অজি উচ্চারণে বললো, আম্মুর কাছে যাব! বুঝলাম যা সন্দেহ করেছি তাই। হারিয়ে গেছে যেমন করেই হোক।
বললাম, আম্মু কোথায়, রাস্তার এক দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে দিল। ওখানে কেউ নেই। বাবা কোথায় জিজ্ঞেস করতেই আবারো সেই একই দিকে আঙ্গুল। তারপর জিজ্ঞেস করলাম, বাসা কোথায় তোমাদের? আবারো আঙ্গুল সেই দিকে, আমি মনে মনে বলি, গেছি!
খানিক্ষন অপেক্ষা করব সিদ্ধান্ত নিলাম, কেউ যদি আসে খোঁজে। এর ফাঁকে টুকিটাকি কথা হলো, ততক্ষনে কান্না থেমেছে, নাম জিজ্ঞেস করতেই মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, জাসমিন। কঠিন মজা পেলাম। বারবার মায়ের খোঁজ করছিলো দেখে জিজ্ঞেস করলাম তোমার আম্মুর নাম কি?
জাসমিন বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথে স্পষ্ট করে উচ্চারণ করলো, মাম্মি! এবারে হেসে ফেললাম।
বাবার নাম জিজ্ঞেস করলে কি উত্তর পাব বুঝে গেছি ততক্ষণে, তবু একটা চান্স নিলাম। উত্তরে 'ড্যাডি' শুনে আর কিছু বললাম না।
কি আর করা, ইমার্জেন্সি নাম্বারে ডায়াল করলাম মোবাইল থেকেই। জিরো জিরো জিরো। কথা বললাম পুলিশের সাথে। ওরা বললো আসছে এখুনি।
খানিকটা পিছিয়ে বাসার সামনে গিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। আর ভাবছিলাম, বাংলা সিনেমাই ভাল, ছোট থাকতেই নায়ক নায়িকাকে একটা ফ্যামিলি সং শিখিয়ে দেয়া হয়, হারিয়ে গেলে পরে সেই গান গাইতে গাইতে বাবা-মাকে খুঁজে পায় তারা!
মিনিট পনের বাদে দেখি, রাস্তার অন্যপাশে এক ভদ্রলোক কোলে আরেকটা পিচ্চি নিয়ে বিমর্ষ মুখ করে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে, কি মনে হতেই কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কি কাউকে খুঁজছো?
ওর বাচ্চাকে খুঁজছে শুনে নিয়ে এলাম সাথে করে।
পিতা-কন্যার মিলন হলো। ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে মনে মনে আমি কোন একটা বাংলা ছবির গান গেয়ে নিলাম।

ঘটনা হচ্ছে, পিচ্চির মা বের হয়েছে কোন একটা কাজে। বের হতে না হতেই এই পিচ্চি চেয়ারের উপর দাঁড়িয়ে দরজার লক খুলে দৌড়ে বের হয়ে এসেছে রাস্তায়।

খানিক পর পুলিশ মামুরাও এলো। কিছুক্ষণ থ্যাংকস আর নো ওয়ারিজ মাইট -এর পালা চললো। জাসমিনের বাবাকে কঠিন গলায় বলা হলো, দরজায় যেন ডেডলক লাগানো হয়। তারপর বিদায় নিয়ে যার যার রাস্তায় আমরা।

বেশ অনেকক্ষণ ধরে মজা লাগছিলো আপন মনেই! একদম বৈশিষ্ঠ্যহীন একটা দিন কাটাচ্ছিলাম, দিনটা সুন্দর হয়ে গেল।


ছবির পিচ্চিটাই জাসমিন। আমার হাউসমেটের তোলা ছবি, ফোনের ক্যামেরা দিয়ে।

Popular posts from this blog

The Boy, the Mole, the Fox and the Horse | Charlie Mackesy

মধ্যাহ্নভোজ | উইলিয়াম সমারসেট মম্‌ | রূপান্তরঃ তারেক নূরুল হাসান

আরেকটিবার-